আশুতোষ মহারাজ ও বালক ব্রহ্মচারী
দশ মাস আগে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে দিয়েছেন। কিন্তু ধর্মগুরুর ভক্তরা তা মানতে নারাজ। মহারাজের দেহ যাতে পুড়িয়ে ফেলা না হয়, তার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। মানুষ সমান ফ্রিজারের ব্যবস্থা করে তাতেই শুইয়ে রাখা হয়েছে মহারাজের দেহ। জালন্ধরের কাছে নুরমহল গ্রামের ‘দিব্য জ্যোতি জাগ্রিতী সংস্থান’-এর প্রতিষ্ঠাতা আশুতোষ মহারাজের অন্ত্যেষ্টি ঘিরে আপাতত ভয়ঙ্কর জটিলতার মুখোমুখি পঞ্জাব প্রশাসন।
এক দিকে হাইকোর্টের নির্দেশ। ১ ডিসেম্বর পঞ্জাব হাইকোর্ট জানিয়েছে, ১৫ দিনের মধ্যে ধর্মগুরুর অন্ত্যেষ্টি করতে হবে। অন্য দিকে, আশুতোষ মহারাজের অগুনতি ভক্ত। যাঁদের দাবি, মহারাজের মৃত্যু হয়নি। তিনি সমাধিস্থ হয়েছেন মাত্র। যে কোনও মুহূর্তে তাঁর সমাধি ভঙ্গ হতে পারে। তাঁর দেহ তাই পোড়ানোর প্রশ্নই ওঠে না। আশুতোষ মহারাজের ছেলে দিলীপ ঝা অবশ্য জানিয়েছেন, তিনি চান অবিলম্বে তাঁর বাবার দেহের সৎকার করা হোক।
ঘটনার সূত্রপাত সেই জানুয়ারিতে। ২৯ তারিখ চিকিৎসকেরা ঘোষণা করেন, হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে আশুতোষ মহারাজের। কিন্তু ধর্মগুরুর আশ্রমের ভক্তরা সে কথা মানতে চাইছেন না। তাঁদের দাবি, তাঁদের গুরুর ভাব সমাধি হয়েছে। তিনি আসলে বেঁচেই আছেন। এই অবস্থায় প্রথম দিকে আদালত জানিয়েছিল, ধর্মগুরুর দেহ নিয়ে যা করার তা ঠিক করবেন ভক্তরাই। কিন্তু পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে গিয়েছে এই দশ মাসে। শেষমেশ হাইকোর্ট ১ ডিসেম্বর ১৫ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেয়। কিন্তু তাতেও লাভ কিছু হয়নি। গুরুর দেহ রীতিমতো আটকে রেখে একশো একরের ওই আশ্রমের সামনে ব্যারিকেড তৈরি করেছেন ভক্তকূল।
এই ঘটনার সঙ্গে অনেকে মিল পাচ্ছেন বছর কুড়ি আগের পশ্চিমবঙ্গের আর এক ঘটনার। সালটা ১৯৯৩। মাসটা জুন। বালক ব্রহ্মচারীর দেহ তাঁর মৃত্যুর ৫৬ দিন বাদে সুখচরের আশ্রম থেকে বার করেছিল পুলিশ। চিকিৎসকেরা বালক ব্রহ্মচারীকে মৃত ঘোষণা করে দিয়েছিলেন বহু দিন আগেই। কিন্তু তাঁর ভক্তকূল সে কথা মানেননি। তাঁরা বলেছিলেন, তাঁদের গুরু সমাধিস্থ হয়েছেন মাত্র। তাঁর দেহ শুইয়ে রাখা হয়েছিল বরফের চাঁইয়ের উপর। ৫৬ দিন পরে সুখচরের আশ্রমে আচমকা হানা দিয়ে বালক ব্রহ্মচারীর পচা-গলা দেহ বার করে আনে পুলিশ। সেই অভিযানে নেতৃত্ব দেন বর্তমানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভার সদস্য, উত্তর চব্বিশ পরগনার তৎকালীন পুলিশ সুপার রচপাল সিংহ। পঞ্জাব পুলিশের ক্ষেত্রে কাজটা কতটা শক্ত? জিজ্ঞেস করা হয়েছিল তাঁকে। আনন্দবাজারকে তিনি সে দিনের অভিজ্ঞতা যেমন শোনালেন, তেমনই জানালেন নুরমহল হয়তো কোনও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মুখোমুখি হতে চলেছে। রচপালের কথায়, “সে দিন সন্ধে ছ’টা নাগাদ অভিযান শুরু হয়েছিল। ঘণ্টা তিনেকের মধ্যে বালক ব্রহ্মচারীর দেহ বার করে আনতে সক্ষম হয় পুলিশ। আচমকা হানা দেওয়ায় সে দিন ভক্তরা তেমন জমা হতে পারেননি। শুধু ত্রিশূলের আঘাতে আহত হয়েছিলাম আমি।” পঞ্জাব পুলিশের কাজটা ততটা সহজ হবে না বলেই মনে করছেন রচপাল। বললেন, “হাইকোর্টের রায়ের ফলে ইতিমধ্যেই সজাগ হয়ে গিয়েছেন ভক্তেরা। ফলে তাঁরা এখন রীতিমতো ব্যারিকেড তৈরি করে ফেলেছেন আশ্রমের সামনে। সে ক্ষেত্রে বলপ্রয়োগ না করে পুলিশের পক্ষে দেহ বার করা প্রায় অসম্ভব।”
মাস খানেক আগে খানিকটা একই রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছিল হরিয়ানার প্রশাসনকেও। হিসারের বারওয়ালার স্বঘোষিত ধর্মগুরু রামপালের গ্রেফতারি নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি। হাইকোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও খুনের মামলায় অভিযুক্ত রামপালকে গ্রেফতার করতে দিচ্ছিলেন না তাঁর ভক্তেরা। আশ্রমের বাইরে সশস্ত্র ব্যারিকেড তৈরি করে রেখেছিল রামপালের নিরাপত্তারক্ষী বাহিনী। পরিস্থিতি সামলাতে নামতে হয় আধা সেনাকেও। দু’দিন অভিযানের পরে রামপালকে গ্রেফতার করা হয়।
বিষয়টির মধ্যে জড়িয়ে রয়েছে আশুতোষের বিশাল সম্পত্তি। দেড় হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি তাঁর। বিহারের বাসিন্দা দিলীপ ঝা নিজেকে মহারাজের ছেলে বলে দাবি করছেন। কিন্তু দিলীপের এই দাবি আশ্রমেরই অনেক ভক্ত মানতে চাইছেন না। তাঁদের দাবি, সম্পত্তির জন্যই নিজেকে মহারাজের ছেলে বলে দাবি করছেন দিলীপ। হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানাতে আজই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন আশ্রম কর্তৃপক্ষ। ১৫-র বদলে ৩০ দিনের সময় চেয়েছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy