Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

ভাল খবরই চান কুলভূষণের বন্ধুরা

খবরটা শোনার পর থেকেই রাগে ফুঁসছেন তুলসীদাস পওয়ার। তাঁর প্রশ্ন, দাউদ ইব্রাহিম, হাফিজ সইদের মতো সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে তো পাকিস্তানের হাতে ভুরিভুরি প্রমাণ তুলে দিয়েছে ভারত।

বিক্ষোভ: পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ছবিতে চপ্পল। কুলভূষণ যাদবের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার প্রতিবাদ লখনউয়ে। মঙ্গলবার। রয়টার্স

বিক্ষোভ: পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ছবিতে চপ্পল। কুলভূষণ যাদবের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার প্রতিবাদ লখনউয়ে। মঙ্গলবার। রয়টার্স

সংবাদ সংস্থা
মুম্বই শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৭ ০৪:১৮
Share: Save:

খবরটা শোনার পর থেকেই রাগে ফুঁসছেন তুলসীদাস পওয়ার। তাঁর প্রশ্ন, দাউদ ইব্রাহিম, হাফিজ সইদের মতো সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে তো পাকিস্তানের হাতে ভুরিভুরি প্রমাণ তুলে দিয়েছে ভারত। কিন্তু কই, পাকিস্তান তো তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না! ভারতীয় নৌসেনার প্রাক্তন অফিসার ও তাঁর ছেলেবেলার বন্ধু কুলভূষণ যাদবের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পর তাঁর পাড়া-প্রতিবেশী ও পরিবারের মতো পাকিস্তানকেই দুষছেন তুলসীদাস।

‘র’-এর হয়ে চরবৃত্তি এবং বালুচিস্তান ও করাচিতে নাশকতা চালানোর অভিযোগে গত কাল কুলভূষণ সুধীর যাদবের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেছে পাক সেনা। কুলভূষণের পৈত্রিক বাড়ি পওয়াইয়ে সে খবর পৌঁছলেও এখনও তা মেনে নিতে পারছেন না তাঁর আর এক বন্ধু সুব্রত মুখোপাধ্যায়।

মহারাষ্ট্রের সাংলির বাসিন্দা এই যাদবরা। কুলভূষণের বাবা ছিলেন মুম্বই পুলিশে। মুম্বইয়ের এনএম জোশী মার্গে বড় হয়েছেন কুলভূষণ। পরে তাঁরা চলে যান আন্ধেরিতে। বন্ধু তুলসীদাস জানিয়েছেন, স্কুল থেকেই ভারতীয় সেনার এই প্রাক্তন অফিসার ছিলেন খেলাধুলোর ভক্ত। তুলসীদাস বলেন, ‘‘এক পাড়ায় বড় হওয়ায় ছোটবেলা থেকেই আমরা বন্ধু। আমাদের বাড়ির ঠিক উল্টো দিকেই থাকত ওরা। একসঙ্গে ফুটবল, ক্রিকেট খেলতে খেলতে বড় হয়েছি। পরে ও ভর্তি হয় রুইয়া কলেজে।’’ পওয়াইয়ের হীরানন্দানী গার্ডেন্সের সিলভার ওক আবাসনে থাকেন কুলভূষণের বৃদ্ধ বাবা-মা। দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে কুলভূষণও থাকতেন সে বাড়িরই ছ’তলায়। গত কাল টেলিভিশন মারফত খবরটা পাওয়ার পর থেকেই থমথমে সেই বাড়ি। বেলা বাড়তে দেখা যায়, কুলভূষণের মুক্তির দাবি তুলে প্ল্যাকার্ড হাতে একে একে জড়ো হচ্ছেন প্রতিবেশীরা। অশান্তি এড়াতে বাড়িতে ঢোকার মুখেই পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

২০১৬ সালে ৩ মার্চ আফগানিস্তানের সীমান্ত লাগোয়া বালুচিস্তানের মাস্কেল থেকে কুলভূষণকে আটক করে পাক গোয়েন্দারা। তার পর থেকে ভারতের তরফে বার বার চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ করা যায়নি কুলভূষণের সঙ্গে। সেই থেকেই তাঁর প্রতি সুবিচারের দাবিতে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন তুলসীদাসরা। তাঁরা বলছেন, ‘‘আমরা সবাই জানি, পাকিস্তান কুলভূষণের সঙ্গে যা করল তা অনৈতিক। কুলভূষণের পরিবারের এখন ওকে প্রয়োজন। তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য অবিলম্বে কার্যকরী পদক্ষেপ করুক দিল্লি।’’

পাক সেনার প্রকাশিত একটি ভি়ডিওয় শেষ বার দেখা গিয়েছিল কুলভূষণকে। সেখানে র-এর হয়ে চরবৃত্তির অভিযোগ মেনে নিয়েছেন কুলভূষণ। যদিও ভারত মনে করছে, কুলভূষণকে জোর করে ওই কথা বলানো হয়েছে। সেই সুর তাঁর আর এক প্রতিবেশীর গলাতেও। বলছেন, ‘‘নৌসেনা থেকে অবসর নেওয়ার পর ইরানে নিজের ব্যবসা দাঁড় করানোর চেষ্টা করছিলেন কুলভূষণ। নিরপরাধ একটা লোককে ফাঁসানো হয়েছে।’’

আরও পড়ুন: রেস্তোরাঁর প্লেটেও কি মোদীর রেশন!

খবরটা মানতে পারছেন না আর এক ছোটবেলার বন্ধু সুব্রত মুখোপাধ্যায়ও। সেই ৬-৭ বছর বয়স থেকে কুলভূষণের সঙ্গে বন্ধুত্ব তাঁর। তিনি জানান, পাড়ার সকলের সব প্রয়োজনে এগিয়ে আসত যাদব পরিবার। যে কোনও সমস্যা নিয়ে গেলেই সাহায্য পাওয়া যেত ওই বাড়ি থেকে। তাঁর মা-বাবার কাছে মরাঠি শিখতে যেতেন সুব্রত। তিনি বলেছেন, ‘‘গত বছর ওর গ্রেফতার হওয়ার খবরেই আমার যথেষ্ট আঘাত পাই। আর এখন মৃত্যুদণ্ডের খবরটা এতটাই আকস্মিক যে, ওর পরিবারের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেও পারিনি। আগামী দিনে ভাল খবর আসুক, এই অপেক্ষায় আছি সবাই।’’ ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন, আজ, মঙ্গলবার বিদেশ মন্ত্রকের কর্তাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য দিল্লি রওনা হয়েছে যাদব পরিবার।

অন্য বিষয়গুলি:

Kulbhushan Yadav Pakistan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE