ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই।
উত্তেজনা কমানোর উদ্দেশ্যে আলোচনা শুরু হলেও গলওয়ানে চিনা হামলার অভিযোগের প্রশ্নে অনড় অবস্থানে নয়াদিল্লি। বুধবার চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-এর সঙ্গে কথাতেও সেই বার্তাই দিলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। বিদেশমন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, টেলিফোনে হওয়া কথোপকথনে জয়শঙ্কর এদিন ওয়াংকে বলেছেন, ‘‘সোমবার রাতে গলওয়ানে পরিকল্পনা মাফিক, ছক কষে হামলা চালিয়েছে চিনের সেনা। তার ফলে ২০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছেন। আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে এর গুরুতর প্রভাব পড়বে।’’ যদিও চিন বিদেশমন্ত্রকের তরফে এ দিনও গলওয়ানে সংঘর্ষের জন্য ভারতীয় সেনাকেই দোষারোপ করা হয়েছে।
তবে বিতর্কের মধ্যেই পূর্ব-লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় (এলএসি) উত্তেজনা কমানোর লক্ষ্যে সক্রিয় নয়াদিল্লি ও বেজিং। চলছে কূটনৈতিক ও সেনা স্তরে আলোচনার মাধ্যমে বোঝাপড়ায় আসার তৎপরতা। চিনের সংবাদমাধ্যমকে উদ্ধৃত করে সংবাদসংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, এ দিন নিরপেক্ষ ভাবেই দুই বিদেশমন্ত্রী পূর্ব-লাদাখের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছেন। আলোচনা এবং ঐকমত্যের ভিত্তিতে সীমান্ত সমস্যা মেটানোর বিষয়ে তাঁরা সম্মত হয়েছেন। আলোচনায় স্থির হয়েছে, গত ৬ জুন কোর কম্যান্ডার স্তরের বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উত্তেজনা প্রশমনের জন্য পদক্ষেপ করা হবে। এলএসি’তে কোনও প্ররোচনামূলক পদক্ষেপ না-করার বিষয়েও দুই বিদেশমন্ত্রী সম্মত হয়েছেন। অন্য দিকে, সোমবার রাতের ঘটনার যথাযথ তদন্ত করে সংঘর্ষে প্ররোচনা দেওয়া সেনাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া জন্য জয়শঙ্করকে প্রস্তাব দেন ওয়াং।
এ দিন দুই সেনার ডিভিশনাল কম্যান্ডার (মেজর জেনারেল) স্তরের বৈঠক সাময়িক ভাবে স্থগিত রাখা হলেও শীঘ্রই উচ্চতর পর্যায়ের আলোচনা শুরু হতে পারে বলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রের খবর। অতীতে বিদেশসচিব থাকাকালীন জয়শঙ্কর বহু বারই এলএসি’তে সঙ্ঘাত এড়াতে চিনের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসেছেন। ২০১৭ সালে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্ঠা অজিত ডোভালের ‘শক্তি প্রদর্শন’-এর নীতির জেরে ডোকলামে জটিলতা তৈরি হয়েছিল। পরে জয়শঙ্করের দৌত্যেই সমাধান সূত্র মেলে।
আরও পড়ুন: গলওয়ান থেকে শিক্ষা, চিন সীমান্তে রণকৌশল বদলাচ্ছে সেনা
শুধুমাত্র শক্তি প্রদর্শনের নীতি নিয়ে পূর্ব লাদাখের সমস্যার সমাধান যে সম্ভব নয়, মঙ্গলবারই তা স্পষ্ট করেছিলেন ভারতীয় সেনার অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল ডি এস হুডা। দীর্ঘদিন নর্দার্ন কমান্ডের (লাদাখের দায়িত্বপ্রাপ্ত ১৪ নম্বর কোর এই কমান্ডেরই নিয়ন্ত্রণাধীন) জিওসি’র দায়িত্ব পালন করা পোড় খাওয়া সেনা অফিসার বলেছিলেন, ‘‘পরিস্থিতি গুরুতর। অবিলম্বে দু’পক্ষের আলোচনার পথে হাঁটা উচিত।’’
আরও পড়ুন: ভারত শান্তি চায়, কিন্তু প্ররোচনা এলে জবাব দিতেও তৈরি: প্রধানমন্ত্রী
এদিন চিনে নিযুক্ত প্রাক্তন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত গৌতম বাম্বাওয়ালে বলেন, ‘‘গত ৩০-৪০ বছরের মধ্যে এমন গুরুতর পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। দু’পক্ষের সেনার প্রাণহানি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে দুই বাহিনী উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে মুখোমুখি মোতায়েন ছিল বলে এমনটা ঘটতে পারে। আমার মনে হয়ে ভবিষ্যতে চিনের সঙ্গে সীমান্ত সমস্যার ক্ষেত্রে এমন দীর্ঘসূত্রিতা নীতি বদলের প্রয়োজন রয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy