এইচইসি এবং ‘চন্দ্রযান-৩’। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
প্রায় তিন বছরের নিরলস পরিশ্রমের শেষে সাফল্য। শুক্রবার অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধওয়ান স্পেস সেন্টারের ‘লঞ্চিং প্যাড’ থেকে ‘চন্দ্রযান-৩’-এর উৎক্ষেপন সফল হয়েছে। ইসরোর এই চন্দ্রাভিজানে বিজ্ঞানীদের পাশাপাশি প্রাণপাত পরিশ্রম করেছেন প্রচুর মানুষ। সেই তালিকায় আছেন রাঁচীর ‘হেভি ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন’ (এইচইসি) সংস্থার ইঞ্জিনিয়ার, পদস্থ অফিসার থেকে সাধারণ কর্মীরা। ‘চন্দ্রযান-৩’-এর উৎক্ষেপনে তাঁদের ভূমিকাও কিছু কম নয়। যদিও গত ১৭ মাস বিনা পারিশ্রমিকেই সমস্ত কাজ করে গিয়েছেন তাঁরা। একাধিক প্রতিবেদনে প্রকাশ, বার বার কেন্দ্রের কাছে আর্জি জানানোর পরেও দেড় বছরের বেশি সময় ধরে বেতন পাচ্ছেন না কেন্দ্রীয় ভারী শিল্প মন্ত্রকের অধীনস্থ ওই সংস্থার ইঞ্জিনিয়ার এবং কর্মীরা। তার পরেও তাঁরা দিন রাত এক করে কাজ করে গিয়েছেন। রাঁচীর ওই রাষ্ট্রীয় অধীনস্থ সংস্থা থেকে ‘চন্দ্রযান-৩’ উৎক্ষেপণের ‘লঞ্চিং প্যাড’ থেকে বিবিধ জটিল যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়েছে। কিন্তু যাঁরা সে সব তৈরি করলেন, তাঁরা কেন মাসের পর মাস বেতন পাচ্ছেন না?
অনেক দিন ধরেই ধুঁকছে এইচইসি সংস্থাটি। তথ্য বলছে, গত ৩ বছর ধরে আর্থিক সমস্যার মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ওই কোম্পানি। ওয়াকিবহালদের অনেকেই এই সংস্থার পরিস্থিতির সঙ্গে কেন্দ্রীয় টেলিকম সংস্থা বিএসএনএলের তুলনা টানেন। ওই কোম্পানিরই প্রায় তিন হাজার ইঞ্জিনিয়ার থেকে কর্মীরা গত ১৭ মাস পারিশ্রমিকের কানাকড়িও পাননি বলে অভিযোগ। সংস্থার জয়েন্ট সেক্রেটারি তথা ইঞ্জিনিয়ার সুভাষচন্দ্র ‘চন্দ্রযান-৩’-এর সফল উৎক্ষেপণের পর উচ্ছ্বসিত। কিন্তু তাঁর সহকর্মীদের পারিশ্রমিক নিয়ে প্রশ্ন করায় সংবাদমাধ্যম নিউজ়-১৮-কে সুভাষ জানান, এটা সত্য যে, কর্মীরা আর্থিক সমস্যায় রয়েছেন। কিন্তু তার পরেও শুক্রবার থেকে সবাই ভীষণ আনন্দিত। সুভাষের কথায়, ‘‘আবার এক বার এইচইসি-র সমস্ত ইঞ্জিনিয়ার এবং কর্মী গর্বের সঙ্গে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছেন। দেশের এমন একটি বিশাল এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের অংশ হয়েছি। এতে আমরা গর্বিত। আমরা ভীষণ খুশি।’’
কেন্দ্রের একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে নিউজ়-১৮ বলছে, একাধিক বার ভারী শিল্প মন্ত্রকের কাছে বকেয়া চেয়ে চিঠি দিয়েছে এইচইসি। কিছু দিন আগেই ১,০০০ কোটি টাকা চেয়ে দরবার করেছে তারা। কিন্তু সদ্র্থক সাড়া মেলেনি। মন্ত্রকের তরফে না কি বলা হয়েছে যে, সরকারের তরফে এখনই কোনও সাহায্য মিলছে না। বকেয়া বেতনের দাবিতে গত বছরের ৩ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ধর্মঘট করেন। সঙ্গে সঙ্গে দু’মাসের বেতন এবং বকেয়া বেতন জলদি মিটিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর ধর্মঘট প্রত্যাহার করেন তাঁরা। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন রাঁচীর বিজেপি সাংসদ সঞ্জয় শেঠ।
অন্য দিকে, কেন্দ্রীয় অধীনস্থ সংস্থার দেনা বাড়তে বাড়তে এমন জায়গায় গিয়ে তারা পৌঁছেছে যে, কর্মীদের বেতন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শুধু তাই-ই নয়, আর্থিক দুরবস্থার কারণে ২ বছর হয়ে গেল ওই সংস্থায় কোনও স্থায়ী ‘চিফ ম্যানেজিং ডিরেক্টর’ বা সিএমডি-র নিয়োগ হয়নি। উল্লেখ্য, ‘চন্দ্রযান-৩’ উৎক্ষেপনের পুরো প্রজেক্টে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৬১৫ কোটি টাকা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy