Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Narendra Modi

Intolerance: ভারতে কমছে ধর্মীয় সহিষ্ণুতা, ফের কড়া আমেরিকান কমিশন

আগামী মাসে টোকিয়োয় কোয়াড সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে দেখা হওয়ার কথা প্রেসিডেন্ট বাইডেনের। সেখানে তিনি কমিশনের এই রিপোর্টের কথা তোলেন কি না, এখন সেটাই দেখার।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২২ ০৭:১৩
Share: Save:

নরেন্দ্র মোদীর জমানায় ভারতে ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ‘উল্লেখযোগ্য’ ভাবে হ্রাস পেয়েছে, মন্তব্য করল একটি আমেরিকান কমিশন। স্বাধীনদায়িত্বপ্রাপ্ত এই কমিশন বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার রক্ষার বিষয়টি খতিয়ে দেখে আমেরিকার বিদেশ দফতরকে রিপোর্ট দেয় এবং সেই দেশটির উপরে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা চাপানোর বিষয়ে সুপারিশ করে। এই নিয়ে পর পর তিন বছর তাদের রিপোর্টে ‘কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম’ জানাল, ভারতে সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। এই জন্য ভারতের উপরে এক গুচ্ছ আর্থিক নিষেধাজ্ঞা চাপানোর সুপারিশও করেছে তারা। তবে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সুসম্পর্ক বজায় রাখতে গত দু’বছরের মতো এ বারও বিদেশ দফতর কোনও নিষেধাজ্ঞার পথে হাঁটবে না বলেই মত সংশ্লিষ্ট মহলের।

তাদের রিপোর্টে কমিশন ২০২১ সালে ভারতে ধর্মীয় সংখ্যালঘু, বিশেষ করে মুসলিম ও খ্রিস্টানদের উপরে ঘটে যাওয়া অসংখ্য হিংসার ঘটনা তুলে ধরে বলেছে, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার তাদের হিন্দু রাষ্ট্রের ভাবাদর্শে চলে যে নীতি প্রণয়ন করছে, তা সংখ্যালঘুদের জন্য প্রতিকূল।’’ রিপোর্টে স্পষ্ট বলা হয়েছে, ‘‘ভারতে ধর্মীয় স্বাধীনতা উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস পাচ্ছে।’’ ভারতকে ‘যথেষ্ট উদ্বেগজনক পরিস্থিতি’ এই তালিকায় রাখার সুপারিশ করে কমিশনের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘‘গণহত্যা, মানবাধিকার লঙ্ঘন, সাংবাদিক নিগ্রহের ঘটনা থেকে সরকারের মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার প্রবণতা আমাদের যথেষ্ট উদ্বিগ্ন করেছে।’’ মানবাধিকার ও ধর্মীয় অধিকার ক্ষুণ্ণ হওয়ার প্রসঙ্গে আমেরিকান বিদেশ দফতর পাকিস্তানকে ‘ব্ল্যাকলিস্ট’ করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাকে স্বাগত জানিয়ে কমিশন তালিবান-শাসিত আফগানিস্তানকেও সেই তালিকাভুক্ত করার সুপারিশ করেছে।

কমিশনের রিপোর্টে ভারতে ধর্মীয় অসিহষ্ণুতার বেশ কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে দু’টি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল— কাশ্মীরে মানবাধিকার কর্মী খুরন পারভেজ়কে গ্রেফতার এবং ইউএপিএ-তে গ্রেফতার হওয়া বৃদ্ধ ফাদার স্ট্যান স্বামীর ২০২১-এর জুলাইয়ে মৃত্যু। গত বছর অক্টোবরে কর্নাটকের বিজেপি সরকার বাড়ি বাড়ি পুলিশ পাঠিয়ে যে সব হিন্দু খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছেন তাঁদের খোঁজ করছিল, রিপোর্টে তারও উল্লেখ করা হয়েছে। ভারতে তৃণমূল স্তরে কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী ও মানবাধিকার সংগঠন যে সমস্যার সামনে পড়ে, তার উল্লেখও রিপোর্টে করা হয়েছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সময় থেকেই চিনের বেড়ে চলা ক্ষমতায় রাশ টানতে ভারতকে বন্ধু-রাষ্ট্র হিসেবে পাশে পেতে অতি তৎপর আমেরিকা। জো বাইডেন সে দেশের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে ওয়াশিংটনের সেই অবস্থান আরও দৃঢ় হয়েছে। ফলে কমিশনের সুপারিশ যে বিদেশ দফতর গ্রাহ্য করবে না, সে বিষয়ে সংশয় নেই। গত দু’বার কমিশনের এই নেতিবাচক রিপোর্টে যথেষ্ট ক্ষুব্ধ নয়াদিল্লি এবং তাদের সেই ক্ষোভ আমেরিকাকে স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছিল মোদী প্রশাসন। ২০২০-র রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পরে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এই কমিশনের সমালোচনা করে বলেছিলেন, ‘‘ভারতকে ‘যথেষ্ট উদ্বেগজনক’ তালিকায় রাখতে চাওয়া এই সংগঠনটিরই কার্যকলাপ যথেষ্ট উদ্বেগজনক।’’ কিন্তু আমেরিকার কূটনীতিক মহলের মতে, ভারত যতই কড়া অবস্থান নিক না কেন, একটি স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিশন যখন পরপর তিন বছর তাদের রিপোর্টে মোদী প্রশাসনের নিন্দায় এ ভাবে সরব হচ্ছে, তখন তাকে মান্যতা দেওয়ার জন্য ঘরোয়া রাজনীতিতেও চাপ বাড়বে বাইডেন প্রশাসনের উপরে।

কূটনৈতিক সূত্রের খবর, দু’সপ্তাহ আগেই আমেরিকা সফরে গিয়েছিলেন জয়শঙ্কর। তাঁর কাছেও আমেরিকার বিদেশসচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ভারতে ক্রমশ বেড়ে চলা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। আগামী মাসে টোকিয়োয় কোয়াড সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে দেখা হওয়ার কথা প্রেসিডেন্ট বাইডেনের। সেখানে তিনি কমিশনের এই রিপোর্টের কথা তোলেন কি না, এখন সেটাই দেখার।

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi america
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy