India is Facing Worst Locust Swarm’s Attack in 27 Years dgtl
locust
দৈনিক নিজের ওজনের সমান খাবার খাওয়া পঙ্গপাল আতঙ্ক ছড়িয়েছিল প্রাচীন মিশরেও!
পঙ্গপালের আক্রমণের পরেই সে জায়গায় প্লেগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে অতীতে। আবার অন্যদিকে, পঙ্গপালকেও মানুষ নিজের খাদ্য বানিয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশেই পঙ্গপাল লোভনীয় খাবার।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০২০ ১৩:৫৬
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৫
" …এবার পঙ্গপাল এসে বড়ো ক্ষতি করেছে। ক্ষিতিবাবুর ক্ষেতে একটি ঘাস নেই। অক্ষয়বাবুর বাগানে কপির পাতাগুলো খেয়ে সাঙ্গ ক’রে দিয়েছে। পঙ্গপাল না তাড়াতে পারলে এবার কাজে ভঙ্গ দিতে হবে। ঈশানবাবু ইঙ্গিতে বলেছেন, তিনি কিছু দান করবেন।" সাদাকালোয় জীবনেরই সহজপাঠ লিখে গিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। সেই পঙ্গপাল বাহিনী এ বার হানা দিয়েছে অতিমারি ও ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত দেশে।
০২১৫
কোনও মড়ক বা দুর্ভিক্ষের সঙ্গে পঙ্গপালের গভীর সম্পর্ক। ইতিহাসের সেই ধারা আজও বহমান। করোনা-অতিমারির পরে দেশে এ বার পঙ্গপাল বাহিনীর হানা। কিন্তু এই পঙ্গপাল আসলে ঠিক কী ধরনের পতঙ্গ ? যারা আকাশ অন্ধকার করে ধেয়ে এসে শেষ করে খেতের পরে খেতের ফসল।
০৩১৫
পঙ্গপাল কোনও নির্দিষ্ট পতঙ্গ নয়। বরং, বহু ধরনের কীট একসঙ্গে দল বেঁধে ঝাঁকে ঝাঁকে আক্রমণ করে। জীবজন্তুদের এই প্রবণতাকে বলে ‘গ্রেগারিয়াস’। এই প্রবণতায় বিচ্ছিন্ন থাকা বিভিন্ন ধরনের পতঙ্গ জোটবদ্ধ হয়। সাধারণত খাবারের আকাল দেখা দিলে প্রাণীজগতে এই প্রবণতা দেখা দেয়।
০৪১৫
এই ধারা মেনেই দল বাঁধে নানা রকমের ফড়িং। তারপর ঝাঁক বেঁধে আক্রমণ করে ফসলের জমিতে। এই ঝাঁককেই বলা হয় পঙ্গপাল। তারা পরিযায়ী। পরিযাণের দীর্ঘ দূরত্ব পাড়ি দেওয়ার সময় পথে যেটুকু ফসল পায়, সব খেয়ে ফেলে। প্রত্যেক পতঙ্গ দৈনিক নিজের ওজনের সমান খাবার খায়। ফলে একটি ঝাঁকের একাংশ এক দিনে যা খায়, তা ১০ টি হাতির খাবারের সমান!
০৫১৫
পঙ্গপালকে ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘লোকস্ট’ এসেছে লাতিন শব্দ ‘লোকস্টা’ থেকে। যার অর্থ ফড়িং।
০৬১৫
প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার সমাধি থেকে প্রায় সব ধর্মগ্রন্থে পঙ্গপালের উল্লেখ আছে। পঙ্গপালের আক্রমণের জেরে বহু দেশে মানুষ তার বসতি পাল্টাতে বাধ্য হয়েছে। নিজেদের মতো মানুষকেও পরিযায়ী করেছে পঙ্গপাল বাহিনী।
০৭১৫
পঙ্গপালের আক্রমণের পরেই সে জায়গায় প্লেগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে অতীতে। আবার অন্যদিকে, পঙ্গপালকেও মানুষ নিজের খাদ্য বানিয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশেই পঙ্গপাল লোভনীয় খাবার।
০৮১৫
২৪৭০ থেকে ২২২০ খ্রিস্টপূর্ব সময়ে মিশরীয়রা তাদের সমাধিতে পঙ্গপালের ছবি আঁকত। প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ এবং ইলিয়ডে পঙ্গপালের উল্লেখ আছে। পঙ্গপালের আক্রমণের পরে সেই স্থানের অবস্থা শোচনীয় হত বলে বর্ণনা করা হয়েছে সব বিবরণে।
০৯১৫
গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল এবং রোমান ঐতিহাসিক টাইটাস লিভিয়াস গবেষণা করেছিলেন পঙ্গপালের আচরণের উপর।
১০১৫
বিশ শতকের গোড়া থেকে অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত হয় পঙ্গপালের প্রাদুর্ভাব। সে সময়ে বেশ কিছু উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করা হতে থাকে ঝাঁকবদ্ধ এই পতঙ্গদের।
১১১৫
জমিতে কীটনাশক ছড়িয়ে, যন্ত্রের সাহায্যে, আগুনের হলকা ছুড়ে, জলাশয়ে ফাঁদ পেতে ধরা হয়েছে পঙ্গপালদের। ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে এর প্রকোপ কমেছে। কিন্তু কম হলেও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি এর আক্রমণ।
১২১৫
বর্তমানে রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত, পঞ্জাব, মধ্যপ্রদেশ-সহ ভারতের বেশ কিছু রাজ্যে হানা দিয়েছে পঙ্গপাল বাহিনী। কৃষিবিজ্ঞানীদের ধারণা, দ্রুত নিয়ন্ত্রণ না করলে পঙ্গপাল বাহিনীর আক্রমণে মধ্যপ্রদেশে শুধু মুগ ডাল-ই নষ্ট হবে অন্তত ৮ হাজার কোটি টাকার। ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে তুলো ও লঙ্কাচাষ। গত ২৭ বছরে এত ভয়াবহ পঙ্গপাল বাহিনীর আক্রমণের মুখে পড়েনি দেশ।
১৩১৫
পঙ্গপালের মধ্যেও বিভিন্নরকম প্রজাতি আছে। তাদের মধ্যে সবথেকে বেশি ক্ষতি করে ‘ডেজার্ট লোকস্ট’। সেই প্রজাতি-ই আফ্রিকা মহাদেশের পূর্ব অংশে ‘হর্ন অব আফ্রিকা’ উপসাগরীয় অঞ্চল থেকে পাড়ি দিয়ে ইরান, পাকিস্তান হয়ে ঢুকছে ভারতে।
১৪১৫
এই রাজ্যগুলির কৃষকদের সতর্ক করা হয়েছে। পঙ্গপালের আক্রমণে আবার অশনি সঙ্কেত দেখছেন চাষিরা। রাজস্থানের ৫০ হাজার হেক্টর জমি এখন পঙ্গপালের কবলে। মধ্যপ্রদেশের ১৬ টি এবং উত্তরপ্রদেশের ১৭ টি জেলায় হানা দিয়েছে পঙ্গপাল।
১৫১৫
পঙ্গপাল বাহিনী একদিনে ১৩০ কিমি অবধি দূরত্ব পাড়ি দিতে পারে। প্রতিটি পতঙ্গ, রোজ ২ গ্রাম অবধি ফসল খেয়ে নিতে পারে, যা তার নিজের ওজনের সমান। ১৯৯৩-এর পরে আবার এক ভয়াবহ পঙ্গপাল-আক্রমণের মুখে দেশ। যার ফলশ্রুতি দুর্ভিক্ষের অশনি সঙ্কেত গোটা দেশের সামনে।