শনিবার, ২৬ এপ্রিল এমনই এক অভিযানে একা বেরিয়ে পড়েন অ্যারন। পৌঁছে যান ব্লুজন ক্যানিয়নে। কাউকে তার পরিকল্পনা না জানিয়ে র্যালস্টন তাঁর হাইকিং বুট, একটি হাইড্রেশন সিস্টেম, ব্যাকপ্যাক, আরোহণের সরঞ্জাম এবং কিছু ছোট ছোট যন্ত্রপাতি নিয়ে তাঁর পাহাড়ে ওঠার বাইকটি তার ট্রাকের পিছনে রেখে প্রায় পাঁচ ঘন্টা গাড়ি চালিয়ে উটার এই প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে যান।
তিনি ভেবেছিলেন সরু গিরিখাতগুলি দেখে রাতের মধ্যেই ফিরতি পথ ধরবেন। রাত নামার মধ্যেই অ্যাস্পেনে ফিরে আসবেন, এমনটাই ছিল র্যালস্টনের পরিকল্পনা। কিন্তু ভাগ্য তাঁর জন্য অন্য পরিকল্পনা ছকে রেখেছিল। ক্যানিয়নের নীচের দিকে নামার পথে একটি স্লট ক্যানিয়নে ঘটে যায় মারাত্মক দুর্ঘটনা। স্লট ক্যানিয়ন হল দীর্ঘ এবং সরু পথ, যেগুলি সাধারণত বেলেপাথরের শিলা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে তৈরি হয়।
পাঁচ দিন নরকযন্ত্রণা ভোগ করার পর ১ মে অ্যারন সিদ্ধান্ত নেন, যে ভাবেই হোক চাপা পড়া হাতের অংশটি তাঁকে কেটে ফেলতে হবে। পঞ্চম দিনে খাবার ও জল শেষ হয়ে যাওয়ার পর র্যালস্টন নিজের প্রস্রাব পান করার সিদ্ধান্ত নেন। এই অবস্থায় বেলেপাথরের গিরিখাতের দেওয়ালে নিজের নাম, জন্মতারিখ এবং মৃত্যুর তারিখ খোদাই করেন অ্যারন। ভাঙা হাতে পরিবারের জন্য একটি বিদায়ী ভিডিয়োও তোলেন।
এর পর তিনি বুদ্ধি খাটিয়ে একটি বাঁকানো রবারের পাইপকে টর্নিকেট হিসাবে ব্যবহার করেন এবং তার কাছে থাকা ছোট ছোট যন্ত্রপাতি দিয়ে অবশিষ্ট তরুণাস্থি, ত্বক এবং মাংস কাটা শুরু করেন। ২ ইঞ্চির একটি ছুরি এবং শক্ত হাড়ের জন্য প্লায়ার ব্যবহার করেন। অসহ্য যন্ত্রণার এই প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ করতে তাঁর এক ঘণ্টা সময় লাগে।
নিজেকে মুক্ত করার পর র্যালস্টন যে স্লট ক্যানিয়নে আটকা পড়েছিলেন সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন। ৬৫ ফুট উঁচু দেয়াল থেকে নেমে তার পর ক্যানিয়ন থেকে বেরোতে পেরেছিলেন। তিনি তার গাড়ি থেকে প্রায় ১৩ কিমি দূরে ছিলেন এবং তাঁর কাছে কোনও ফোন ছিল না। সাড়ে ন’কিমি পাহাড় চড়ার পর ভাগ্যদেবতা সুপ্রসন্ন হয়েছিলেন অ্যারনের প্রতি।
নেদারল্যান্ডস থেকে ছুটি কাটাতে আসা একটি পরিবার তাঁর জীবনে দেবদূত হয়ে দেখা দেয়। তাঁরা ছিলেন এরিক ও মনিক মেইজার এবং তাঁদের ছেলে অ্যান্ডি। এই পরিবারের সদস্যেরা তাঁকে খাবার, জল দেন। তাঁরাই স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। উদ্ধার পেয়েও র্যালস্টন আশঙ্কা করেছিলেন যে, তিনি অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা যাবেন।
অ্যারনের পরিবার সদস্যেরা ইতিমধ্যেই তাঁর নিখোঁজের খবর পুলিশের কাছে জানিয়েছিলেন। তাঁরা নিশ্চিত ছিলেন অ্যারন কাউন্টিতে হাইকিং করতে গিয়েছেন। সন্ধানকারী দলের এক সদস্য পরে সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছিলেন, তাঁরা কাউন্টির দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে সন্ধান শুরু করেন। ভাগ্যক্রমে সেই দলটি ক্যানিয়নের ট্রেইল পথে তাঁর ট্রাকটি দেখতে পান।
বিকেল ৩টে নাগাদ দলটি তাঁকে হেলিকপ্টারে উড়িয়ে এনে হাসপাতালে ভর্তি করে। তাঁর বেঁচে থাকার প্রবল ইচ্ছাশক্তি দেখে অবাক হয়েছিলেন চিকিৎসক ও পুলিশ। কারণ হাসপাতালে আনার পর হেঁটেই অ্যারন চিকিৎসাকক্ষে ঢুকে পড়েন। অ্যারন পরে বলেছিলেন, যদি তিনি আগে নিজের হাত কেটে ফেলতেন, তা হলে রক্তক্ষরণে মারা যেতেন। আর যদি তিনি তা না করতেন তবে কয়েক দিন পরে তাঁকে স্লট ক্যানিয়নে মৃত অবস্থায় পাওয়া যেত।
অ্যারন র্যালস্টনের জন্ম ১৯৭৫ সালের ২৭ অক্টোবর ওহায়োর মেরিয়নে। তিনি এবং তাঁর পরিবার আশির দশকে ১২ বছর বয়সে ডেনভারে চলে আসেন। এখানে তিনি চেরি ক্রিক হাই স্কুলে পড়াশোনা করেন এবং স্কি শিখতে শুরু করেন। পিট্সবার্গের কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক হন তিনি। ফরাসি সাহিত্যেও তাঁর ডিগ্রি ছিল। গ্রীষ্মকালে তিনি র্যাফটিং গাইড হিসাবেও কাজ করতেন।
২০০৯ সালের অগস্টে র্যালস্টন জেসিকা ট্রাস্টিকে বিয়ে করেন। তাঁদের প্রথম সন্তানের জন্ম হয় ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে। ২০১২ সালের প্রথম দিকে তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। পর্বত তাঁর একটি অঙ্গ কেড়ে নিলেও পর্বতারোহণের নেশায় ছেদ পড়েনি অ্যারনের। এই দুর্ঘটনার পর তিনি বহু বার পাহাড়ে চড়েছেন ও বেশ কিছু কৃতিত্বের অধিকারীও হয়েছেন। বর্তমানে এক জন অনুপ্রেরণামূলক বক্তা হিসাবে তিনি সুপরিচিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy