Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
National News

‘দেশে হিংসা ক্রমশ বাড়ছে, তার থেকে সরে আসতে হবে,’ আরএসএসের মঞ্চে বার্তা প্রণবের

বিকেল ৪টে নাগাদ গভর্নর কোঠি থেকে রওনা দেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। প্রথমে তিনি যান হেডগেওয়ার স্মারকে।

মঞ্চে ভাষণ দিচ্ছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়।—নিজস্ব চিত্র।

মঞ্চে ভাষণ দিচ্ছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নাগপুর শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৮ ১৬:৩৮
Share: Save:

দেশে হিংসা বাড়ছে। তা থেকে সরে আসতে হবে। আরএসএসের মঞ্চে গিয়ে এই বার্তা দিলেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি তথা প্রবীণ কংগ্রেস নেতা প্রণব মুখোপাধ্যায়ের। পাশাপাশি এটাও বুঝিয়ে দিলেন, এক ধর্ম এক ভাষা ভারতের ভিত্তি নয়। ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করে ভারত।

আরএসএস-এর প্রশিক্ষণ সমাপ্তি সমারোহে প্রণববাবুর যোগ দেওয়া নিয়ে জল্পনা চলছিল বেশ কিছু দিন ধরেই। আলোচনা চলছিল, আজীবন সঙ্ঘবাদের বিপক্ষে বলে যাওয়া প্রণববাবু কী বলবেন সঙ্ঘের অনুষ্ঠানে গিয়ে তা নিয়েই। অবশেষে এল সেই বহুপ্রতীক্ষিত ক্ষণ। বৃহস্পতিবারে সমাপ্তি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রণববাবু বলেন, ‘‘এ দেশের বহুত্ববাদের ঐতিহ্যকে আমরা শ্রদ্ধা করি। বিভেদ, হিংসা, বিবাদ মানবতা বিরোধী। এ দেশের বহুত্ববাদের ঐতিহ্যকে আমরা শ্রদ্ধা করি।’’

এ দিন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘‘গণতন্ত্র উপহার নয়, একটা দায়িত্ব। সহাবস্থানই ভারতের বৈশিষ্ট্য এবং ধর্ম।’’ যদিও, গণতন্ত্র-বহুত্ববাদের প্রসঙ্গেই কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীর মত, ‘‘এ সব কথা প্রণববাবু আগেও বলেছেন বারবার। তবে, আরএসএসের মঞ্চে যোগ না দিলেই পারতেন।’’

বিকেল ৪ টে নাগাদ গভর্নর কোঠি থেকে রওনা দেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। সঙ্ঘের প্রথামাফিক বেশ কয়েকটি কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার পর রেশিম বাগ ময়দানে পৌঁছন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি।

সঙ্ঘের অনুষ্ঠানে যোগ দিলেও সঙ্ঘের বিভিন্ন প্রথা প্রণব মুখোপাধ্যায় অনুসরণ করবেন কি না, তা নিয়ে কোনও কোনও মহলে সংশয় ছিল। তবে সংশয়ের নিরসন ঘটিয়ে প্রথামাফিকই এগিয়েছেন প্রণববাবু।

আরএসএস-এর সভায় যা বললেন প্রণব—

ধন্যবাদ, জয় হিন্দ, বন্দেমাতরম বলে ভাষণ শেষ করেন প্রণববাবু।

‘দেশ থেকে হিংসা-ঘৃণা দূর করতে হবে। এখন হিংসা ক্রমশ বাড়ছে। তার থেকে সরে আসতে হবে।’

‘বিভেদ ঘোচাতে আলোচনাই একমাত্র পথ।’

‘এক ধর্ম এক ভাষা ভারতের ভিত্তি নয়।’

‘আমি ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করি।’

‘বিভেদ, হিংসা, বিবাদ মানবতাবিরোধি।’

‘ভারতীয় সভ্যতা ৭ হাজার বছর ধরে ধারাবাহিক।’

‘এই সময়ে চাণক্য লিখেছিলেন অর্থশাস্ত্র।’

‘১৮০০ বছর ধরে ভারত ছিল বিশ্বের কাছে শিক্ষাকেন্দ্র।’

‘বিভিন্ন সংস্কৃতি এবং বিশ্বাস আমাদের দেশকে অদ্বিতীয় করে তুলেছে।’

‘এ দেশের বহুত্ববাদের ঐতিহ্যকে আমরা শ্রদ্ধা করি।’

‘গণতন্ত্র উপহার নয়, একটা দায়িত্ব। সহবস্থানই ভারতের বৈশিষ্ট্য এবং ধর্ম।’

‘আর্থিক ক্ষেত্রে অনেকটা এগোচ্ছি, তবে সুখের সূচকে আমরা বিশ্বের মধ্যে অনেকটাই নীচে, ১৩৩ নম্বরে।’

‘সর্বজনীনতা থেকে শক্তি অর্জন করে ভারতীয় জাতীয়তাবাদ।’

‘যখনই কোনও মহিলা বা শিশু যন্ত্রণায় কাতরায়, তখনই দেশের আত্মা ক্ষতবিক্ষত হয়।’

‘ঘৃণা জাতীয়তাবাদের পরিপন্থী।’

‘সাংবিধানিক দেশপ্রেমই জাতীয়তাবাদ।’

‘আমরা বহুত্ববাদ উদ্‌যাপন করি। সহিষ্ণুতাই আমাদের শক্তির মূল উৎস।’

‘জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ— এই বৈচিত্র নিয়েই আমাদের দেশ।’

বসুধৈব কুটুম্বকম, বহুত্ববাদের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন প্রণববাবু।

‘দেশ, জাতীয়তাবাদ এবং দেশপ্রেম বর্তমান ভারতের পরিপ্রেক্ষিতে এই তিনটি বিষয় ব্যাখ্যা করতেই আমি এখানে এসেছি।’

মঞ্চে ভাষণ দিতে এলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়।

আমাদের মধ্যে বৈচিত্র রয়েছে, কিন্তু আমরা সকলে ভারতমাতার সন্তান।

মঞ্চে ভাষণ দিচ্ছেন মোহন ভাগবত।—নিজস্ব চিত্র।

কেউ আমাদের কাছে অস্পৃশ্য নয়। কেউ আমাদের শত্রু নয়।

প্রাক্তন রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানালেন মোহন ভাগবত্। তাঁর আসা নিয়ে যে বিতর্ক, সমালোচনা করলেন তার।

আমাদের কাছে কেউ ব্রাত্য নয়। সঙ্ঘ সবাইকে নিয়ে চলতে চায়।

প্রথা ভাঙল সঙ্ঘ, মোহন ভাগবত্ ভাষণ দিলেন প্রণবের আগেই।

প্রণবের নাগপুর সফর ঘিরে বিতর্কের সমালোচনা ভাগবতের।

হেডগেওয়ার স্মৃতি মন্দিরে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। ছবি: টুইটারের সৌজন্যে।

এই অনুষ্ঠানে আমরা ভারতের বিশিষ্ট নাগরিকদেরই আমন্ত্রণ জানাই, এটাই আমাদের প্রথা।

মঞ্চে বসে ফুটবলার কল্যাণ চৌবে (কালো প্যান্ট পরে মাঝখানে)।—নিজস্ব চিত্র।

মঞ্চে চলছে অমৃতবচন। এর পরেই ভাষণ দেবেন প্রণববাবু।

‘আরএসএস-এর সদর দফতরে প্রণবদার মতো প্রবীণ এবং প্রাজ্ঞ নেতার ছবি দেখে ক্ষুব্ধ হয়েছেন অগনিত কংগ্রেস কর্মী, যাঁরা ভারতীয় গণতন্ত্রে বহুত্ববাদের মতো মৌলিক মূল্যবোধের উপর আস্থা রাখেন।’—কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মার টুইট।

প্রণব আসতেই আরএসএস-এর পতাকা উত্তোলন করা হল।

রেশিম বাগের মঞ্চে এলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়।

হেডগেওয়ার স্মারক থেকে সরাসরি রেশিম বাগ ময়দানে অনুষ্ঠানমঞ্চে পৌঁছছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গেই মঞ্চে রয়েছেন মোহন ভাগবত এবং সঙ্ঘের আরও কয়েক জন শীর্ষ নেতা।

মধুকর ভবনে থেকে হেডগেওয়ার স্মারকে যান প্রণববাবু।

চা-চক্রের ফাঁকে সঙ্ঘের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে প্রণব মুখোপাধ্যায়কে আলাপ করিয়ে দেন সরসঙ্ঘচালক মোহনরাও ভাগবত।

মধুকর ভবনে প্রণববাবুর জন্য চা-চক্র আয়োজিত হয়।

“ভারতমাতার এক মহান সন্তান কে বি হেডগেওয়ারকে শ্রদ্ধা ও সম্মান জানাতে আজ এখানে এসেছি।” আরএসএস প্রতিষ্ঠাতা হেডগেওয়ারের বাসভবনে গিয়ে ভিজিটর্স বুকে লিখলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়।

হেডগেওয়ারের বাসভবন পরিদর্শন সেরে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি পৌঁছন মধুকর ভবনে।

আরও পড়ুন
জলে টইটম্বুর প্রণবের মাঠ, খরার বিদর্ভ বলছে ‘আশীর্বাদ’

প্রণব মুখোপাধ্যায়কে স্বাগত জানাচ্ছেন মোহন ভাগবত। ছবি: টুইটার সৌজন্যে।

হেডগেওয়ারের বাসভবনে প্রণবকে স্বাগত জানান ভাগবত।

হেডগেওয়ার স্মৃতি মন্দিরে প্রণব। ছবি: টুইটারের সৌজন্যে।

গভর্নর কোঠি থেকে বেরিয়ে প্রথমে প্রণব মুখোপাধ্যায় যান চিটনিস পার্ক এলাকায় কে বি হেডগেওয়ারের বাসভবন দেখতে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE