Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

‘পওয়ার শো’-এ হাজির সব রং

বিভেদ সংসদে। মেলালেন শরদ পওয়ার। আজ সকালে সংসদের অধিবেশন শুরুর আগে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে বিভেদ কাটার কোনও আঁচ পড়েনি।

বিজ্ঞান ভবনে রাহুলকে দেখে হাত বাড়িয়ে দিলেন নরেন্দ্র মোদী। রাহুলও প্রতিনমস্কার করলেন মোদীকে। মঞ্চে রয়েছেন মুলায়ম সিংহ যাদবও। বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।

বিজ্ঞান ভবনে রাহুলকে দেখে হাত বাড়িয়ে দিলেন নরেন্দ্র মোদী। রাহুলও প্রতিনমস্কার করলেন মোদীকে। মঞ্চে রয়েছেন মুলায়ম সিংহ যাদবও। বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:৪৭
Share: Save:

বিভেদ সংসদে। মেলালেন শরদ পওয়ার।

আজ সকালে সংসদের অধিবেশন শুরুর আগে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে বিভেদ কাটার কোনও আঁচ পড়েনি। কংগ্রেসের নাম না করে নরেন্দ্র মোদী এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘শুধু জিএসটি নয়, সাধারণ মানুষের স্বার্থের সঙ্গে জড়িত বিলও আটকে যাচ্ছে কারও খামখেয়ালিপনায়। কারও নিজের মর্জিতে অচল থাকছে সংসদ।’’ আক্ষেপের সুরে তিনি এও বলেন, ‘‘এ ভাবে কি গণতন্ত্র চলে? এটি খুবই দুঃখের।’’ প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পরেও দিনভর সংসদ অচল করে রেখেছে কংগ্রেস। রাহুল গাঁধীর উদ্দেশে বিজেপির এক সাংসদের অশালীন মন্তব্য নিয়ে আজও লোকসভা উত্তাল রাখে তারা। স্পিকার সেই সাংসদ বীরেন্দ্র সিংহকে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ না দেওয়ায় কংগ্রেস প্রতিবাদে সভাকক্ষও ত্যাগ করে। আর ন্যাশনাল হেরাল্ড বিতর্কে রাজ্যসভাও দিনভর অচল করে রাখে তারা।

কিন্তু সন্ধ্যায় এই বিভেদের ছবিটিই অনেকটা মিলিয়ে গেল রাজধানীর বিজ্ঞান ভবনে। এনসিপি নেতা শরদ পওয়ার পা দিলেন পঁচাত্তরে। আর সেই উপলক্ষে বিজ্ঞান ভবনটিই পরিণত হল একটি মিনি-সংসদে। মঞ্চে হাজির রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, সনিয়া গাঁধী, রাহুল গাঁধী, মনমোহন সিংহ, স্পিকার সুমিত্রা মহাজন, লালকৃষ্ণ আডবাণী, নীতীশ কুমার, লালু প্রসাদ, মুলায়ম সিংহ যাদব, ফারুক আবদুল্লা, প্রকাশ সিংহ বাদল, অরুণ জেটলি, সীতারাম ইয়েচুরি, তৃণমূলের একাধিক সাংসদ। মায় সেই বিতর্কিত বিজেপি সাংসদ বীরেন্দ্র সিংহকেও দেখা গেল সামনের সারিতে বসে থাকতে।

রাষ্ট্রপতি তো বলেই ফেললেন, ‘‘মঞ্চে ও দর্শক আসনে যে ভাবে দল মত নির্বিশেষে রাজনৈতিক মুখ দেখতে পাচ্ছি, তাতে প্রমাণ হয় যে আমরা চাইলে দলীয় রাজনীতির উর্ধ্বে উঠতে পারি। এমন একটি মুহূর্তের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য শরদ পওয়ারকে ধন্যবাদ।’’

পওয়ারের জন্মদিনে সকলেই যে তাঁর প্রশংসা করবেন, তা স্বাভাবিক। কিন্তু সেখানেও নরেন্দ্র মোদীকে কৌশলে বিঁধলেন সনিয়া। এক সময়ে ‘বিদেশিনী’ ইস্যুতে কংগ্রেস ছেড়েছিলেন শরদ পওয়ার। পরোক্ষে সেই স্মৃতি উস্কে দিয়ে সনিয়া বলেন, ‘‘ওঁর সঙ্গে বহু বিষয়ে আমার মতের অমিল রয়েছে। কিন্তু গণতন্ত্রে দুই ব্যক্তির মধ্যে সেটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার।’’ পরক্ষণে সেই সূত্র ধরে মোদীকে খোঁচা দিলেন কংগ্রেস সভানেত্রী। বললেন, ‘‘রাজনৈতিক বিরোধীদের সঙ্গে শরদ পওয়ারের সুসম্পর্ক কিংবদন্তী। তথ্য প্রযুক্তির ভাষায় আমরা যাকে বলি নেটওয়ার্কিং, তাতে পওয়ারের মারাত্মক দক্ষতা রয়েছে। ওই দক্ষতা খুবই দরকারি। বিশেষ করে বর্তমান রাজনীতিতে যখন প্রায়ই তিক্ত পক্ষপাতের ঘটনা ঘটছে।’’

প্রশ্ন দুটি। এক, সরকারি সভাগৃহ ভাড়া করে রীতিমতো চাঁদের হাট বসিয়ে পওয়ার কি শুধুই নিজের জন্মদিন পালন করলেন? নাকি এর নেপথ্যেও রয়েছে কোনও রাজনীতি? আর দুই, দলমত নির্বিশেষে সব দলের মাথা এক ছাতার তলায় আসার পর কি কাল থেকে সংসদ স্বাভাবিক হবে?

রাজনৈতিক নেতারা প্রথম প্রশ্নের জবাবে বলছেন, জাতীয় রাজনীতিতে শরদ পওয়ারের মতো এমন ধুরন্ধর রাজনীতিক কম রয়েছেন। যেটির ইঙ্গিত আজ খোদ প্রধানমন্ত্রীই সেই মঞ্চে দিয়েছেন। বলেছেন, ‘‘কৃষি নিয়ে আগাগোড়া আগ্রহী শরদ পওয়ার আবহাওয়ার গতিবিধি আগেই আঁচ পান। আর সেই অভিজ্ঞতাই তিনি ভরপুর কাজে লাগিয়েছেন রাজনীতিতে।’’ রাজনৈতিক শিবিরের মতে, আজকের অনুষ্ঠানের নেপথ্যেও নিশ্চয়ই তাঁর কোনও না কোনও রাজনৈতিক পরিকল্পনা রয়েছে। এও হতে পারে দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন পওয়ার। আর সেই কারণেই দল নির্বিশেষে তাঁর রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতাও আজ এক বার জাহির করে রাখলেন। ওই অনুষ্ঠানে পওয়ার নিজের রাজনৈতিক জীবনের সাফল্যের কথা বলেছেন। তেমনই সহিষ্ণুতা, ধর্মনিরপেক্ষতা, বহুত্ববাদ বজায় রেখে উন্নয়ন করার কথাও বলেছেন। রাজনৈতিক জীবনে কোনও দিন সংসদের মর্যাদা লঙ্ঘন করেননি বলেও আবার রাষ্ট্রনায়কের মতো ভারসাম্য বজায় রাখতে চেষ্টা করেছেন।

আর দ্বিতীয় প্রশ্নের জবাবে কোনও পক্ষই এখনও কোনও আশার কথা শোনাতে পারছে না। একমাত্র প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম আজ দাবি করেছেন, ন্যাশনাল হেরাল্ড বিতর্কের সঙ্গে সংসদে পণ্য পরিষেবার কর বিল পাশের কোনও সম্পর্ক নেই। বিলটি নিয়ে কংগ্রেসের তিনটি সংশোধন প্রস্তাব রয়েছে। সে ব্যাপারে সরকার এখনও কোনও জবাব দেয়নি। অর্থমন্ত্রকের উপদেষ্টা জিএসটি নিয়ে যে রিপোর্ট দিয়েছেন তা ইতিবাচক পদক্ষেপ। কিন্তু কংগ্রেসের প্রস্তাবগুলি নিয়ে কোনও সুপারিশ তিনি দেননি। হয়তো তিনি সেগুলি সরকারের বিবেচনার জন্য ছেড়ে দিয়েছেন।

তাই কংগ্রেস সূত্র এখনও বলে যাচ্ছে, কাল থেকেও হাঙ্গামায় কোনও ইতি টানা হবে না। আর অরুণ জেটলিও বলে দিয়েছেন, ন্যাশনাল হেরাল্ড নিয়ে সরকারের কিছু করার নেই। ভুল কংগ্রেসেরই।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE