সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এস আবদুল নাজির। ছবি: টুইটার।
যে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ অযোধ্যায় রামমন্দিরের পক্ষে রায় দিয়েছিল, তার অন্যতম সদস্য ছিলেন বিচারপতি এস আবদুল নাজির। সবে মাত্র গত ৪ জানুয়ারি তিনি সুপ্রিম কোর্ট থেকে অবসর নিয়েছেন। অবসরের ঠিক আগে তাঁর নেতৃত্বেই পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ রায় দিয়েছিল, মোদী সরকারের নোট বাতিলের সিদ্ধান্তে কোনও ভুল ছিল না।
সুপ্রিম কোর্টের সেই অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এস আবদুল নাজিরকে আজ কেন্দ্রীয় সরকার অন্ধ্রপ্রদেশের নতুন রাজ্যপাল হিসেবে নিয়োগ করল। আজ ১২টি রাজ্যে রাজ্যপাল পদে নতুন নিয়োগ বা রদবদল হয়েছে। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাদাখেও নতুন উপরাজ্যপাল নিয়োগ করা হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক অঙ্ক মেনে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মত। কিন্তু প্রাক্তন বিচারপতি নাজিরের নিয়োগের সমালোচনা করে বিরোধীরা এর কড়া নিন্দা করেছে।
কংগ্রেস মনে করিয়ে দিয়েছে, প্রয়াত বিজেপি নেতা অরুণ জেটলিই এক সময় বলেছিলেন, ‘অবসরের পরে নতুন পদ পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা বিচারপতিদের অবসরের আগের রায়কে প্রভাবিত করে। এটা বিচারবিভাগের স্বাধীনতার পক্ষে বিপজ্জনক।’ কংগ্রেস সাংসদ তথা আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, “যখনই আমরা এই রকম নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন করি, তখনই বলা হয়, এমন তো আগেও হয়েছে। অরুণ জেটলির কথাও আগে বলা হয়েছে।”
অযোধ্যায় রামমন্দিরের পক্ষে যে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ রায় দিয়েছিল, তার মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈকে অবসরের পরেই রাষ্ট্রপতি মনোনীত সাংসদ হিসেবে রাজ্যসভায় পাঠানো হয়েছে। আর এক সদস্য, বিচারপতি অশোক ভূষণকে জাতীয় কোম্পানি আইন আপিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হয়েছে। যিনি রায় লিখেছিলেন বলে মনে করা হয়, সেই বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় এখন প্রধান বিচারপতি। এ বার অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নাজিরকে রাজ্যপাল হিসেবে নিয়োগ করা হল।
মনু সিঙ্ঘভি বলেন, “আমরা কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে কিছু বলছি না। ব্যক্তিগত ভাবে আমি ওঁকে চিনি, সম্মান করি। কিন্তু নীতিগত ভাবে আমরা এর বিরোধিতা করছি। আমাদের মত, এটা বিচারবিভাগের স্বাধীনতার পক্ষে বিপজ্জনক এবং বিচারবিভাগকে খাটো করা। তাই আমরা এর বিরোধিতা করছি, এর নিন্দা করছি।”
আজ রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে জানানো হয়েছে, রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল ভগৎ সিংহ কোশিয়ারি ও লাদাখের উপরাজ্যপাল আর কে মাথুরের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন। শিবাজি নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে মহারাষ্ট্রের সব রাজনৈতিক দলেরই তোপের মুখে পড়ার পরে কোশিয়ারি নিজেই রাজ্যপালের পদ ছাড়তে চেয়েছিলেন। তাঁর জায়গায় ঝাড়খণ্ডের বর্তমান রাজ্যপাল, বিজেপির প্রাক্তন নেতা রমেশ বৈসকে মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল নিয়োগ করা হচ্ছে। মাথুরের পদত্যাগের কারণ স্পষ্ট হয়নি। কিন্তু কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাদাখে রাজ্যের তকমা ফেরানোর দাবি উঠেছে।
পরিকাঠামো তৈরিতে জোর দেওয়ার ফলে পরিবেশের ক্ষতি নিয়েও স্থানীয়দের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তার সঙ্গে লাদাখে চিনের জমি দখল নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। সব দিক মাথায় রেখে বর্তমানে অরুণাচলের রাজ্যপাল, সেনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার বি ডি মিশ্রকে লাদাখে উপরাজ্যপালের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। চিনের সঙ্গে বিবাদের আর এক মঞ্চ— অরুণাচলেও সেনার অবসরপ্রাপ্ত লেফটেনান্ট জেনারেল কে টি পরনাইককে রাজ্যপাল করা হচ্ছে।
আজ বিজেপির চার নেতাকে রাজ্যপাল হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। এর মধ্যে রাজস্থানের বিরোধী দলনেতা গুলাব চাঁদ কাটারিয়াকে অসমের রাজ্যপাল নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে বিজেপির অন্দরমহলে সবথেকে বেশি আলোচনা হচ্ছে। কারণ বছরের শেষেই রাজস্থানের বিধানসভা ভোট। এক সময় বসুন্ধরা রাজের সঙ্গে তাঁর বিবাদ থাকলেও এখন সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে। বিজেপি ফের রাজস্থানে ক্ষমতায় এলে তিনি মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবিদারও হয়ে উঠতেন। কিন্তু তাঁকে রাজ্যপালের পদে বসিয়ে কার্যত সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর দিয়ে দেওয়া হল বলে বিজেপি নেতাদের মত। আরএসএস থেকে উঠে আসা কাটারিয়ার বদলে কাকে বিরোধী দলনেতা করা হবে সে প্রশ্ন উঠেছে। সেই বাছাই থেকেই রাজস্থান নিয়ে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কৌশল স্পষ্ট হবে বলে মনে করা হচ্ছে। উদয়পুরের বিধায়ক কাটারিয়ার মেওয়াড় এলাকায় যথেষ্ট প্রভাব ছিল। উত্তরপ্রদেশের দুই বিজেপি নেতা, শিবপ্রতাপ শুক্ল ও লক্ষণ আচার্যকে আজ হিমাচল ও সিকিমের রাজ্যপাল নিয়োগ করা হয়েছে। শিবপ্রতাপ উত্তরপ্রদেশের অন্যতম ব্রাহ্মণ নেতা। আচার্য খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আস্থাভাজন ও তাঁর লোকসভা কেন্দ্র বারাণসীর নেতা। সম্প্রতি তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল আর এন রবি রাজ্যের নাম নিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন। যার পরে রাজ্যে বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। আজ মোদী সরকার তামিলনাড়ুর বিজেপি নেতা সি পি রাধাকৃষ্ণণকে ঝাড়খণ্ডের রাজ্যপাল নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তামিলনাড়ুর বর্তমান বিজেপি সভাপতি কে আন্নামালাইয়ের সঙ্গে মতবিরোধের জেরে তাঁকে রাজ্য থেকে সরানো হল বলে বিজেপি নেতারা মনে করছেন।
চলতি বছরেই মেঘালয় ও নাগাল্যান্ডে ভোট। দুই ছোট রাজ্যে ভোটের পরে সরকার গঠন নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়ে থাকে। রাজভবনে রাজনৈতিক ভাবে অভিজ্ঞ ব্যক্তির প্রয়োজন বুঝে বিহারের রাজ্যপাল ফাগু চৌহানকে মেঘালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মণিপুরের রাজ্যপাল লা গণেশন, যিনি কিছু দিন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেছিলেন, তাঁকে নাগাল্যান্ডের রাজ্যপাল করা হয়েছে। ছত্তীসগঢ়ের রাজ্যপাল অনুসূয়া উইকের সম্পর্কে রাজ্যের বিজেপি নেতারা নিয়মিত নালিশ জানাচ্ছিলেন। তাঁকে মণিপুরে পাঠিয়ে ওড়িশার বিজেপি নেতা বিশ্বভূষণ হরিচন্দনকে ছত্তীসগঢ়ের রাজ্যপাল হিসেবে নিয়োগ করা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy