Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

৫৫-য় জোর করে বিদায় শুরু রেলে

কর্মীদের আশঙ্কা সত্যি করে এ ভাবেই পঞ্চান্ন বছর বয়সে অবসর নিতে বাধ্য করানোর সিদ্ধান্ত রূপায়ণ করল রেল।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

ফিরোজ ইসলাম
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৯ ০১:৩৩
Share: Save:

স্বেচ্ছাবসরের আবেদন করেছিলেন তিনি। কিন্তু পশ্চিম রেলে কেরলের মঞ্জেশ্বর স্টেশনের সুপার আর কে উন্নিকৃষ্ণনকে একেবারে অবসর নেওয়ার নির্দেশ দিলেন পালঘাটের ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার। কর্মীদের আশঙ্কা সত্যি করে এ ভাবেই পঞ্চান্ন বছর বয়সে অবসর নিতে বাধ্য করানোর সিদ্ধান্ত রূপায়ণ করল রেল।

উন্নিকৃষ্ণনের অপরাধটা কী? সরাসরি জবাব মিলছে না। তবে রেলের দাবি, কর্মীদের কাজের মূল্যায়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজারের নেতৃত্বাধীন কমিটির সুপারিশ মেনে ‘জনস্বার্থে’ উন্নিকৃষ্ণনকে অবসর নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার ওই নির্দেশের কথা প্রকাশ্যে আসার পরে পশ্চিম রেলে বিভিন্ন স্টেশনের ম্যানেজারেরা কালো ব্যাজ পরে সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানান। রেল সূত্রের খবর, মঞ্জেশ্বরের স্টেশন সুপার উন্নিকৃষ্ণন গত ২৯ জুলাই ৫৫ বছরে পা দেন। তার দু’দিনের মধ্যে, ৩১ জুলাই তিনি স্বেচ্ছাবসরের আবেদন জানান। কিন্তু সেই আবেদনে কান না-দিয়ে রেলের পক্ষ থেকে তাঁকে অবসর নিতে বাধ্য করানোর নির্দেশ জারি হয়েছে। তার পরে দেশে কাজ হারানোর আশঙ্কা তীব্রতর হয়েছে রেলকর্মীদের মধ্যে। প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ কর্মী কাজ হারানোর আশঙ্কা করছেন বলে জানায় রেলের বিভিন্ন শ্রমিক ইউনিয়ন।

কর্মীরা কে কখন কাজে যোগ দিচ্ছেন, কত ক্ষণ কাজ করছেন, কী ভাবে কতটা দায়িত্ব নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছেন— রেল আইনের বিশেষ ধারায় সব কিছুই খতিয়ে দেখার কাজ শুরু হয়েছে। কোনও কর্মীর রেলে একটানা ৩০ বছর কাজ করা হয়ে গেলে বা ৫৫ বছর বয়স হয়ে গেলেই তিনি ওই মূল্যায়নের আওতায় চলে আসবেন। ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে প্রতিটি ডিভিশনকে মূল্যায়নের রিপোর্ট দিতে বলেছে রেল। কাজের ক্ষেত্রে অদক্ষতা, সততার অভাব, গাফিলতি, নিষ্ঠার অভাব-সহ বিভিন্ন অভিযোগকে এক জন কর্মীর অপসারণের কারণ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। এই সব ক্ষেত্রেই ‘জনস্বার্থে’ সংশ্লিষ্ট কর্মীকে অবসর নিতে বাধ্য করানো হচ্ছে বলে রেলের দাবি। এ ক্ষেত্রে কাউকে ‘শো-কজ়’ বা আগাম কারণ দর্শানোর কোনও নোটিসও দেওয়া হচ্ছে না।

সরকারি নির্দেশের বিরুদ্ধে কেউ চাইলে তিন সপ্তাহের মধ্যে আবেদন করতে পারেন। আবেদন করার দু’সপ্তাহের মধ্যে ওই নির্দেশ খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেবেন রেলকর্তারা।

রেলকর্তাদের একাংশের দাবি, দক্ষতা এবং কার্যকারিতাকে আরও বেশি গুরুত্ব দিতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যাঁরা নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করবেন, তাঁদের আশঙ্কার কোনও কারণ নেই। যদিও রেলকর্তাদের অন্য একটি অংশের মতে, রেলে সুরক্ষা ক্ষেত্রে তিন লক্ষ পদ খালি পড়ে রয়‌েছে। আর্থিক বোঝা ঝেড়ে ফেলতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।

ইস্টার্ন রেলেওয়ে মেনস ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সূর্যেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যথেচ্ছ বেসরকারিকরণের রাস্তা প্রশস্ত করতেই এ ভাবে কর্মী-সঙ্কোচনের নীতি নেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে জনস্বার্থের কোনও সম্পর্ক নেই। পূর্ব রেলে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে তার তীব্র বিরোধিতা করা হবে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE