স্বাধীনতা দিবস এগিয়ে আসতেই ফের বিতর্কে ভারতরত্ন!
সরকার এ বারে এক বা একাধিক ব্যক্তিকে মরণোত্তর ভারতরত্ন দিতে পারে এমন একটা খবর ছড়িয়ে পড়তেই সুপারিশের ঠেলার মঙ্গলবারের সংসদ সরগরম হয়ে ওঠে। ধ্যানচাঁদ থেকে কাঁসিরাম, গাঁধী থেকে নেতাজি হয়ে মঙ্গল পাণ্ডে, এমনকী সম্রাট অশোকের নামও উঠে আসে নানা দলের নানা নেতার মুখে। শেষ পর্যন্ত সিপিএম সাংসদ সীতারাম ইয়েচুরি খানিকটা ঠাট্টার সুরেই বলেন, “এ ভাবে পিছু ফেরা শুরু হলে তো গৌতম বুদ্ধকে সবার আগে ভারতরত্ন দিতে হয়। সরকার এ বার তাঁকে দিয়েই শুরু করুন!”
রাজনীতিতে তৃণমূল সিপিএমের ঘোর বিরোধী হলেও সীতারামের যুক্তিকে সমর্থন করছেন সুখেন্দুশেখর রায়। তিনি বলেন, “সরকারের উচিত একটি সময়সীমা বেঁধে দেওয়া। তা না হলে সম্মান প্রাপকদের খোঁজে ক্রমশ পিছিয়ে যাওয়ার দাবিই তো উঠবে।” উাদহরণ হিসেবে তৃণমূলের এই সাংসদ বলেন, সুভাষচন্দ্র বসু ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রায় সমসাময়িক। দু’জনেই ভারতের কৃতী সন্তান। এক জনের নাম ভারতরত্নের জন্য বিবেচনা করা হলে অন্য জন কেন বাদ পড়লেন সে প্রশ্ন উঠবেই। সংবিধান বিশেষজ্ঞ সুভাষ কাশ্যপও মনে করেন, এই জন্যই প্রাপক বাছাইয়ের গোটা বিষয়টিতে স্পষ্টতা থাকা প্রয়োজন।
ভগৎ সিংহ, সুখদেব বা রাজগুরু কিংবা স্বামী বিবেকানন্দের নাম কেন বিবেচ্য হবে না তা নিয়ে সাংসদরা জোরাল প্রশ্ন তুলেছেন। প্রথম মহাবিদ্রোহের শহিদ মঙ্গল পাণ্ডেকেও ভারতরত্ন দেওয়ার দাবি উঠেছে। আবার বিহারের জেডিইউ নেতা অভিষেক গুপ্তের দাবি, “ভারতের ইতিহাসে অশোকের অবদান ভোলা অসম্ভব। জাতীয় প্রতীক অশোক স্তম্ভও তাঁরই অবদান। তিনিই বা বাদ যাবেন কেন!” নেতাজিকে ভারতরত্ন দেওয়ার বিরুদ্ধে অবশ্য প্রথম থেকেই সরব তাঁর পরিবারের সদস্য তৃণমূল সাংসদ সুগত বসু। তিনি মনে করেন, নেতাজি, গাঁধী বা রবীন্দ্রনাথকে এ সব সম্মানের ঊর্ধ্বেই রাখা উচিত। তাঁর যুক্তি, “সমসাময়িক সময়ে যাঁরা ভাল কাজ করেছেন, তাঁদেরই বরং ওই সম্মান দেওয়া হোক।”
ইতিহাস বলছে জন্মলগ্ন থেকেই বিতর্ক চলছে ভারতরত্ন নিয়ে। ১৯৫৪ সালে প্রথম ওই খেতাব পান তিন জন সি ভি রমন, সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন ও সি রাজাগোপালাচারি। বিতর্ক চরমে ওঠে পরের বছর। সে সময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন জহওরলাল নেহরু। সকলকে অবাক করে দিয়ে তাঁর নাম দেখা যায় সম্মান প্রাপক হিসেবে। ১৯৭১ সালে ইন্দিরা গাঁধী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ফের একই চিত্র। ভারতরত্ন প্রাপকের নাম সাধারণত প্রধানমন্ত্রীর হাত ঘুরেই রাষ্ট্রপতির কাছে পৌঁছয়। স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে, নেহরু ও ইন্দিরা তা হলে কি নিজেরাই নিজেদের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়েছিলেন? আবার আন্তর্জাতিক মহল সম্মান জানানোর পরই মাদার টেরেজা, সত্যজিৎ রায় বা অর্মত্য সেনদের কপালে ভারতরত্নের শিকে ছেঁড়ে। সরকারের সেই মনোভাবকে কেন্দ্র করেও সে সময়ে বিতর্ক ওঠে এত দেরিতে কেন?
তা ছাড়া ভারতরত্ন ভাঙিয়ে প্রাদেশিক রাজনীতিতে ফায়দা তোলার চেষ্টাও বরাবর করে গিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলি। এ বারও তা হয়েছে। মহারাষ্ট্রের শিবসেনা সরব হয়েছে বিনায়ক দামোদর সাভারকরের নামে। ভূপেন হজারিকার নাম সুপারিশ করে তদ্বির করছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। আবার রামমনোহর লোহিয়া ও কাঁসিরামের নামে গলা ফাটিয়েছে যথাক্রমে সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজ পার্টি। সামনেই চার রাজ্যে বিধানসভা ভোট। সরকার ভারতরত্ন ঘোষণার মধ্যে দিয়ে রাজনীতি করছে বলে অভিযোগ করেছেন কংগ্রেস মুখপাত্র রশিদ অলভি। তাঁর দাবি, বিধানসভা ভোটের পরে ভারতরত্ন প্রাপ্রকদের নাম ঘোষণা করা হোক। কংগ্রেস এখন ওই দাবি করলেও ভারতরত্নের রাজনীতি করার অভিযোগে দুষ্ট তারাও। রাজীব গাঁধী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন এম জি রামচন্দ্রনের নাম মরণোত্তর ভারতরত্ন প্রাপক হিসাবে ঘোষণা করেন। লক্ষ্য ছিল তামিলনাড়ু নির্বাচনে ভাল ফল করা। একই ভাবে বি আর অম্বেডকরকে মরণোত্তর ভারতরত্ন দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বিশ্বনাথপ্রতাপ সিংহ। সেখানে তাঁর লক্ষ্য ছিল দলিত ভোট।
এ বার নরেন্দ্র মোদী কী করেন, সকলের নজর এখন সে দিকেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy