নয়াদিল্লি স্টেশনে তড়িদাহত হয়ে মৃত সাক্ষী আহুজা। ছবি: সংগৃহীত।
নয়াদিল্লি রেলস্টেশনে রবিবার ভোরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে সাক্ষী আহুজার। বৃষ্টিভেজা স্টেশনে বিদ্যুতের খুঁটি স্পর্শ করতেই তিনি তড়িদাহত হন। চোখের সামনে তাঁকে ছটফট করতে করতে মরতে দেখেছেন সাক্ষীর বাবা লোকেশ কুমার চোপড়া। সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকারে রেলের পরিষেবার বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন তিনি।
লোকেশ জানিয়েছেন, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার পর মেয়েকে নিয়ে ঠিক সময়ে হাসপাতালে পৌঁছতে পারেননি তাঁরা। স্টেশন চত্বর থেকে বেরোতেই কেটে গিয়েছে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট। কোথাও কোনও অ্যাম্বুল্যান্স, চিকিৎসক বা প্রাথমিক চিকিৎসার বন্দোবস্ত ছিল না। স্টেশনের মুখে সারে সারে গাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল। তাই সেখান থেকে হাসপাতালে যেতে অনেক সময় চলে যায়। তখনই লোকেশ বুঝে গিয়েছিলেন, মেয়ে আর নেই।
পূর্ব দিল্লির প্রীত বিহার এলাকার বাসিন্দা সাক্ষী ছিলেন স্কুলশিক্ষিকা। রবিবার সকালে দিল্লি থেকে সপরিবারে তিনি চণ্ডীগড় যাচ্ছিলেন। সঙ্গে ছিল তাঁর ন’বছরের পুত্র এবং সাত বছরের কন্যা। সাক্ষীর মৃত্যু হয়েছে বুঝতে পেরেও তাঁর সন্তানদের সামনে মুখ ফুটে সে কথা বলতে পারেননি লোকেশ। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা সাক্ষীকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
লোকেশের কথায়, ‘‘রেলের তরফে আমাদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কিছুই হয়নি এখনও। আমাদের এই সিস্টেমের কোনও পরিবর্তন হচ্ছে না। আমরা বন্দে ভারতের মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ট্রেন চালু করছি, কিন্তু স্টেশনে ঠিক মতো পরিষেবা দিতে পারছি না।’’ ঘটনাচক্রে, মঙ্গলবারই আরও পাঁচটি নতুন রুটে বন্দে ভারত ট্রেনের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
লোকেশ জানান, দিল্লি স্টেশনে এর আগেও এমন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। স্টেশনের শ্রমিকেরাই সে কথা জানিয়েছেন। কিন্তু অভিযোগ, রেলের তরফে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। লোকেশের প্রশ্ন, ‘‘কেন এমনটা হবে? কেন স্টেশনে খোলা তার পড়ে থাকবে? কেন সংবাদমাধ্যমে প্রচার না পেলে কাজের কাজ হবে না? আমরা কোনও টাকাপয়সা চাই না। এই ঘটনার নেপথ্যে যাঁরা দায়ী, আমরা তাঁদের শাস্তি চাই।’’
রবিবার বৃষ্টির কারণে দিল্লি স্টেশনের বিভিন্ন জায়গায় জল জমে গিয়েছিল। সেই জমা জল থেকে বাঁচতেই মালপত্র নিয়ে সাক্ষী একটি বিদ্যুতের খুঁটি স্পর্শ করেন। সাক্ষীর জানা ছিল না, সেই খুঁটিরই একটি অংশে লেগে রয়েছে বিদ্যুতের একটি ছেঁড়া তার। খুঁটি স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গে তিনি তড়িদাহত হন। তাঁর বাবা বলেছেন, ‘‘আমি গাড়ি দাঁড় করাচ্ছিলাম। তাই মেয়েকে ব্যাগপত্র নিয়ে এগিয়ে যেতে বলি। ৪৪০ ভোল্টের হাই-টেনশন তার খোলা পড়েছিল সেখানে। ২.৫ কিলোমিটার দূরের হাসপাতালে পৌঁছতে আমাদের এক ঘণ্টা লেগে গিয়েছিল। আমি সেখানেই বুঝতে পেরেছিলেন, মেয়ে আর নেই। ওর শ্বাস বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ছোট বাচ্চাদের সামনে কিছু বলতে পারিনি।’’
স্টেশনে সর্বদা অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা মজুত রাখা উচিত বলে জানিয়েছেন লোকেশ। জরুরি পরিস্থিতির জন্য চিকিৎসকেরও থাকা উচিত। রেলের তরফে জানানো হয়েছে, এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে তারা। একটি কমিটি গঠন করে কী থেকে দুর্ঘটনা ঘটল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যাঁরা দোষী, তাঁদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy