হোয়ট্অ্যাপে ছড়িয়ে পড়েছে এই মেসেজ
কী ছড়িয়েছে:
একটি মেসেজ, যেখানে বলা হচ্ছে বিপর্যয় মোকাবিলা আইন অনুযায়ী সোশ্যাল মিডিয়াতে করোনাভাইরাস অতিমারি নিয়ে কোনওরকম মেসেজ শেয়ার করা বেআইনি। কোনও সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে কোনও রকম তথ্য আদান প্রদান করা যাবে না। এই ধরনের কোনও রকম তথ্যের আদান প্রদান৬৮, ১৪০এবং১৮৮ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং গ্রুপ অ্যাডমিনকে এই ধারায় গ্রেফতার করা হবে।
কোথায় ছড়িয়েছে?
কিছুদিন হল হোয়াটস্অ্যাপে ঘুরছে এমনই একটি মেসেজ। কখনও ইংরেজিতে, আবার কখনও তার বাংলা তর্জমা।
হোয়াটস্অ্যাপে ভাইরাল হওয়া মেসেজগুলি
এই তথ্য কি সঠিক?
না। এই মেসেজের বক্তব্য ঠিক নয়। করোনাভাইরাস নিয়ে তথ্য আদান প্রদান দণ্ডনীয় অপরাধ নয়।
সত্যি কী? আনন্দবাজার কী ভাবে যাচাই করল?
গত ২৪ মার্চ রাত আটটায় জাতির উদ্দেশে বার্তায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২১ দিনের লকডাউন ঘোষণা করেন। ওই দিন রাতেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ২০০৫ সালের বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের ৬ ধারার ২ (আই) অনুচ্ছেদ বলবৎ করে।কেন্দ্র ও রাজ্যের সমস্ত বিভাগকে এই আইন কার্যকর করতে বলে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের ২৪ মার্চের সেই বিজ্ঞপ্তি
কী বলছে বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের ৬ (২)(আই) অনুচ্ছেদ?
এই আইন অনুযায়ী সাধারণ মানুষের ঘরের বাইরে বেরনোর উপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও পরিষেবা ছাড়া সমস্ত অফিস, কারখানা, দোকানপাট বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। করোনাভাইরাসের গোষ্ঠী সংক্রমণ ঠেকাতে এই আইন প্রয়োগ করা হয়। এই অনুচ্ছেদে কোনও সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে রকম তথ্য আদান প্রদানের বিষয়ে কিছু বলা নেই।
বিপর্যয় মোকাবিলা আইন ২০০৫ এর ৬(২)(আই) অনুচ্ছেদ
এ বার আসা যাক ওই হোয়াটস্অ্যাপ মেসেজের শেষের অংশে। মেসেজটিতে ৬৮, ১৪০ এবং ১৮৮ ধারার কথা বলা হয়েছে। বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের ৬৮ ধারায় এই আইন সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশ অনুমোদনের বিষয়ে বলা হয়েছে।এখানে শাস্তির কোনও উল্লেখ নেই।
বিপর্যয় মোকাবিলা আইন ২০০৫ এর ৬৮ ধারা
বিপর্যয় মোকাবিলা আইনে সব মিলিয়ে রয়েছে ৭৯টি ধারা, তাই ১৪০ বা ১৮৮ ধারার ব্যাপারটাও ঠিক নয়।
অনেকের মনে হতেই পারে ভারতীয় দণ্ডবিধিতে এই ধারাগুলি তো রয়েছে। কিন্তু সেই ধারাগুলিতে সোশ্যাল মিডিয়া মেসেজ ছড়ানোর ক্ষেত্রে কোনও সাজার কথা বলা আছে কি?
ভারতীয় দণ্ডবিধি বা ফৌজদারি আচরণ বিধি, কোনওটির ১৪০ নম্বর ধারাই এই সংক্রান্ত বিষয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। পড়ে থাকল ১৮৮ নম্বর ধারাটি। ভারতীয় দণ্ডবিধির এই ধারাটিও সোশ্যাল মিডিয়ায় তথ্য আদান প্রদানের ক্ষেত্রে কোনও বিধি নিষেধের কথা বলে না।
তা হলে শাস্তি কখন হতে পারে?
বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের ৫৪ নম্বর ধারায় শাস্তির কথা বলা আছে।
বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের ৫৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী, আতঙ্ক তৈরি করতে পারে, কেউ বিপর্যয় সংক্রান্তএমন কোনও ভুয়ো তথ্য ছড়ালে তা দণ্ডনীয় অপরাধ হবে। সে ক্ষেত্রে এক বছর পর্যন্ত জেল অথবা জরিমানা অথবা দুটোই হতে পারে।
বিপর্যয় মোকাবিলা আইন ২০০৫ এর ৫৪ ধারা
এই ক্ষেত্রে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০৫ ধারার ১(বি) অনুযায়ীও আপনার বিরুদ্ধে মামলা রুজু হতে পারে।
ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০৫ ধারার ১(বি) অনুচ্ছেদ বলে কেউ যদি কোনও ব্যক্তিকে আতঙ্কিত করার চেষ্টা করেন, কোনও গোষ্ঠীকে আতঙ্কিত করেন, বা এমন কোনও অপরাধে ইন্ধন জোগান যার ফলে সমাজের সম্প্রীতি নষ্ট হয় বা রাষ্ট্র ব্যবস্থার উপর আঘাত আসে, তবে এই ধারায় অভিযুক্ত করা হবে। দোষী ব্যক্তির ছ’বছর পর্যন্ত জেল এবং জরিমানা হতে পারে।
ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০৫ (১)(বি) যা বলছে
আমরা এই বিষয়ে কলকাতা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ), মুরলিধর শর্মা ফেক নিউজ প্রসঙ্গে বলেন,‘‘ভুয়ো খবর বা তথ্য ছড়ালে আমরা কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছি। ইতিমধ্যেই একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্ত কী উদ্দেশ্যে এবং কী ধরনের ভুয়ো খবর ছড়াচ্ছেন তার উপর নির্ভর করছে কোন আইনে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।” তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘কেউ যদি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে অশান্তি ছড়াতে বা সাম্প্রদায়িক বিভেদ তৈরি করতে কোনও ভুয়ো খবর ছড়ান এবং তার ফলে যদি সরকারি কর্মীদের উপর হামলা হওয়ার সম্ভবনা তৈরি হয়, তা হলে তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৫৩, ১৫৩এ, ২৯৫এ ধারায় মামলা করা হচ্ছে। অন্য ক্ষেত্রে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০৫(১)(বি) ধারায় মামলা করা হচ্ছে।”
যে হেতু বিপর্যয় মোকাবিলা আইন অনুযায়ী লকডাউন চলছে, এই সময়ে বাড়ির বাইরে বেরোলে আপনি পড়তে পারেন ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৮৮ ধারার আওতায়। এই ধারা অনুযায়ী, কেউ যদি সরকারের বলবৎ করা কোনও আইন অমান্য করেন এবং তাতে সাধারণ মানুষের বিপদ, স্বাস্থ্যহানি কিংবা প্রাণ হানি হতে পারে, সে ক্ষেত্রে দোষী ব্যক্তির এক থেকে ছ’মাস পর্যন্ত জেল অথবা দু’শো টাকা জরিমানা অথবা উভয়ই হতে পারে।
হোয়াটস্অ্যাপ, ফেসবুক, টুইটারে যা-ই দেখবেন, তা-ই বিশ্বাস করবেন না। শেয়ারও করে দেবেন না। বিশেষত এই আতঙ্কগ্রস্ত অবস্থায় তো তো নয়ই। এ ভাবেই ছড়িয়ে পড়ে ভুয়ো খবর। যাচাই করুন। কোনও খবর, তথ্য, ছবি বা ভিডিয়ো নিয়ে মনে সংশয় দেখা দিলে আমাদের জানান এই ঠিকানায় feedback@abpdigital.in
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy