ভয়াবহ আগুন জ্বলে উঠেছিল সংসদ ভবন চত্বরে। আকাশ ছেয়ে গিয়েছিল কালো ধোঁয়ায়। ছবি: প্রেম সিংহ।
শুক্রবারই বাজেট অধিবেশনের প্রথম পর্ব শেষ হয়েছে। জমি বিল থেকে শুরু করে রাহুল গাঁধীর উপর নজরদারি রাজনৈতিক উত্তাপের অভাব ছিল না। অগ্নিকাণ্ডটা ঘটল রবিবার ভরদুপুরে। সংসদ চত্বরের মধ্যেই জ্বলল ভয়াবহ আগুন। গোটা আকাশ ছেয়ে গেল কালো ধোঁয়ায়।
সংসদ চত্বরের মতো ‘হাই সিকিউরিটি জোন’-এ এই ধরনের অগ্নিকাণ্ডে স্বাভাবিক ভাবেই নড়েচড়ে বসেছে কেন্দ্রীয় সরকার। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে দমকলের দশটি ইঞ্জিন আগুন নিভিয়ে ফেলে ঠিকই। কিন্তু অধিবেশন চলাকালীন আগুন লাগলে কী হতো, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকেই কাছে ২০০১-এর সংসদ হামলার স্মৃতিও ফিরিয়ে এনেছে এই আকস্মিক অগ্নিকাণ্ড।
৮৮ বছরের পুরনো এই সংসদ ভবন দিল্লির অন্যতম হেরিটেজ ভবন। পাশেই নর্থ ব্লক। যেখানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ও অর্থ মন্ত্রকের দফতর। ঢিল ছোড়া দূরত্বে রাষ্ট্রপতি ভবন, সাউথ ব্লক, রেল ভবনের মতো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক দিল্লি পুলিশ, দিল্লি দমকল বাহিনী, কেন্দ্রীয় পূর্ত দফতর এবং নয়াদিল্লি পুরসভার কাছে এ দিনের ঘটনা নিয়ে জরুরি রিপোর্ট তলব করেছে। অভিযোগ উঠেছে সংসদ ভবনে সব সময় মোতায়েন থাকে যে দমকল, তার ইঞ্জিনে আজ জল ছিল না। এই নিয়েও রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
আজ বেলা সওয়া দু’টো নাগাদ হঠাৎই সংসদ চত্বরের একটি এসি প্ল্যান্টে আগুন ধরে যায়। সংসদের অভ্যর্থনা কক্ষের কাছেই, রেল ভবনের দিকে সংসদ চত্বরের সীমানা প্রাচীরের ধারে ওই প্ল্যান্টটিতে মেরামতির কাজ চলছিল। সে সময়ই ওয়েল্ডিং মেশিন থেকে আগুন ধরে যায় বলে প্রাথমিক ভাবে দমকল কর্তাদের ধারণা। রবিবার ছুটির দিন। অধিবেশনেরও বিরতি চলছে। তাই সংসদ ভবনে উপস্থিতি বা গাড়ির সংখ্যা তেমন ছিল না। তাই গাড়ি রাখার জায়গার পাশেই অগ্নিকাণ্ড ঘটলেও কোনও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। সংসদ চত্বরে সব সময় দমকলের একটি ইঞ্জিন থাকে। সেটি দিয়ে প্রথমে আগুন নেভানোর চেষ্টা হয়। লাভ না হওয়ায় রাকাবগঞ্জ ও কনট প্লেসের দমকল কেন্দ্র থেকে দশটি ইঞ্জিন আনা হয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও বহুক্ষণ ধরে সংসদ ভবনের আকাশ ধোঁয়ায় ঢেকে ছিল।
গোটা ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। তাঁর মতে, জরুরি ভিত্তিতে এর তদন্ত প্রয়োজন। রাষ্ট্রপতির বক্তব্য, “সব সময় সংসদ চত্বরের সম্পূর্ণ সুরক্ষা ও নিরাপত্তা রক্ষা প্রয়োজন।” সাংসদরাও মনে করছেন, কতখানি আগুন লেগেছে, তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হল কোথায় আগুন লেগেছে। কেননা, অধিবেশন চলাকালীন রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্যরা ছাড়াও এখানে উপস্থিত থাকেন সাংসদরা। সংসদ ভবনে রয়েছে অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ অমূল্য নথি। ফলে এই ধরনের আগুন লাগলে আতঙ্ক ছড়িয়ে দুর্ঘটনা ঘটার যথেষ্ট সম্ভাবনা যেমন থাকে তেমনি অপূরণীয় ক্ষতি হওয়ার উদ্বেগও থেকে যায়। এ জন্যই সংসদের মূল ভবনের ক্যান্টিনে আগেই রান্নার গ্যাসের ব্যবহার বন্ধ করা হয়েছে। সংসদ চত্বরের লাইব্রেরি ভবনের ক্যান্টিনে রান্না করে এখন খাবার নিয়ে আসা হয় সংসদ ভবনে। মহারাষ্ট্র সচিবালয়ের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে এই পদক্ষেপ করা হয়েছিল। কিন্তু এর পরেও আজকের অগ্নিকাণ্ড ভাবিয়ে তুলছে সবাইকেই। দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত শুরু হয়েছে। যুগ্ম কমিশনার (নয়াদিল্লি) এম কে মীনা বলেন, “কারণ এবং গোটা পরিস্থিতির তদন্ত হবে। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” দিল্লির দমকল বাহিনীর প্রধান এ কে শর্মা বলেন, “আমরা ২টা ২১ মিনিটে আগুন লাগার খবর পাই। দু’টি হাইড্রলিক প্ল্যাটফর্ম-সহ ১০টি ইঞ্জিন পাঠানো হয়। ২টো ৪০ মিনিটের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ২টো ৫০ মিনিটে আগুন পুরোপুরি নিভিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়।” তাঁর বক্তব্য, ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করার সময় গাফিলতির জন্যই আগুন ধরে গিয়েছিল বলে মনে করা হচ্ছে। তিনি জানান, এসি প্ল্যান্টে দু’টি কুলিং ট্যাঙ্কের পাশে প্লাস্টিক জাতীয় জিনিসে আগুনে জ্বলছিল বলেই আকাশ কালো ধোঁয়ায় ঢেকে গিয়েছিল। এসি প্ল্যান্টে আগুন ধরে যাওয়ায় আজ সংসদ ভবনের একাংশে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নষ্ট হয়েছে। ওই প্ল্যান্টটি নতুন করে তৈরি করতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy