Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
green corridor

‘হৃৎপিণ্ড’ নিয়ে মাত্র চার ঘণ্টায় ১৫০০ কিমি পথ পাড়ি! প্রাণ বাঁচাতে অসাধ্যসাধন পুলিশ-প্রশাসনের

কোনও ব্যক্তি স্বেচ্ছায় হৃৎপিণ্ড দান করলে সেই অঙ্গ তাঁর মৃত্যুর পর প্রতিস্থাপনে ব্যবহার করা যায়। এই সময় প্রতিটি মিনিট, প্রতিটি সেকেন্ডও গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি মুহূর্ত পেরোনোর সঙ্গে সঙ্গে অঙ্গটি কর্মক্ষমতা হারায়।

— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০২৪ ১৮:৪৯
Share: Save:

হার মানল দূরত্ব! প্রবল বর্ষণ, যানজট সব কিছু উপেক্ষা করে ‘হৃৎপিণ্ড’ পাড়ি দিল কলকাতা থেকে সুদূর গুরুগ্রাম। মাত্র চার ঘণ্টায় ১৫০০ কিলোমিটারেরও বেশি পথ পেরিয়ে গুরুগ্রামে পৌঁছল। নতুন জীবন ফিরে পেলেন রোগী।

রোগীর বয়স ৩৪। হরিয়ানার রোহতকের বাসিন্দা তিনি। সম্প্রতি হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে গুরুগ্রামের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানেই চিকিৎসকেরা জানান, যত দ্রুত সম্ভব হৃদ্‌যন্ত্র প্রতিস্থাপন করতে হবে তাঁর। এ পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। গোল বাধল দাতা নিয়ে। অনেক খুঁজে অঙ্গদাতা মিলল বটে, কিন্তু সে প্রায় ১৫০০ কিলোমিটার দূরে, কলকাতার এক সরকারি হাসপাতালে। সেই মতো গত ৩১ জুলাই মাত্র চার ঘণ্টায় কলকাতা থেকে হৃৎপিণ্ডটি সংরক্ষণ করে গুরুগ্রাম নিয়ে যাওয়া হল। সফল অস্ত্রোপচারের পর এখন সুস্থ রয়েছেন ওই ব্যক্তি।

এই অসাধ্যসাধন সম্ভব হল কী করে? চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এ ক্ষেত্রে সফল প্রতিস্থাপনের জন্য অস্ত্রোপচারেরও আগে চাই ‘সুস্থ’, কর্মক্ষম হৃৎপিণ্ড। কোনও ব্যক্তি স্বেচ্ছায় হৃৎপিণ্ড দান করলে সেই অঙ্গ তাঁর মৃত্যুর পর প্রতিস্থাপনে ব্যবহার করা যায়। এই সময় প্রতিটি মিনিট, প্রতিটি সেকেন্ডও গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি মুহূর্ত পেরোনোর সঙ্গে সঙ্গে অঙ্গটি কর্মক্ষমতা হারায়। এই অবস্থায় অঙ্গদাতার খোঁজ তো মিলল, কিন্তু এত কম সময়ে তা কলকাতা থেকে গুরুগ্রাম নিয়ে আসা কার্যত অসম্ভব। তবু অনেক আশা নিয়ে দাতার খোঁজ পাওয়া মাত্রই গুরুগ্রামের চিকিৎসকদের একটি দল রওনা দিল কলকাতার উদ্দেশে। অঙ্গদাতা ৫৪ বছর বয়সি এক মহিলা, সদ্য মৃত্যু হয়েছে তাঁর। মাঠে নামল কলকাতা পুলিশ, বিমানবন্দর থেকে হাসপাতাল পর্যন্ত তৈরি করা হল যানজটমুক্ত ‘গ্রিন করিডর’। আগে থেকেই অপেক্ষা করে ছিল ইন্ডিগো বিমানসংস্থার দিল্লিগামী উড়ান, বিমানবন্দর থেকে বানভাসি দিল্লি শহর পেরিয়ে গুরুগ্রামের হাসপাতালে পৌঁছনোর জন্য তৈরি করা ছিল আরও একটি করিডর। দিল্লি এবং গুরুগ্রামের ১০০-রও বেশি পুলিশকর্মীর সহযোগিতায় নিশ্চিত করা হয়েছিল, যাতে ব্যস্ত রাজধানীতে ঘোর বর্ষার দিনেও কোনও ভাবেই অ্যাম্বুল্যান্সটি যানজটে না পড়ে।

দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গুরুগ্রামের হাসপাতালটির দূরত্ব প্রায় ১৮ কিলোমিটার। মাত্র ১৩ মিনিটে সেই পথ পেরিয়ে অবশেষে কলকাতার হৃৎপিণ্ড এসে পৌঁছল গুরুগ্রামের আইসিইউতে। পুরো ১৫০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সময় লেগেছে মাত্র চার ঘণ্টা। জানা গিয়েছে, অস্ত্রোপচারের পর এখন সুস্থ রয়েছেন ওই যুবক। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ-প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়েছে তাঁর পরিবার।

অন্য বিষয়গুলি:

green corridor Kolkata Gurugram heart transplant
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE