জন অ্যালেন চাউ। —ফাইল চিত্র।
আঁকাবাঁকা লেখায় ভরা ক’টা কাগজ। ধীবরেরা তা পৌঁছে দিয়েছিলেন পোর্ট ব্লেয়ারে। বলেছিলেন, ১৫ নভেম্বর মধ্যরাতে সমুদ্রে তাঁদের ডিঙিতে বসে ডায়েরি লিখেছিলেন সেন্টিনেলিজ জনজাতির হাতে নিহত মার্কিন নাগরিক জন অ্যালেন চাউ। এগুলো সেই ডায়েরিরই পাতা।
সঙ্গে একটা চিঠিও। তাতে জন তাঁর বাবা-মাকে লিখেছেন, ‘‘এদের কাছে যিশুকে নিয়ে যাওয়াটা জরুরি। আমি মারা গেলে এদের উপরে বা ঈশ্বরের উপরে রাগ কোরো না। আমি দেখতে চাই, এরা নিজেদের ভাষায় ঈশ্বরের উপাসনা করছে।’’
আন্দামানের ডিজি দীপেন্দ্র পাঠক জানান, ২৫ হাজার টাকায় সাত ধীবরকে ভাড়া করেছিলেন জন। ঠিক হয়েছিল, সেন্টিনেলিজ জনজাতির দ্বীপ নর্থ সেন্টিনেলের কাছাকাছি জনকে পৌঁছে দেবেন তাঁরা। একটি সূত্রের দাবি, ১৪ নভেম্বর রাত ৮টা নাগাদ রওনা হন জন। নৌকায় ছিলেন তাঁর ক’জন বন্ধুও। পরের দিন ভোর সাড়ে ৪টে নাগাদ জন একাই দ্বীপে নামেন এবং তাঁকে দু’দিন বন্দি রাখার পরে খুন করে বালিতে পুঁতে দেন সেন্টিনেলিজ জনজাতির মানুষেরা।
আরও পড়ুন: ফের অভিযোগের তির, দায় স্বীকার ফেসবুকের
কিন্তু ডায়েরি বলছে, ১৫ নভেম্বর কিছু মাছ, মাছ ধরার জাল, কাঁচি আর একটা ফুটবল নিয়ে দ্বীপে নামার পরেও জন বাধ্য হয়েছিলেন নৌকায় ফিরে আসতে। কারণ, তাঁকে দেখেই তির ছুড়ছিল সেন্টিনেলিজ জনজাতি। জন লিখেছেন, ‘‘চিৎকার করছিল ওরা। মনে হল, যেন গালাগালি দিচ্ছে। আমিও চেঁচিয়ে বললাম, ‘আমি জন। তোমাদের ভালবাসি। ঈশ্বর তোমাদের ভালবাসেন।’ একটা বাচ্চা তির মারল আমার হাতের বইটায়। নেতা-গোছের একটা লোক পাথরে দাঁড়িয়ে চেঁচিয়ে উঠল। যে-ভাবে পালিয়ে এলাম, এখন তার জন্য আফসোসই হচ্ছে।’’
আরও পড়ুন: ফ্যাক্স মেশিনই এখন সবচেয়ে বড় খলনায়ক উপত্যকার রাজনীতিতে!
ডায়েরিতে কথাগুলো লিখে রেখে ১৬ তারিখে আবার নর্থ সেন্টিনেলে গিয়েছিলেন জন। ধীবরদের দাবি, ১৭ তারিখে দূর থেকে তাঁরা দেখেন, ওই দ্বীপের সৈকতে একটা মৃতদেহকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন কিছু মানুষ। দেহের আদল এবং কাপড়চোপড় দেখে তাঁদের সন্দেহ হয়, সেটি জনেরই দেহ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তাদের বক্তব্য, জন অ্যাডভেঞ্চারের জন্যই ওই দ্বীপে গিয়েছিলেন, ধর্ম প্রচার করতে নয়।
ধৃত ধীবরদের মুক্তি চেয়েছে জনের পরিবার। ক্ষমা করেছে খুনিদের। জন যেমন চেয়েছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy