Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
National News

দ্রুত এগোচ্ছে চন্দ্রভাগার উপর ৬ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, আতঙ্কে ইসলামাবাদ

হুঁশিয়ারি, হুমকি, সতর্কবার্তা— নরমে-গরমে অনেক রকম করে ভারতকে চাপে ফেলতে চাইছিল পাকিস্তান। কিন্তু সব চাপ উড়িয়ে জম্মু-কাশ্মীরে চন্দ্রভাগার উপর অন্তত ছ’টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পকে সবুজ সঙ্কেত দিয়ে দিল ভারত সরকার। পরিবেশ সংক্রান্ত যে সব ছাড়পত্র দরকার, দ্রুত সে সবের ব্যবস্থা হচ্ছে।

জম্মু-কাশ্মীরের গুরেজে আর এক জলবিদ্যুৎ প্রকল্প ভারতের— কিষণগঙ্গা। দ্রুত এগোচ্ছে কাজ। ছবি: রয়টার্স।

জম্মু-কাশ্মীরের গুরেজে আর এক জলবিদ্যুৎ প্রকল্প ভারতের— কিষণগঙ্গা। দ্রুত এগোচ্ছে কাজ। ছবি: রয়টার্স।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৭ ১৬:২৬
Share: Save:

হুঁশিয়ারি, হুমকি, সতর্কবার্তা— নরমে-গরমে অনেক রকম করে ভারতকে চাপে ফেলতে চাইছিল পাকিস্তান। কিন্তু সব চাপ উড়িয়ে জম্মু-কাশ্মীরে চন্দ্রভাগার উপর অন্তত ছ’টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পকে সবুজ সঙ্কেত দিয়ে দিল ভারত সরকার। পরিবেশ সংক্রান্ত যে সব ছাড়পত্র দরকার, দ্রুত সে সবের ব্যবস্থা হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলির কাজ শেষ করে ফেলতে তৎপর নরেন্দ্র মোদীর সরকার। সিন্ধু জল চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করছে ভারত— বলছে পাকিস্তান। আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের দাবিও জানাচ্ছে তারা। কিন্তু ইসলামাবাদের সব তৎপরতা উড়িয়ে দিল্লি দ্রুত এগোচ্ছে লক্ষ্যের দিকে।

দিল্লির লক্ষ্যটা ঠিক কী?

সরকার বলছে, জম্মু-কাশ্মীরে বিভিন্ন খরস্রোতা নদ-নদীর প্রবাহকে কাজে লাগিয়ে বিপুল জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। রোজ দেশকে যতটা বিদ্যুৎ দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে পাহাড়ি রাজ্যটির, এই মুহূর্তে তার ছ’ভাগের এক ভাগ বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় জম্মু-কাশ্মীরে। নরেন্দ্র মোদীর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সম্ভাবনার অপচয় আর হতে দেবেন না। তাই সিন্ধুর উপনদী চন্দ্রভাগার উপর ছ’টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরির কাজ অত্যন্ত দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। সওয়ালকোট, কোয়ার, পাকাল দুল, বুরসার, কিরথাই ওয়ান এবং কিরথাই টু— আপাতত চন্দ্রভাগার উপর এই ছ’টি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির পথে এগোচ্ছে ভারত। বর্তমানে জম্মু-কাশ্মীরে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ৩০০০ মেগাওয়াট। যে ছ’টি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির কাজ দ্রুত এগনোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সেগুলির কাজ শেষ হলে জম্মু-কাশ্মীরে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়াবে ৯০০০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে সওয়ালকোট জলবিদ্যুৎ প্রকল্পটিই সবচেয়ে বড় হতে চলেছে। ১৮৫৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে সেখানে।

জম্মু-কাশ্মীরের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি নিয়ে ভারতের হঠাৎ তৎপরতা দেখে চাপে পড়ে গিয়েছে পাকিস্তান। ছবি: রয়টার্স।

পাকিস্তান কী বলছে?

জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ভারতের মূল লক্ষ্য নয়, বলছে পাকিস্তান। আসলে সিন্ধু ও তার উপনদীগুলির জল আটকে পাকিস্তানকে বিপদে ফেলতে চায় ভারত, ইসলামাবাদের আশঙ্কা এই রকমই। পাকিস্তানের সেচ ব্যবস্থার ৮০ শতাংশই নির্ভর করে সিন্ধু এবং তার উপনদীগুলির প্রবাহের উপর। ওই জল আটকে গেলে পাকিস্তান চাষের কাজ সাংঘাতিক বিপর্যের মুখে পড়বে। সে দেশে জলসঙ্কটও দেখা দেবে। সে কথা মাথায় রেখেই বিশ্বব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু জলচুক্তি হয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী জম্মু-কাশ্মীর এবং পঞ্জাব হয়ে পাকিস্তানের দিকে প্রবাহিত ছ’টি নদ-নদীর তিনটির উপর পাকিস্তানের অধিকার বেশি। বাকি তিনটির উপর ভারতের অধিকার বেশি। চন্দ্রভাগা পাকিস্তানের ভাগে। তার প্রবাহের ৮০ শতাংশকেই বিনা বাধায় পাকিস্তানে ঢুকতে দেওয়ার কথা ভারতের। কিন্তু উরিতে জঙ্গি হামলার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, ‘‘রক্ত আর জল এক সঙ্গে প্রবাহিত হতে পারে না।’’ মোদীর সেই মন্তব্যের পর থেকেই যে হেতু চন্দ্রভাগার উপর জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলির কাজ দ্রুত এগোতে শুরু করেছে, সে হেতু পাকিস্তান মনে করছে, ভারতের আসল উদ্দেশ্য জল আটকে দেওয়া।

পাকিস্তান আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ চাইতে শুরু করেছে। ভারত বিরোধী জঙ্গিদের পাকিস্তান যদি তাদের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেয় তা হলে সিন্ধু জল চুক্তি পুনর্বিবেচনা করতে হবে, এমনই হুঁশিয়ারি দিয়েছিল ভারত। পাকিস্তান পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছিল, ভারতকে কোনও ভাবেই চুক্তি ভাঙতে দেবে না তারা। কিন্তু কয়েক দশক ধরে থমকে থাকা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলির কাজ গত তিন মাসে অত্যন্ত দ্রুত এগোতে শুরু করেছে। তা দেখেই চাপে পড়ে গিয়েছে পাকিস্তান। বিশ্বব্যাঙ্কের কাছে তারা বিচার চেয়েছে।

ভারতের কোনও প্রকল্পেই জল আটকে রাখা হবে না, বলছে দিল্লি। ইসলামাবাদ তবু স্বস্তিতে থাকতে পারছে না। ছবি: রয়টার্স।

ভারত কি কাজ থামিয়ে দিচ্ছে?

কোনও চাপের কাছেই আর মাথা নত করবে না ভারত, বার্তা নয়াদিল্লির। চন্দ্রভাগার উপর যে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি তৈরি হচ্ছে, সেগুলি জল আটকে রাখার মতো প্রকল্প নয় বলে ভারত জানিয়েছে। জলের স্রোতকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে, কোনও জলাধারে জল আটকে রাখা হবে না, কেন্দ্রীয় সরকার এমনই জানিয়েছে।

আরও পড়ুন: গিলগিট গিলে নেওয়ার চেষ্টা

কত দূর এগোল কাজ?

সংবাদ সংস্থা রয়টার্স ভারত সরকারের শক্তি মন্ত্রক এবং জলসম্পদ মন্ত্রকের কর্তাদের উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, গত তিন মাসে খুব দ্রুত এগোতে শুরু করেছে প্রকল্পগুলির কাজ। কোনওটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের ছাড়পত্র পেয়ে গিয়েছে। কোনওটি আরও এগিয়ে অরণ্য বিশেষজ্ঞ এবং পরিবেশ দফতরের ছাড়পত্র পেয়ে গিয়েছে। কাজ শেষ হতে কয়েক বছর লাগবে। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে সব কিছু যে ভাবে থমকে ছিল, সেই অবস্থা কেটে গিয়েছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE