সংসদ ভবনে দেখা হল দুই হরির। সৌজন্য বিনিময় দূরের কথা, মুখ ঘুরিয়ে দু’দিকে চলে গেলেন দু’জনে। বৃহস্পতিবার রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান পদের ভোটে এই দুই হরিরই লড়াই। কংগ্রেসের বি কে হরিপ্রসাদ এবং জেডিইউয়ের হরিবংশ নারায়ণ সিংহ।
অঙ্ক বলছে, লড়াই হাড্ডাহাড্ডি। ফলে এনডিএ-তেও নেই, ইউপিএ-তেও নেই এমন দলগুলিকে নিয়ে টানাটানি শুরু হয়। যেমন নবীন পট্টনায়ক। হরিপ্রসাদ এ দিন বলেন, ‘‘বিজেডি ভোটদানে বিরত থাকলেই খেলা ঘুরে যাবে। সেই চেষ্টাই হচ্ছে।’’ যদিও রাতে কংগ্রেসের আশায় জল ঢেলে নবীন জানিয়ে দিয়েছেন, এনডিএ-কেই সমর্থন করবেন তাঁরা। আর এই ঘোষণার পরে হরিবংশের জয় মোটের উপরে নিশ্চিত বলেই রাজধানীর রাজনীতিকদের অভিমত।
নবীনকে পাশে পেতে চেষ্টায় ফাঁক রাখেনি বিজেপি। গত সোমবার তাঁকে ফোন করেন নরেন্দ্র মোদী। তার পরেই ভোট-ঘোষণা হয়। নবীন এ দিন জানিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে অমিত শাহ, নীতীশ কুমার এবং রাজনাথ সিংহেরও কথা হয়েছে। নবীনের ঘোষণার আগেই বিজেপি সভাপতি এ দিন দাবি করেন, বিজেডি এনডিএর পক্ষেই ভোট দেবে। আর সেই হিসেব কষে বিজেপি বলছে, ২৪৪ আসনের রাজ্যসভায় তাদের পক্ষে ১২৯ জন সাংসদ আছেন।
কংগ্রেসের আনন্দ শর্মা অবশ্য পাল্টা বলেন, ‘‘অমিত শাহের কাছে সংখ্যা নেই বলেই তো জেডিইউ প্রার্থী দিতে হয়েছে! নিজেদের দাদাগিরির সঙ্গেও এখন বাধ্য হয়ে আপস করতে হচ্ছে।’’ যদিও শেষ পর্যন্ত ম্যাজিক সংখ্যা ছোঁয়া যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে বিরোধী শিবিরে। বিজেপির সঙ্গে শিবসেনার সম্পর্কের অবনতি হলেও আজ হরিবংশের মনোনয়নে প্রস্তাবক হিসেবে সই করেছে তারা। (যদিও শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউতের মন্তব্য, ‘এনডিএর আর কিছু অবশিষ্ট নেই।’) করুণানিধির মৃত্যুর পরে কানিমোঝির সংসদে আসা অনিশ্চিত। অরবিন্দ কেজরীবাল চাইছেন, তাঁদের ভোট পেতে হলে রাহুল গাঁধীকে ফোন করতে হবে। যদিও নীতীশ ফোন করার পরে তাঁকে হতাশই করেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী।
তবে বিরোধী শিবিরের স্বস্তি, চন্দ্রবাবু নায়ডুর প্রত্যক্ষ সমর্থন। জগন্মোহন রেড্ডির দলও এনডিএর বিপক্ষে ভোট দেবে বলে জানিয়েছে। মেহবুবা মুফতির দল ভোট দেবে না। আর প্রার্থী হতে না-পারা অকালি নেতা নরেশ গুজরাল বিজেপির অস্বস্তি বাড়িয়ে বলেছেন, ‘‘২০১৯ সালে বাজপেয়ীর মতো নেতা চাই, যিনি শরিকদের সম্মান করবেন।’’
তৃণমূল অবশ্য হারজিত যা-ই হোক বিরোধী প্রার্থীকে ভোট দেওয়ারই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই সঙ্গে তাদের আশা, বিজেপি-বিরোধী সব দলই হরিপ্রসাদের পাশে দাঁড়াবে। নীতীশ অবশ্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা চালিয়েছিলেন। তাঁর পক্ষ থেকে বার্তা পাঠানো হয়, হরিবংশকে সমর্থন করা সম্ভব না হলে ভোটদানে বিরত থাকুক তৃণমূল।
দিল্লিতে জেডিইউ নেতারা তৃণমূল নেতাদের বলেছেন, ২০১৯-এর পরে কী পরিস্থিতি হবে, কে বলতে পারে। হয়তো দেখা গেল মমতা ও নীতীশ একই দিকে রয়েছেন! কিন্তু তৃণমূল শিবিরের বক্তব্য, লোকসভা ভোটের আগে মমতা যখন ফেডারেল ফ্রন্ট গড়তে উঠেপড়ে লেগেছেন, তখন এনডিএ প্রার্থীকে সমর্থন করা বা ভোটদানে বিরত থাকা সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে বিজেপি-তৃণমূল আঁতাঁত নিয়ে অহেতুক জল্পনা তৈরি হতে পারে।
ভারতের রাজনীতি, ভারতের অর্থনীতি- সব গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy