মাঝে মাঝে অ্যান্টি ন্যাশনাল হওয়া ঠিক আছে। রাষ্ট্রই আমাদের একমাত্র পরিচয় নয়, বলছেন অমর্ত্য সেন।
লোদী এস্টেটে অঁলিয়স ফ্রঁসেজের প্রেক্ষাগৃহে ভিড় উপচে পড়েছে। অর্ধেন্দু সেনের মতো প্রাক্তন আমলাও দেওয়ালে হেলান দিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে। সিঁড়িতেই হাঁটু গেড়ে বসে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, গবেষক, শিক্ষক-শিক্ষিকারা। প্রেক্ষাগৃহের বাইরেও প্রোজেক্টর লাগিয়ে অনুষ্ঠান শোনার ব্যবস্থা। সেখানেও বসার আসন নেই।
রাজধানীর রাস্তার মোড়ে মোড়ে ভারত-পাকিস্তান সংঘাত নিয়ে আলোচনা। টিভি-র পর্দায় তাপমাত্রা ঊর্ধ্বমুখী। এরই মধ্যে অমর্ত্য সেন বলছেন, ‘‘মাঝে মাঝে অ্যান্টি-ন্যাশনাল হওয়া ঠিক আছে। রাষ্ট্রই আমাদের একমাত্র পরিচিতি নয়। আমাদের নানা রকম পরিচিতি থাকে। জীবনযাত্রার জন্য সেগুলো ভীষণ ভাবে জরুরি।’’ বাইরে যখন জাতীয়তাবাদের আবেগ চুঁইয়ে পড়ছে, তখন অমর্ত্য বলছেন, জাতীয়তাবাদে বৃহত্তর কোনও মানবিক প্রচেষ্টায় যদি লাভ হয়, তা হলে সমস্যা নেই। কিন্তু যখন প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনা তুঙ্গে, তখন তার প্রেক্ষিত ভিন্ন। জাতীয়তাবাদ বিভাজন তৈরি করলে সেটা খারাপ।
শুধু ভরদুপুরের অঁলিয়াস ফ্রঁসেজ নয়। বিকেলে জওহর ভবনেও ৮৫ বছর বয়সী অর্থনীতিবিদের আলাপচারিতা শুনতে একই ভাবে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে ভিড় উঠে এল। অমর্ত্য ঢোকার আগেই প্রেক্ষাগৃহ ভরে যাওয়ায়, ভবনের চত্বরেই তিনটি জায়গায় প্রোজেক্টর চালিয়ে শ্রোতাদের বসার ব্যবস্থা করতে হল।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর সকালের ‘জোশ’ বদলাল দ্রুত
অঁলিয়স ফ্রঁসেজের অনুষ্ঠানটি ছিল, মোদী জমানায় ‘অর্থনীতির পিছনের দিকে হাঁটা’ নিয়ে বই প্রকাশের অনুষ্ঠান। সেখানে হাজির ছিলেন গোপালকৃষ্ণ গাঁধী, অধ্যাপিকা জোয়া হাসান। জওহর ভবনে ছিল নাগরিকত্ব, নব্য-জাতীয়তাবাদের জমানায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ নিয়ে আলোচনা। দিল্লিতে এই ধরনের অনুষ্ঠানে সব সময়ই কিছু পরিচিত মুখ দেখা যায়। কিন্তু মঙ্গলবার এই যুদ্ধং দেহি আবহের মধ্যে যে ভাবে তরুণ-তরুণীরা ভিড় জমালেন, তা দেখে চমৎকৃত জেএনইউ-এর অধ্যাপিকা জয়তী ঘোষ। তাঁকে সামনে পেয়ে অমর্ত্যর সরস মন্তব্য, ‘‘জেএনইউ থেকে অনেককেই পুলিশ তুলে নিয়ে যায়! মনে হয়, রাষ্ট্রদ্রোহিতা খুব সাধারণ বিষয়!’’
আরও পড়ুন: সেনার পাশে দাঁড়িয়েই দেশের শাসক দলের বিরুদ্ধে সরব হলেন রাহুলেরা
অমর্ত্য এ দিনও আয়ুষ্মান ভারত থেকে মোদী সরকারের নানা প্রকল্প এবং বিশেষ করে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচনা করেছেন। নোট বাতিলকে মজা করে ‘পি সি সরকারের ম্যাজিক’ বলে আখ্যা দিয়ে তাঁর বক্তব্য, সকলের জন্য ন্যূনতম আয়ের প্রকল্পেও
দারিদ্র সমস্যার সমাধান হবে না। কারণ সমস্যাটা টাকার অভাবের নয়, সমাজের। মোদী জমানা নিয়ে আলোচনা হবে, হিন্দুত্বের প্রশ্ন উঠবে না— তা হয় না। হয়ওনি। অমর্ত্য হিন্দুত্বর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে শুরুতেই বলেছেন, তিনি হিন্দুত্ব-বিরোধী নন। মুচকি হেসে মনে করিয়েছেন, তাঁর নামাঙ্কিত প্রথম প্রকাশিত বই ছিল ‘হিন্দুইজম’।
আরও পড়ুন: সুখোই থেকে মিগ, সব বিমান ওড়ানোয় দক্ষ অভিনন্দনের স্ত্রীও বিমানবাহিনীর প্রাক্তন স্কোয়াড্রন লিডার
দাদু ক্ষিতিমোহন সেনের লেখা অনুবাদ করে বইয়ের কাজটি শেষ করেছিলেন তিনি।
প্রশ্ন উঠেছে, মোদী জমানায় গরিষ্ঠতাবাদের ঢক্কানিনাদে সংখ্যালঘুরা নিরাপদ বোধ করছেন না। এই সেতুবন্ধন কী ভাবে হবে? অমর্ত্য কবীরের উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, সংখ্যালঘুর মত সুন্দর ভাবে বোঝাতে পারলে তা সংখ্যাগুরুরও মত হয়ে উঠতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy