বিপর্যস্ত হিমাচলে চলছে উদ্ধারকাজ। ছবি: পিটিআই।
ধুয়েমুছে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে গোটা গ্রাম। চোখের সামনে ভেসে গিয়েছে ঘরের পর ঘর। বন্যার তোড়ে ভেসে গিয়েছেন পরিজন, প্রতিবেশীরাও। পরিস্থিতি এমন যে, ধ্বংসযজ্ঞ শেষে গোটা গ্রামে শুধু দাঁড়িয়ে রয়েছে একটিই বাড়ি! এমনই দৃশ্য দেখা গিয়েছে হিমাচলের সামেজ গ্রামে।
হিমাচল প্রদেশের শিমলা জেলার ছোট্ট গ্রাম সামেজ। গত ৩১ জুলাইয়ের মেঘভাঙা বৃষ্টির পর থেকেই সেখানে অন্তত ৩৩ জন নিখোঁজ। জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে ৩৮টি ঘর। দু’টি ব্রিজও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গোটা গ্রামে কেবল একটি বাড়িই কোনও মতে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আর ‘ভাগ্যের জোরে’ বেঁচে গিয়েছেন গুটি কয়েক গ্রামবাসী। এমনই এক জন হলেন অনিতা দেবী। সংবাদমাধ্যমের কাছে দুর্যোগের সেই রাতের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছেন তিনি।
অনিতার কথায়, ‘‘বুধবার রাতে পরিবারের সঙ্গে ঘুমিয়েছিলাম, হঠাৎই বিকট শব্দে কেঁপে উঠল ঘরবাড়ি। বাইরে তাকিয়ে দেখি, পুরো গ্রাম ভেসে গিয়েছে।’’ আতঙ্কে তাঁরা কয়েক জন স্থানীয় একটি মন্দিরে আশ্রয় নেন। সেখানেই কোনও মতে বাকি রাতটা কাটে তাঁর।
অনিতা বলে চলেন, ‘‘কেবল আমাদের বাড়িটাই কোনও ভাবে এই ধ্বংসযজ্ঞ থেকে রক্ষা পেয়েছে। কিন্তু চোখের সামনে ভেসে গিয়েছে বাকি সব কিছু। এখন আমি কার সঙ্গে থাকব তা-ও জানি না।’’ বলতে বলতে বার বার গলা কেঁপে ওঠে তাঁর।
সামেজ গ্রামেরই আর এক বাসিন্দা বক্সী রাম। বয়স ষাটের কোঠায়। বক্সী জানাচ্ছেন, তাঁর পরিবারের অন্তত ১৪ জন সদস্য ভেসে গিয়েছেন বন্যায়। বিপর্যয়ের দিন রামপুরে গিয়েছিলেন, তাই প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন তিনি। দুপুরে বন্যার খবর পেয়েই গ্রামে পৌঁছন পরদিন ভোরে। এসে দেখেন, নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে গোটা গ্রাম। বক্সীর ভাষায়, ‘‘সব কিছু ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। এখন শুধু প্রিয়জনদের খুঁজে চলেছি। কে জানে, ওদের কেউ না কেউ হয়তো এখনও বেঁচে আছে!’’
গত বুধবার রাত থেকে মেঘভাঙা বৃষ্টি আর ধসে বিপর্যস্ত হিমাচল প্রদেশের শিমলা, মান্ডি এবং কুলু জেলা। ধসের কবলে ভেঙেছে বহু ঘরবাড়ি, স্কুল, হাসপাতাল। ইতিমধ্যেই রাজ্যের ওই তিন জেলায় ছ’জনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ ৫৩ জন। পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ কুলু এবং মান্ডিতে। ওই দুই জেলায় সমস্ত স্কুল এবং কলেজ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। কুলুতে ভারী বৃষ্টির জেরে বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে বিপাশা নদী। কোথাও কুলু-মানালি জাতীয় সড়কের উপর দিয়েই বইছে নদীর জল। এই পরিস্থিতিতে ৩ নম্বর জাতীয় সড়কে সাময়িক যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কুলু জেলার বাগীপুলে মেঘভাঙা বৃষ্টির জেরে ধসে চাপা পড়েছে ৯টি বাড়ি। তার মধ্যে একটি বাড়ির গোটা পরিবারই জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে বলে খবর। মান্ডির থালতুখড় এলাকায় মেঘভাঙা বৃষ্টিতে অন্তত ৯ জন নিখোঁজ বলে প্রাথমিক ভাবে জানা যাচ্ছে। সেখানে মৃত্যু হয়েছে এক জনের। তবে তিন জেলা মিলিয়ে যাঁরা নিখোঁজ হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই শিমলার। শিমলার সামেজে একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাছে বুধবার রাতে মেঘভাঙা বৃষ্টি হয়। সেখানেই নিখোঁজ ৩৩ জনেরও বেশি। হিমাচলের মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিংহ সুখু স্থানীয়দের সঙ্গে দেখা করেছেন। নিখোঁজদের খোঁজে পুরোদমে চলছে উদ্ধার অভিযান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy