বালাকোটে ভারতীয় বায়ুসেনার অভিযানের চিহ্ন দেখাচ্ছেন এক স্থানীয় বাসিন্দা। ছবি: রয়টার্স
পুলওয়ামার পর আকাশপথে জঙ্গি ঘাঁটিতে অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু এর পর কোনও জঙ্গি হানা হলে আর ছেড়ে কথা বলবে না ভারত, খোলা রয়েছে ‘সব বিকল্প’— ভারতীয় সেনার একটি সূত্র উদ্ধৃত করে এমনই দাবি করেছে একাধিক সংবাদ মাধ্যম। ওই সূত্রের আরও দাবি, আপাতত কূটনৈতিক এবং আন্তর্জাতিক মাধ্যমে পাকিস্তানের উপর সর্বোচ্চ চাপ সৃষ্টির কৌশল নিয়েছে নয়াদিল্লি। সেই চেষ্টায় ভারত অনেকটাই সফল বলেও ওই সূত্রের দাবি।
সেই বিকল্প কী কী, সে বিষয়ে অবশ্য ওই সূত্রটি স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। তবে সেনা সূত্রে খবর, পাকিস্তানের মাটিতে ঢুকে জঙ্গি হানার পর থেকে এখনও পর্যন্ত ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে বায়ুসেনার সব ক’টি ঘাঁটিকে চূড়ান্ত সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যে কোনও রকম পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকার নির্দেশ এখনও বলবৎ রয়েছে।
সমান্তরাল ভাবে চলছে পাকিস্তানে জইশের জঙ্গি ঘাঁটিতে বায়ুসেনার অভিযানের পক্ষে আন্তর্জাতিক বিশ্বকে ভারতের পক্ষে টানার কূটনৈতিক কৌশল এবং মনস্তাত্ত্বিক ‘যুদ্ধ’। ‘যুদ্ধ’, কারণ একই ভাবে পাকিস্তানও নিজেদের পক্ষে দল ভারী করতে আন্তর্জাতিক মহলের দ্বারস্থ। কিন্তু নয়াদিল্লির যুক্তি, ভারতের যুদ্ধ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নয়, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে। সেই কারণেই এটি ছিল ‘নন মিলিটারি’ বা ‘অসামরিক’ অভিযান। ভারত যে আমেরিকা, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশকে নিজেদের পক্ষে টানতে পেরেছে, তার প্রমাণ মিলেছে এই সব দেশও পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার চাপ দিয়ে বিবৃতি দেওয়ায়। একই কারণে ইরানের মতো দেশেরও পাকিস্তান-বিরোধী অবস্থান।
আরও পড়ুন: ভারতের চাপ! মাসুদ আজহারের দুই ভাই-সহ ৪৪ জঙ্গিকে গ্রেফতার করল পাকিস্তান
আরও পড়ুন: যা বলার বলা হয়ে গিয়েছে, জইশঘাঁটিতে মৃতের সংখ্যা এড়িয়ে গেলেন নির্মলা
২৭ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান যে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান নিয়ে ভারতের আকাশসীমায় ঢুকেছিল, তা ইসলামাবাদ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে। কিন্তু ভারত এমন প্রমাণ হাতে পেয়েছে যাতে পাকিস্তান অস্বীকার করলেও ঢোক গিলতে হচ্ছে। কারণ, ভারতীয় ভুখণ্ডে মিলেছে অ্যামরাম মিসাইলের ভেঙে পড়া অংশ। এই অ্যামরাম মিসাইল বহন করতে পারে একমাত্র এফ-১৬ যুদ্ধবিমান। সেই প্রমাণ আমেরিকার সঙ্গেও আদানপ্রদান করেছে ভারত। ফলে ভারতের যুক্তিতে সহমত অধিকাংশ দেশ।
ভারতের তৎপরতা বেড়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জেও। মাসুদ আজহার যে পাকিস্তানে রয়েছে, সে কথা খোদ পাক বিদেশমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশিই স্বীকার করেছেন। ফলে জইশ-ই-মহম্মদ প্রধান মাসুদ আজহারকে ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী’ হিসেবে ঘোষণা করতে পারলে পাকিস্তান প্রবল চাপে পড়বে। সেই চেষ্টা আগেও হয়েছে। যদিও পাকিস্তানের ‘মিত্র’ চিন বরাবরই তাতে ভেটো দিয়েছে। কিন্তু পুলওয়ামায় জঙ্গি হানার পর পরিস্থিতি অনেকটাই আলাদা। চিনও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আগের চেয়ে কিছুটা কঠোর অবস্থানে। এই পরিস্থিতিতেই মাসুদ আজহারকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী হিসেবে ঘোষণা করতে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দেশগুলির সঙ্গে ভারত নিরন্তর যোগাযোগ ও তথ্য আদানপ্রদান করে চলেছে বলে সূত্রের খবর।
এই কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি, ভারত যে কোনও ভাবেই আর পাক-মদতে পুষ্ট সন্ত্রাস বরদাস্ত করবে না, তা বোঝাতেই কঠোর বার্তা দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ ফের কোনও সন্ত্রাসবাদী হামলায় পাক মদতের প্রমাণ মিললে কোনও পদক্ষেপ করতেই ভারত যে আর পিছপা হবে না, সেই বার্তাও দেওয়া হচ্ছে পাকিস্তানকে। এই বিষয়টিকেই ওই সূত্র ‘সব বিকল্প’ বলে উল্লেখ করেছে বলে ব্যাখ্যা কূটনৈতিক শিবিরের।
(কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, গুজরাত থেকে মণিপুর - দেশের সব রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy