ফাইল চিত্র।
‘ত্যায়নু দিল্লিয়ে নি জিততে পঞ্জাব চল্লেয়া’…
দিল্লির সীমানা থেকে কৃষকরা পঞ্জাবের গ্রামের দিকে রওনা হয়েছেন। সঙ্গে বড় বড় সাউন্ডবক্সে গান বেজে চলেছে। দিল্লি জয়ের পরে পঞ্জাব রওনা। কিন্তু পঞ্জাব কে জিতবে?
এক বছর কৃষক আন্দোলন থেকে একটাই স্বর উঠছে। অন্তত আপাতত। আর যে-ই হোক, বিজেপি নয়। কিন্তু অন্য কেউটা কংগ্রেস না অকালি, না কি আম আদমি পার্টি, সেখানেই হেঁয়ালি ঘুরপাক খাচ্ছে।
দিল্লির সীমানায় এক বছর থেকে কৃষকদের অনেকেরই মত, এক বার আম আদমি পার্টিকে ভোট দিয়ে দেখা যেতে পারে। পঞ্জাব থেকে দিল্লির সীমানায় এসে আন্দোলনে বসা কৃষকদের জন্য দিল্লির কেজরীবাল সরকার ও আম আদমি পার্টির নেতারা নীরবে নানা সুযোগসুবিধার বন্দোবস্ত করেছেন। তাতে কাজ হয়েছে। কিন্তু কৃষকদের অনেকের মত, কেজরীবালকে ভোট দিতে গিয়ে সেই বিজেপি না পঞ্জাবে জাঁকিয়ে বসে। এবিপি নিউজ-সি ভোটারের সমীক্ষায় আজ ইঙ্গিত, পঞ্জাবে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে আম আদমি পার্টি উঠে আসতে পারে।
তাঁর দলের মুখ্যমন্ত্রীর মুখ কে হবেন, অরবিন্দ কেজরীবাল এখনও তা ঘোষণা করেননি। পঞ্জাবের রাজনীতিতে জোর জল্পনা, তিনি কৃষক আন্দোলনের কোনও নেতাকে মুখ্যমন্ত্রীর পদপ্রার্থী ঘোষণা করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে কেন্দ্র, রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ, কৃষক আন্দোলন—সব কিছুরই ফায়দা আম আদমি পার্টির ঝোলায় অনেকাই যেতে পারে বলে জল্পনা।
বিজেপির সবথেকে পুরনো শরিক শিরোমণি অকালি দল তিন কৃষি আইনের প্রতিবাদে বহু দিনের সঙ্গ ত্যাগ করে এনডিএ ছেড়েছিল। অকালি নেত্রী হরসিমরত কৌর বাদল মোদী মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন। মোদী সরকার তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের পরে বিজেপির ছোঁয়া পুরোপুরি মুছে ফেলে শিরোমণি অকালি দল পঞ্জাবের ভোটে নামতে চাইছে। অমরেন্দ্র সিংহকে সরিয়ে কংগ্রেস দলিত নেতা চরণজিৎ সিংহ চন্নীকে মুখ্যমন্ত্রী করেছে। অকালি নেত্রী হরসিমরতের দাবি, তাঁরা মায়াবতীর বিএসপি-র সঙ্গে আসন সমঝোতা করেছেন বলে কংগ্রেসও দলিত কার্ড খেলছে। কিন্তু পঞ্জাবে জাতপাতের রাজনীতিতে লাভ হবে না। এ কথা বলেও সেই জাতপাতের তাস খেলতেই আজ অকালি ঘোষণা করেছে, তাঁরা জিতলে উপমুখ্যমন্ত্রী হবেন বিএসপি-র কোনও দলিত নেতা। আগামী ১৪ ডিসেম্বর অকালি দলের ১০১-তম প্রতিষ্ঠা দিবস। সেখান থেকেই অকালি দল পঞ্জাব ভোটের প্রচার শুরু করে দিতে চাইছে। অকালি দলের লক্ষ্য, দিল্লির সীমানায় আন্দোলনে ইতি টেনে ঘরে ফেরা পঞ্জাবের কৃষকদের নিজেদের পাশে টেনে আনা। সেই লক্ষ্যে ৯৫ বছর বয়সি প্রকাশ সিংহ বাদলকে ফের বিধানসভা ভোটে প্রার্থী করা হবে কি না, তা নিয়েও চিন্তাভাবনা চলছে। তবে কৃষকদের আন্দোলনে দাঁড়ি পড়লেও ফের বিজেপির সঙ্গে জোটের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন অকালিরা। কারণ, তা হলে অকালিদের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন উঠবে।
পঞ্জাবের ক্ষমতায় ফিরতে মরিয়া কংগ্রেস তিন কৃষি আইনের জন্য বিজেপির পাশাপাশি অকালিকেও দায়ী করছে। কংগ্রেসের অভিযোগ, প্রথমে সুখবীর সিংহ বাদল, তাঁর স্ত্রী হরসিমরত কৃষি আইনে সমর্থন করেছিলেন। হরসিমরত মন্ত্রিসভায় থেকে আইনে সিলমোহর দিয়েছেন। তারপরে কৃষকদের ক্ষোভ টের পেয়ে পদত্যাগ করেছেন। তবে কংগ্রেস সূত্রই বলছে, এত দিন কৃষি আইনই ছিল পঞ্জাবের ভোটের প্রধান বিষয়। এ বার তা প্রত্যাহার হওয়ায় পঞ্জাবে কংগ্রেস সরকারের কাজকর্ম নিয়েও চুলচেরা বিচার হবে। কংগ্রেস, অকালি—-দুই দলের নেতৃত্বই মনে করছেন, বিজেপি অমরেন্দ্রর সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিশেষ সুবিধা করতে পারবে না। কারণ, বিজেপির বিরুদ্ধে পঞ্জাবে ক্ষোভ তুঙ্গে। কংগ্রেসের মতো অকালি দলেরও চিন্তা আম আদমি পার্টিকে নিয়ে।
দুই দলের নেতাদেরই আশঙ্কা, কেজরীবাল কংগ্রেসের সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ কাজে লাগিয়ে পঞ্জাবে ফায়দা তুলতে পারেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy