Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Shivnath Thukral

ফেসবুকে কি ফের এক ‘বিজেপিপন্থী’ 

এই পুরো ঘটনায় অভিযোগের বন্দুক আগাগোড়া সব থেকে বেশি তাক করা থেকেছে আঁখির দিকে।

শিবনাথ ঠুকরাল। ছবি সংগৃহীত।

শিবনাথ ঠুকরাল। ছবি সংগৃহীত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২০ ০৪:৫৯
Share: Save:

ভারতে ফেসবুকের নেতৃত্বের টিমে বদল তথা আঁখি দাসের পদত্যাগকে স্বাগত জানাল কংগ্রেস। তবে একই সঙ্গে তাদের দাবি, রাজনৈতিক নিরপেক্ষতার অভাব আর বিজেপির সঙ্গে ‘গোপন’ আঁতাতের অভিযোগের যে কালি আমেরিকার ওই তথ্যপ্রযুক্তি বহুজাতিকের গায়ে লেগেছে, তা শুধু ওই এক জনকে ‘সরিয়ে’ মুছে ফেলা যাবে না। তাই এ দেশে সংস্থাটির প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ম-কানুন ও পরিচালন পদ্ধতির আমূল বদল চেয়েছে তারা। যদিও কর্পোরেট দুনিয়ায় গুঞ্জন, ফেসবুকের ভারতীয় শাখায় পাবলিক পলিসির প্রধান হিসেবে আঁখির সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে যাঁর নাম শোনা যাচ্ছে, সেই শিবনাথ ঠুকরালের নিরপেক্ষতা নিয়েও নাকি প্রশ্ন যথেষ্ট।

২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে সমালোচনাকারী ৪৪টি ফেসবুক পেজের নাম তুলে ধরেছিল বিজেপি। অভিযোগ, তার মধ্যে ১৪টিকে (৩২%) বন্ধ করে দেওয়া হয়। অথচ ফিরিয়ে আনা হয় বিজেপির প্রচারে সহায়ক ‘অভিযুক্ত’ ১৭টি পেজকে! এ জন্য আঁখির পাশাপাশি আঙুল উঠেছিল শিবনাথ ঠুকরালের দিকে। যিনি এখন হোয়াটসঅ্যাপের পাবলিক পলিসির কর্তা। অনেকের মতে, আঁখির থেকেও জোরালো ‘বিজেপিপন্থী’ তিনি। জোর গুঞ্জন, ফেসবুকে আঁখির উত্তরসূরি হিসেবে নাকি এই ঠুকরালকেই বেছে নিতে পারে ফেসবুক। কংগ্রেসের আগাম আশঙ্কা কি সেই কারণেই?

মঙ্গলবার ফেসবুক ছাড়ার কথা ঘোষণা করেছেন আঁখি। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, ফেসবুকের ব্যবসায়িক স্বার্থে বিজেপির সঙ্গে ‘গোপন’ আঁতাঁতের। সরকারকে না-চটাতে বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে ‘বিদ্বেষ রোধ নিয়ম’ প্রয়োগে বাধা দেওয়ার। আবার কখনও ভোটে নরেন্দ্র মোদীর বিপুল জয়ে তিনি মুক্তকণ্ঠে উচ্ছ্বসিত। আমেরিকার সংবাদমাধ্যমকে উদ্ধৃত করেই কংগ্রেস, তৃণমূল-সহ বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, বিজেপি নেতাদের বিদ্বেষমূলক লেখা-ছবি-ভিডিয়ো (কনটেন্ট) সরিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে শিথিলতা দেখাতেন আঁখি। অথচ হিংসায় ইন্ধনের অজুহাতে সরকার-বিরোধী অনেক পেজ মুছে দেওয়া হত ফেসবুক থেকে। হোয়াটসঅ্যাপেও ঘটত এমনটা। বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছিল, অনলাইন কেনাকাটার বাজারে টাকা মেটানোর মাধ্যম হয়ে উঠতে মার্ক জ়াকারবার্গের সংস্থা শাসক দলের সঙ্গে গোপন বোঝাপড়ার পথে হাঁটছে।

এই পুরো ঘটনায় অভিযোগের বন্দুক আগাগোড়া সব থেকে বেশি তাক করা থেকেছে আঁখির দিকে। অনেকে মনে করিয়েছেন, জেএনইউয়ের প্রাক্তনী হলেও, সঙ্ঘের প্রতি আঁখির নিজের পরিবারের একাংশের টান সর্বজনবিদিত। কর্পোরেট কেরিয়ারে একের পর এক সিঁড়ি হেলায় উঠে গিয়েছেন আঁখি। মাইক্রোসফটের পাবলিক পলিসির দায়িত্ব সামলে ২০১১ সালে ফেসবুকে যোগ দেওয়ার পর থেকেই তাঁর অন্যতম দায়িত্ব ছিল সরকারের সঙ্গে সংস্থার সম্পর্ক মসৃণ রাখা। বিরোধীদের অভিযোগ, তা করতে গিয়ে সরকার-সংস্থার পেশাদার সম্পর্ক কার্যত আঁতাঁতের পর্যায়ে চলে গিয়েছে। তেমনই সরকারি শিবির আবার বলেছে যে, আঁখি কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারে মন্ত্রী থাকা রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের পুত্রবধূ। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্কও আপাত ভাবে যথেষ্ট ‘উষ্ণ’ ছিল।

বিভিন্ন রাজনৈতিক শিবিরে এমন নিবিড় যোগ থাকা আঁখির ভবিষ্যৎ ঘিরে জল্পনার মৌচাকেও ঢিল পড়েছে গত কাল। ফেসবুক জানিয়েছে, জনসেবায় সময় দিতেই চাকরি ছাড়লেন তিনি। ফলে দানা বেঁধেছে প্রশ্ন, এ বার কি তবে নতুন অবতারে রাজনৈতিক নেত্রী? তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের সোজাসাপ্টা টুইট-জিজ্ঞাসা, ২০২১ সালে বাংলার বিধানসভা ভোটে কি আঁখিকে টিকিট দেবে বিজেপি?

অন্য বিষয়গুলি:

Shivnath Thukral Ankhi Das Facebook BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE