কলকাতায় চিনা পণ্য পুড়িয়ে বর্জনের ডাক। ছবি: পিটিআই
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পর্বেই চিনা পণ্য বর্জনের দাবি উঠেছিল। গলওয়ান উপত্যকায় ভারত-চিন সেনা সংঘর্ষে ২০ সেনা জওয়ানের মৃত্যুর পর সেই দাবি আরও জোরালো। অনেক জায়গায় চিনা পণ্য পোড়ানোর ছবিও ধরা পড়েছে। সরকারি ক্ষেত্রেও তেমন একটা হাওয়া উঠেছে। কিন্তু আদপে কি চিনকে পুরো বয়কট করা সম্ভব? প্রায় সব ক্ষেত্রে তো চিনের রমরমা রয়েছেই, বহু ভারতীয় সংস্থায় রয়েছে চিনের বিনিয়োগ। ফলে প্রশ্ন উঠছে, সেই বিপুল বিদেশি বিনিয়োগকে উপেক্ষা করা এবং সর্বক্ষেত্রে চিনা পণ্য বর্জন করার সাহস কি দেখাতে পারবে ভারত?
বিএসএনএল-কে চিনা পণ্য ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছে। রেলের একটি প্রকল্পে ৫০০ কোটির বরাত পাওয়া চিনের সংস্থার সঙ্গে চুক্তি বাতিলের পথে। কিন্তু দু’-একটি ছোটখাট সিদ্ধান্ত নেওয়া আর পুরো চিনকে বয়কট করার মধ্যে বিরাট পার্থক্য। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সব পদক্ষেপ একটি বিরাট সিদ্ধান্তের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ মাত্র। সামগ্রিক ভাবে বিনা চিনে চলা কঠিন। কারণ তথ্যপ্রযুক্তি থেকে পরিকাঠামো, বিনোদন থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী— সব ক্ষেত্রে ছেয়ে রয়েছে চিন এবং তাদের দেশের পণ্য বা পরিষেবা।
ভারতে কোন সংস্থার কত বিনিয়োগ রয়েছে এবং কী ভাবে তারা ভারতের বাজার দখল করেছে, তার উপর একটি সমীক্ষা চালিয়েছে ভারতীয় সংস্থা ‘গেটওয়ে হাউস’। কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রক, ভারত সরকার, বিভিন্ন শেয়ার বাজার, ভারত সরকারের বিদেশি বিনিয়োগ সংক্রান্ত পোর্টাল ও সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন রিপোর্ট থেকে তথ্য নিয়ে ওই সমীক্ষা করা হয়েছে। সেই সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, ভারতের ৩০টি ‘ইউনিকর্ন’ সংস্থার মধ্যে ১৮টিতেই রয়েছে চিনা বিনিয়োগ। ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে ওঠা যে সব সংস্থার মূল্য ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি, তাদের এই ‘ইউনিকর্ন’ গোত্রে ফেলা হয়। ওই সমীক্ষায় বলা হয়েছে, এই ইউনিকর্নভুক্ত ১৮টি সংস্থায় চিনের বিভিন্ন সংস্থার বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার। কোন সংস্থার কোথায় কত বিনিয়োগ তাও বলা হয়েছে ওই সমীক্ষায়।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
আরও পড়ুন: বিএসএনএল-এর পর রেল, ৫০০ কোটির বরাত হারাচ্ছে চিনের সংস্থা
কিন্তু এর বাইরেও ১০০ কোটির কম মূল্যের সংস্থায় বহু বিনিয়োগ রয়েছে চিনা সংস্থাগুলির। আবার পণ্য, পরিষেবা ও তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রেও ক্রমেই জোরদার হচ্ছে চিনা আধিপত্য। গেটওয়ে হাউসের ওই সমীক্ষার হিসেবে ই-কমার্স, ফিনটেক, মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়া, পরিকঠামো, পরিবহণের মতো অন্তত ৭৫টি সংস্থায় চিনা বিনিয়োগ রয়েছে। বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি ও পরিষেবা ক্ষেত্রে বিপুল সম্ভাবনা খুঁজে পেয়েছে এবং বিনিয়োগ করে চলেছে।
তার উপর ডিজিটাল জগতেও চিনের সংস্থাগুলির বাজার লাফিয়ে বেড়েছে গত কয়েক বছরে। উইসি ব্রাউজার, শেয়ার ইট, টিকটক, ভিগো ভিডিয়োর মতো অ্যাপগুলি ভারতে যথেষ্ট জনপ্রিয়। ওই সমীক্ষার মতে, গত পাঁচ বছরে ইউটিউবকেও জনপ্রিয়তায় ছাপিয়ে গিয়েছে টিকটক। শুধু ভারতেই টিকটকের প্রায় ২০ কোটি সাবস্ক্রাইবার রয়েছে। মোবাইল হ্যান্ডসেটের বাজারেও চিনের বাজার রমরমা। মোবাইল হ্যান্ডসেটেও চিনা ফোনের কার্যত একাধিপত্য। স্যামসাং, অ্যাপল ধারে কাছে নেই। গেটওয়ে হাইসের সমীক্ষায় উঠে এসেছে ভারতে শুধুমাত্র চিনের ফোন ওপো এবং শাওমি দখল করে রেখেছে ৭২ শতাংশ বাজার।
আরও পড়ুন: কাঁটা লাগানো এই লোহার রডেই চিনা হামলা, পাল্টা নয়া বর্মের পরিকল্পনা সেনার
তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আবেগের বশে চিনা পণ্য বর্জনের কথা বলা যতটা সহজ, অর্থনৈতিক দিক থেকে ততটা বাস্তবসম্মত নয়। এক দিকে কম দামে পণ্য উৎপাদন ও বিক্রি এবং সর্বক্ষেত্রে চিনা পণ্য-পরিষেবার বিচরণ। আবার এমন বহু পণ্য রয়েছে যেগুলি ভারতে তৈরি হয় না বা তৈরি হলেও তার দাম চিনের পণ্যের চেয়ে অনেক বেশি। ফলে চিনা পণ্য বর্জন করে দেশীয় পণ্য ব্যবহার করতে হলে আগে উৎপাদনের ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে এবং তার দামও রাখতে হবে সাধ্যের মধ্যে। সেটা কার্যত বাস্তবসম্মত নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy