রকমারি মিলেটের খাবার —ফাইল চিত্র।
জি২০-র রাষ্ট্রপ্রধানদের ভোজপাতেই শেষ নয়। হুগলির শতাব্দী-প্রাচীন মিষ্টান্ন ভান্ডারেও পৌঁছে গেছেন মিলেট প্রচারক সরকারি কর্তা। ছানা, চিনি, ময়দা নিয়ে তো কত কিছু করলেন! মিলেটটা ধরলে সরকারের নেকনজরে পড়বেন।
বিদেশি অতিথিদের জন্য গালভরা মিলেট মেনু দেখে অনেকেই থ! কিন্তু যাঁরা বুঝেছেন, হেসে কুটিপাটি। জি২০-র ভোজের মিষ্টি এলাচগন্ধী ‘বার্নইয়ার্ড মিলেট পুডিং’এর অনুপ্রেরণায় কৌশিকী অমাবস্যাতেই সামা চালের থকথকে পায়েস রাঁধেন দক্ষিণ কলকাতার এক বঙ্গকন্যা। শখের হোমশেফ পৃথা দত্ত হাসছেন, অনেকেই বোঝেননি এই বার্নইয়ার্ড মিলেট আসলে আমাদের হদ্দ চেনা সামা বা শ্যামা চাল। বাড়িতে উপোসের দিনে অন্ন খাওয়া নিষেধ অনেক বাঙালি-বাড়িতে। তার বদলে সামা চালের পায়েস চেটেপুটে খাওয়ার মজাই আলাদা! জি২০ মেনুর ঢঙে পৃথা মজা করে ফেসবুকে তাঁর পায়েসেরও ‘মধুরিমা’ নাম দিয়েছেন। সামা ছাড়া কাওনের পায়েস বা খিচুড়িও ব্রতপার্বণে বাঙালিঘরের বাঁধা খাবার। জি২০-র মেনুতে এই কাওনও ছিল ফক্সটেল মিলেট পরিচয়ে।
ইউনেস্কোর মিলেট খাদ্য বর্ষে এ দেশের মিলেট চর্চা অবশ্য বিস্তৃত। এ মাসেই মিলেটজাত খাবারের প্রসারে কলকাতার সভায় ছিলেন কেন্দ্রীয় খাদ্যপ্রক্রিয়াকরণ সচিব অনিতা পরভিন। রাজ্যের খাদ্যের প্রক্রিয়াকরণ সচিব সুব্রত গুপ্ত বলছেন, ‘‘শুধু মিষ্টির দোকান কেন, মিলেট প্রক্রিয়াকরণে যুক্ত সবাইকেই আমরা উৎসাহ দিচ্ছি। মিলেটের খাবার নিয়ে কাজের আমরা পাশে থাকব! খাদ্যপ্রক্রিয়াকরণ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্রকল্পে ৪০ শতাংশ বা ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ভর্তুকি মিলবে।’’
রাজ্য কৃষি দফতরের প্রচারপুস্তিকায়, মিলেটের সঙ্গে এ দেশের ৫০০০ বছরের পুরনো যোগের কথা রয়েছে। মিলেটের নানা বৈচিত্র্য। চিনার বা প্রোসো ১০ হাজার বছর আগেও চিনে চাষ হত। রাগি না-খেলে কন্নড়ভাষীদের ঘুম হয় না। তা আবার মারওয়া নামে চাষ হয় ডুয়ার্সে।জোয়ার, বাজরা বহুল পরিচিত রাজস্থানে। সামা, কাওন, কোদো উত্তরবঙ্গ, পুরুলিয়াতেও চেনা। খুব অল্প জলে, ঊষর জমিতে, কীটনাশক ছাড়া বেড়ে ওঠা মিলেট বা ‘শ্রী অন্নম’কে দুঃসময়ের খাবার তকমা দিয়েছেন শস্যবিজ্ঞানীরা। উষ্ণায়নের দিনকালে খামখেয়ালি বৃষ্টিতেও এ খাদ্যের অভাব হয় না। সেই সঙ্গে গ্লুটেন মুক্ত, ক্যালশিয়াম বিশিষ্ট পুষ্টির খাবার হিসেবেও মিলেটের সমীহ। সুব্রতের কথায়, “আগে খরাপীড়িত এলাকার গরিবরা মিলেট বেশি খেতেন। এখন জীবনযাত্রা জনিত নানা রোগে বিত্তবানদের কাছেও মিলেটের বিশেষ কদর।” শনিবারই কলকাতায় মিলেটের নুডলস, বিস্কুট, পরোটা, দোসা, পোলাও, খিচুড়ি, পায়েস নিয়ে কর্মশালার আয়োজন করেছিল জৈবখাদ্য প্রচার মঞ্চ পৌষ্টিক লাইফ। সামনে চুঁচুড়ায় ‘সঠিক খাদ্য’ বিষয়ক সরকারি অনুষ্ঠান। তাতে ডাক পেয়ে রিষড়ার ফেলু ময়রার অমিতাভ মোদকের ইচ্ছে, “রাগির লাড্ডুর আদলে মিলেটের বোঁদে, বরফিকাটা সন্দেশ বা পায়েসের ধাঁচে কিছু করব।”
সব খাবারেই ময়দার আধিক্য থেকে মুক্তির পথ দেখালেও তুমুল মিলেট প্রচারে কিছু আশঙ্কাও রয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত কৃষি আধিকারিক তথা বিজ্ঞানী অনুপম পাল বা মিলেট প্রসারে উদ্যোগী সুদীপ চট্টোপাধ্যায়, রুথ চট্টোপাধ্যায়েরা দুশ্চিন্তায়, “জোয়ার, বাজরার মতো সব রকম মিলেটেরই এ বার কর্পোরেট দখল নেবে। চাষির হাতে মিলেটের বীজের অধিকার থাকবে না।” শুধু মিলেট খেয়ে দেশের খাদ্য বৈচিত্র্য বা সংস্কৃতি নষ্ট করারও পক্ষে নন অনেকেই। বাঁকুড়ার সোনামুখির মিলেট চাষি ভৈরব সাইনিও সদ্য দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সংস্থা পুসা-র অনুষ্ঠান থেকে ফিরে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন। তাঁর কথায়, “পুসা-য় রাসায়নিক মেশানো উচ্চ ফলনশীল মিলেট দেখেছি। সে-সব চাপানো হলে চালের মতো মিলেটেরও বৈচিত্র্য বলে কিছু থাকবে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy