আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনে বিরোধী শিবির বাধা দিলে কমপক্ষে চারটি গুরুত্বপূর্ণ বিল যৌথ অধিবেশন ডেকে অনুমোদন করানোর পরিকল্পনা নিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।
বিলগুলি হল বিমা বেসরকারিকরণ বিল, জমি বিল, শ্রম সংস্কার বিল, পণ্য ও পরিষেবা বিল। নরেন্দ্র মোদী মায়ানমার সফরে যাওয়ার আগে সংসদের অধিবেশনের রণকৌশল নিয়ে সংসদীয় মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু, অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি এবং দলের সভাপতি অমিত শাহের সঙ্গে আলোচনা সেরে নিয়েছেন। লোকসভায় পাশ হয়ে যাওয়ার পর বিলগুলিকে রাজ্যসভায় পাশ করাতে হবে। রাজ্যসভায় বিজেপির প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই।
নায়ডু নিজে এই প্রতিবেদককে বলেছেন, সরকারের প্রথম পদক্ষেপ হবে বিরোধীদের বোঝানোর চেষ্টা করা। কংগ্রেস-সহ সব বিরোধী দলগুলির কাছেই সরকার আবেদন জানাবে, যাতে উন্নয়নের স্বার্থে এই বিলগুলিকে তারা সমর্থন করে। এর জন্য সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা হতে পারে। স্পিকারের মধ্যস্থতায় বিজনেস অ্যাডভাইসরির বৈঠকের মাধ্যমে আলোচনা হতে পারে।
সংসদীয় মন্ত্রী জানান, এর পরেও যদি বিরোধীরা বিলগুলিকে সমর্থন না করেন, সে ক্ষেত্রে বিজেপি প্রচার করবে যে, বিরোধীরা দেশের উন্নয়নে বাধা দিচ্ছেন। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ বলেন, “রাজ্যে রাজ্যে গিয়ে বিশেষত যে সব রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন আসন্ন, সেখানে গিয়ে মানুষকে বলব যাতে তাঁরা আরও বেশি করে ভোট দিয়ে বিজেপি বিধায়কদের সংখ্যা বাড়াতে সাহায্য করেন। যাতে অদূর ভবিষ্যতে বিজেপি রাজ্যসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে।”
তৃতীয় পদক্ষেপ হবে, বিলগুলি পাশ করানোর জন্য সংসদে যৌথ অধিবেশন ডাকা। বেঙ্কাইয়া বলেন, সংসদের প্রথা অনুযায়ী রাজ্যসভায় ভোটাভুটি না করে সরাসরি যৌথ অধিবেশন ডাকা যায় না। সে ক্ষেত্রে রাজ্যসভাকে এড়ানোর অভিযোগ উঠবে। সে জন্য সরকার প্রথমে লোকসভা এবং পরে রাজ্যসভাতেও বিলগুলি নিয়ে আসবে। পরাস্ত হলে যৌথ অধিবেশন ডেকে বিলগুলিকে পাশ করানো হবে। তার পর আবার সংসদের বাইরে গিয়ে মানুষকে বলা হবে, কেন এবং কোন পরিস্থিতিতে যৌথ অধিবেশন ডেকে বিলগুলিকে পাশ করাতে হল।
এখনও পর্যন্ত কংগ্রেসের যা রণকৌশল, তাতে তারা বিলগুলির বিরোধিতাই করবে। যদিও জমি ও বিমা বিল এক সময় কংগ্রেসই পাশ করতে চেয়েছিল। বিজেপি তখন বাধা দিয়েছিল। তার আগে বাজপেয়ী যখন ক্ষমতায় ছিলেন, তখন অরুণ জেটলি-অরুণ শৌরিরা বিল আনলে কংগ্রেস বিরোধিতা করেছে। বিরোধের সেই ঐতিহ্য সমানে চলছে। সরকার জানে শুধু কংগ্রেস নয়, তৃণমূল ও বামেরাও একযোগে বিলগুলির বিরোধিতা করবে। নৃপেন্দ্র মিশ্রকে প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি নিয়োগ সংক্রান্ত অর্ডিন্যান্স আনার সময় তৃণমূল সেটি সমর্থন করেছিল প্রশাসনিক কারণে। কিন্তু জমি বিলে তাদের সমর্থন পাওয়াটা কার্যত অসম্ভব বলেই মনে করা হচ্ছে। এরই মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লিতে আসছেন। কিন্তু সেই সময় নরেন্দ্র মোদী দিল্লিতে থাকছেন না। ফলে উভয়ের মধ্যে বৈঠকেরও কোনও সম্ভাবনাও নেই।
বিজেপি সূত্র বলছে, মোদী সরকারের রণকৌশল হল বিল পাশ করানোর জন্য মমতা-মুলায়ম-জয়া-মায়াবতী-নীতীশ সবার কাছেই আবেদন জানানো হবে। কিন্তু তার বিনিময়ে রাজ্য-রাজনীতিতে নতজানু হয়ে আপস করা চলবে না। অথচ বাজপেয়ী জমানায় সেটাই ছিল স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। যে কাজটি প্রমোদ মহাজন থেকে শুরু করে অনন্ত কুমার পর্যন্ত বরাবর করে এসেছেন। কিন্তু এ বারে মহারাষ্ট্রে ভোটের আগে বা পরে বিজেপি এই আপসের রাস্তায় হাঁটেনি। ঝাড়খন্ডেও বাবুলাল মরান্ডি তাঁর দলের সঙ্গে জোটের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তাতেও বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব রাজি হননি।
এই অবস্থায় মোদী সরকার যৌথ অধিবেশনে বিলগুলি পাশ করানো যায় কি না, তা খতিয়ে দেখছে। হিসেব অবশ্য বলছে, শিবসেনা যদি এনডিএ থেকে সমর্থন তুলে নেয়, তা হলে যৌথ অধিবেশনেও মোদী সরকারের পর্যাপ্ত সংখ্যা থাকবে না। ম্যাজিক সংখ্যার থেকে ১৭টি কম হবে। কিন্তু বিজেপি নেতারা আশা করছেন, সংসদে অধিবেশন শুরুর আগেই শিবসেনার সঙ্গে সমস্যা মিটে যেতে পারে। তা ছাড়া জয়ললিতা, নবীন পট্টনায়ক-সহ কিছু আঞ্চলিক দল বা নির্দলদের সমর্থনও মিলতে পারে।
সিলেক্ট কমিটি নিয়ে আর্জি
সংসদে পেশ করার আগে বৃহস্পতিবার বিমা বিলটি সিলেক্ট কমিটিতে অনুমোদন করিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল সরকারের। কিন্তু সেটা পিছিয়ে দিতে হয়েছে। কারণ চন্দন মিত্রের নেতৃত্বাধীন কমিটি থেকে শাসক দলের দুই সদস্য জগৎপ্রকাশ নাড্ডা ও মুখতার আব্বাস নকভি ইতিমধ্যে মন্ত্রী হয়ে গিয়েছেন। শাসক দলের প্রতিনিধি না থাকলে বিরোধী দলের সাংসদরা বৈঠকে চাপে ফেলতে পারে। তাই চন্দন মিত্র বুধবার অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির সঙ্গে দেখা করে বিজেপি থেকে আরও দুই সদস্য এই কমিটিতে দেওয়ার আর্জি জানিয়ে এসেছেন। অধিবেশন শুরু হলে রাজ্যসভায় এই নতুন সদস্যদের নাম অনুমোদন করাতে হবে। অধিবেশন শেষের আগেই এই বিলটিতে সিলেক্ট কমিটির ছাড়পত্র করিয়ে নিতে চায় সরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy