মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীসের সঙ্গে কি দূরত্ব বাড়ছে উপমুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্দের? মহাজুটিতে চিড় ধরেছে? দিন কয়েক ধরেই মরাঠাভূমের রাজনীতিতে ঘুরছে এমনই নানা প্রশ্ন। মহাজুটিতে ভাঙনের জল্পনা শুক্রবার আরও উস্কে দিলেন মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিন্দে। কিছুটা হুঁশিয়ারির সুরে শিন্দের পরামর্শ, তাঁকে যেন হালকা ভাবে না নেওয়া হয়! তার পরই তিনি টেনে আনেন ২০২২ সালের মহারাষ্ট্রের সরকারের পালাবদলের প্রসঙ্গও।
২০২৪ সালে মহারাষ্ট্রের ভোটে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতা ধরে রাখে মহাজুটি (বিজেপি, শিন্দের শিবসেনা এবং অজিত পওয়ারের এনসিপি)। তবে তার পর থেকেই নানা কারণে শাসক শিবিরের জুটির মধ্যে টানাপড়েন শুরু হয়। প্রথমেই মুখ্যমন্ত্রিত্ব নিয়ে বিজেপি এবং শিন্দের মধ্যে মতপার্থক্য প্রকাশ্যে আসে। যদিও শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে শিন্দেকে সরিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয় ফডণবীসকে। শিন্দেকে রাখা হয় উপমুখ্যমন্ত্রীর পদে। সেই থেকেই এই দুই প্রধানের ‘দ্বন্দ্ব’ চর্চার কেন্দ্রে।
দুই প্রধানের ‘দ্বন্দ্ব’ এবং মহাজুটিতে ভাঙনের জল্পনা বাড়িয়ে দেন শিন্দে। ফডণবীসের ডাকা একাধিক বৈঠক এড়িয়ে যান তিনি। শিন্দে মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন মহারাষ্ট্রের জালনায় ৯০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের উদ্বোধন করেছিলেন। সম্প্রতি ফডণবীস সেই প্রকল্পের উপর স্থগিতাদেশ জারি করেন। প্রকল্পের বৈধতা এবং শিন্দের অনুমোদনের নেপথ্যের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পরই তা তদন্তের আওতায় আনার কথাও বলেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী। তার পরই দেখা যায় ফডণবীসের সঙ্গে ‘দূরত্ব’ রাখছেন শিন্দে।
আরও পড়ুন:
শুক্রবার শিন্দেকে এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হয়। তিনি কি মহাজুটির সঙ্গ ছাড়বেন? শিন্দে সরাসরি এ ব্যাপারে উত্তর না দিলেও তাঁর কথায় রয়েছে প্রচ্ছন্ন হুমকিও। তিনি বলেন, ‘‘আমি দলের এক জন সাধারণ কর্মী। তবে আমি কিন্তু বাবাসাহেবের এক জন কর্মীও। সেটা সকলের বোঝা উচিত। ২০২২ সালে আমাকে হালকা ভাবে নেওয়া হয়েছিল, তখন কিন্তু তৎকালীন সরকারকে উৎখাত করেছিলাম।’’
২০২২ সালে রাজনৈতিক নাটক দেখেছিল মহারাষ্ট্র। শিবসেনা শিবিরে ভাঙন ধরিয়ে ৪০ জন বিধায়ককে নিয়ে দল ছাড়েন শিন্দে। মহাবিকাশ আঘাড়ীর (শিবসেনা, এনসিপি এবং কংগ্রেস) সরকারের পতন হয়। পরে ওই জোট থেকে কয়েক জন বিধায়ককে নিয়ে বেরিয়ে আসেন এনসিপি নেতা শরদ পওয়ারের ভাইপো অজিতও। পরে দু’জনই বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার গঠন করেন। সেই সরকারে মুখ্যমন্ত্রী করা হয় শিন্দেকে। উপমুখ্যমন্ত্রী হন ফডণবীস এবং অজিত। কিন্তু ২০২৪ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জয়ের পর শিন্দেকে সরিয়ে ফডণবীসকে মুখ্যমন্ত্রী করা হয়। সেই সময় প্রকাশ্যে কেউ কিছু না বললেও অনেকেই জানেন, মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়তে চাননি শিন্দে। পরিস্থিতির চাপে তিনি পদ ছাড়তে বাধ্য হন।