শিলচরে শুরু হল লোকগীতি কর্মশালা। প্রদীপ জ্বালিয়ে বাংলাদেশের চার শিল্পী এর উদ্বোধন করেন। ভূপতিভূষণ বর্মা ও অনিমা মুক্তি আগামী তিনদিন এখানকার শিল্পীদের প্রশিক্ষণ দেবেন। শাহনাজ বাবু ও সুজিতা রায় বরাকসেরা লোককণ্ঠ প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। চার শিল্পীই ৩০ ও ৩১ জুলাই শিলচর জেলা গ্রন্থাগারে লোকগীতির অনুষ্ঠান করবেন।
কর্মশালা নিয়ে অবশ্য কারও কোনও আপত্তি নেই। আয়োজক বরাক উপত্যকা লোকমঞ্চের সঙ্গেও বিরোধ নেই। অভিযোগ শুধু বাংলাদেশের শিল্পীদের আমন্ত্রণ নিয়ে। বরাক উপত্যকা হিন্দুসেনা এবং বজরং দল পৃথকভাবে এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে। হিন্দু সেনার প্রতিনিধি দল গত সপ্তাহে জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করে বলে, বাংলাদেশে ব্যাপক জঙ্গি কার্যকলাপ চলছে। তাই এই সময়ে সে-দেশের কাউকে আনা ঠিক হবে না। তারা লোকমঞ্চের এই পরিকল্পনা বাতিলের নির্দেশ দিতে জেলাশাসকের কাছে দাবি জানায়। বজরং দল বাংলাদেশের শিল্পী আনার প্রতিবাদে শিলচর শহরে মিছিল করে। স্থানে স্থানে পথসভাও করে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। মধ্যশহর সাংস্কৃতিক সমিতির সামনে পুলিশ পিকেট বসে। মোতায়েন হয় সিআরপি বাহিনীও। তবে বাধাদানকারী কোনও সংগঠন আজ আর ও-মুখো হয়নি।
বরাক উপত্যকা লোকমঞ্চের সভাপতি শরিফ-উজ-জামান লস্কর বলেন, বরাক উপত্যকা লোকসংস্কৃতির ভাণ্ডার। নতুন শিল্পীদের বের করা না-গেলে সে ভাণ্ডার স্ফীত হতে পারে না। সে জন্যই তাঁরা একদিকে প্রশিক্ষণ ও অন্যদিকে প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছেন। লোকচর্চায় যে ধর্মীয় পরিচিতি মোটেও গুরুত্ব পায় না, তা তিনি জোর দিয়েই উল্লেখ করেন। তবে আপত্তি-আন্দোলন নিয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
শাহনাজ বাবু তাঁর সংক্ষিপ্ত ভাষণের শুরুতেই উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের চারজনের দলে তিনিই একমাত্র মুসলমান। সে সবে কিছু যায়-আসে না। কারণ লোকসঙ্গীত বা লোকশিল্প মানুষ খোঁজে, হিন্দু-মুসলমান নয়। ভূপতি ভূষণ বর্মার কথায়, বাংলাদেশে এখন অস্থির সময়। কিন্তু লোকগীতি প্রশিক্ষণের আমন্ত্রণ পেয়ে সব ভুলে যান। তিনি বলেন, ‘মনে হল, লোকশিল্পীদের আবার কীসের ভারত আর বাংলাদেশ। শুধু দুই দেশের নিয়ম মেনে সীমান্ত পেরনো, ওই যা।’
কর্মশালার ভাবনা ধীরে ধীরে লোপ পাচ্ছে বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেন বাংলাদেশের শিল্পী অনিতা মুক্তি। তিনি বলেন, সব দেশে এক হাল। সবাই এখন শুরুতেই মঞ্চে গাইতে চান। টিভির পর্দায় নিজেকে দেখাতে চান, আর প্রতিযোগিতায় সেরা হতে চান। লোকসঙ্গীত হলে কথাই নেই। অনেকের ধারণা, এর আবার প্রশিক্ষণ কী! অনিমাদেবীর কথায়, আসলে অন্যান্য সঙ্গীতের তুলনায় লোকসঙ্গীতই বেশি কঠিন।
আপত্তি, হুমকি উপেক্ষা করেই প্রশিক্ষণ স্থলে আজ এই অঞ্চলের প্রতিষ্ঠিত লোকসঙ্গীত শিল্পীদের অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
হাজির হন প্রশিক্ষার্থীরাও। লোকমঞ্চ সূত্রে জানা গিয়েছে, তিন জেলার মোট ৬২ প্রশিক্ষার্থী নাম লিখিয়েছিলেন। তাঁরা সবাই উপস্থিত রয়েছেন তিনদিনের কর্মশালায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy