কেরলের রাজ্যপাল। — ফাইল চিত্র।
কেরলে ভূমিধসে মৃতের সংখ্যা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। এর মধ্যেই কেরলের রাজ্যপাল জানিয়ে দিলেন, ওয়েনাড়ে আসলে কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা-ই এখনও নিশ্চিত ভাবে জানা যায়নি। কারণ, এখনও ভূমিধসের কবলে পড়া মূল এলাকাগুলিতে পৌঁছতেই পারেনি উদ্ধারকারী দল।
ওয়েনাড়ে মঙ্গলবারের ভূমিধসের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ২৭৬ জনের দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, নিখোঁজের সংখ্যা দেড়শোরও বেশি। এখনও নিখোঁজদের সন্ধান এবং উদ্ধারের কাজ চলছে। আক্ষরিক অর্থেই নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে পশ্চিমঘাট পর্বতের জঙ্গলঘেরা গোটা চারেক গ্রাম। বাড়িঘর, কফির বাগান হাজার হাজার টন পাথর এবং কাদার স্তূপের নীচে। সেনাবাহিনী, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ), কেরলের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর এবং রাষ্ট্রীয় জরুরি পরিষেবার কর্মীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দিনরাত এক করে উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও।
মঙ্গলবার থেকেই ওয়েনাড় নিয়ে কেন্দ্র এবং কেরল সরকারের মধ্যে দোষারোপ-পাল্টা দোষারোপের খেলা শুরু হয়েছে। কখনও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দাবি করেছেন, কেরলকে ভূমিধস নিয়ে আগে থেকেই সতর্ক করেছিল কেন্দ্র। পর ক্ষণেই তাঁর যুক্তি উড়িয়ে দিয়েছেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার কেরলের রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খান বললেন, ‘‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যখন বলেছেন সতর্কতা জারি করা হয়েছিল, তখন তা নিয়ে সন্দেহের আর কোনও অবকাশ নেই।’’
বৃহস্পতিবার আরিফ বলেন, ‘‘দুর্যোগে মৃতদের সংখ্যা এর মধ্যেই ২০০ ছাড়িয়েছে। ভূমিধস ছাড়াও তুমুল বৃষ্টিতে ছালিয়ার নদীর গতিপথ বদলে যাওয়ায় ধুয়েমুছে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল কয়েকটি গ্রাম। এখনও পর্যন্ত যে মৃতদেহগুলি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে, সেগুলির বেশির ভাগই এমনই একটি গ্রামের। সেতু ভেঙে যাওয়ায় আসল দুর্ঘটনাগ্রস্ত এলাকায় এখনও পৌঁছতেই পারেনি উদ্ধারকারী দল!’’
রাজ্যপাল আরও জানাচ্ছেন, পুরোদমে চলছে উদ্ধারকাজ। অস্থায়ী ক্যাম্প তৈরি করে সকলকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি, স্থানীয় সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের কাজের প্রশংসা করেছেন আরিফ। তাঁর মতে, উদ্ধারকারী বাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন এঁরাও।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্যের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তাঁর সাফ জবাব, ‘‘এখন মানুষের দুঃখ ভাগ করে নেওয়ার, হতাহত ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার সময়। আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যখন বলেই দিয়েছেন সতর্কতা জারি করা হয়েছিল, তা নিয়ে সন্দেহের আর কোনও অবকাশ নেই।’’
প্রসঙ্গত, বুধবার সংসদে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দাবি করেছিলেন, ওয়েনাড়ে ভূমিধসকাণ্ডের অন্তত এক সপ্তাহ আগে, গত ২৩ জুলাই কেন্দ্র কেরলের পিনারাই বিজয়ন সরকারকে এ নিয়ে সতর্ক করা হয়েছিল। ছিল ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাসও। তাই আগেভাগেই নাকি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ন’টি দল। শাহ বলেন, ‘‘কেরলে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ন’টি দলকে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু কেরল সরকার সময় থাকতে মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরানোর বন্দোবস্ত করেনি। তা হলে প্রাণহানি কিছুটা হ্রাস পেত।’’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সেই দাবি বুধবারই খারিজ করে দিয়েছিলেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। বিজয়ন স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ‘‘ওয়েনাড়ে ধসের সম্ভাবনা নিয়ে কেন্দ্রের তরফে কেরলকে কোনও সতর্কবার্তা পাঠানো হয়নি। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর (আইএমডি)-এর তরফে ভূমিধসের কোনও পূর্বাভাসও দেওয়া হয়নি। শুধু ওয়েনাড় জেলায় বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা সংক্রান্ত কমলা সতর্কতা ছিল। কিন্তু বাস্তবে বৃষ্টিপাত ৫০০ মিলিমিটার ছাড়িয়েছে। যা পূর্বাভাসের তুলনায় অনেক বেশি।’’ এর পরেই বিজয়ন যোগ করেন, ‘‘মঙ্গলবার ভোরে ভূমিধসের ঠিক পরেই অবশ্য ওই জেলার (ওয়েনাড়) জন্য একটি লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছিল!’’
বিজয়ন আরও বলেন, ‘‘আমাদের রাজ্য এমন বেদনাদায়ক দৃশ্য আগে কখনও দেখেনি। ভূমিধসে আহত মোট ২১৯ জনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে ৭৮ জন এখনও বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দু’দিনের অভিযানে মোট ১৫৯২ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারকারী দলগুলি সমন্বয় রেখে অক্লান্ত ভাবে কাজ করে গিয়েছে বলেই এই সাফল্য মিলেছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy