উত্তরপ্রদেশে বিজেপির কুর্সি দখলে রাখা নিশ্চিত করতেই কি আজ বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহার করে নিলেন নরেন্দ্র মোদী?
উত্তরপ্রদেশে বিজেপির কুর্সি দখলে রাখা নিশ্চিত করতেই কি আজ বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহার করে নিলেন নরেন্দ্র মোদী? বিরোধীদের মতে, দল উত্তরপ্রদেশে হারছে বুঝেই এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সঙ্গে পঞ্জাবেও ভোট রয়েছে।
করোনার কারণে বিপর্যস্ত অর্থনীতি। এক দিকে মূল্যবৃদ্ধি আকাশ ছুঁয়েছে, অন্য দিকে করোনা ছিনিয়ে নিয়েছে মানুষের রোজগার। ভোটমুখী উত্তরপ্রদেশের মানুষের অবস্থা তথৈবচ। প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার হাওয়া যে প্রবল, তা লখনউয়ে নেমেই বুঝতে পারছেন কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতারা। দল ভেবেছিল রামমন্দির তথা হিন্দুত্বের হাওয়া ও নরেন্দ্র মোদীর ব্যক্তিগত ক্যারিশমায় সে সব নেতিবাচক প্রচারকে অনায়াসে ঢেকে দেওয়া যাবে। কিন্তু যত দিন গড়িয়েছে তত দল বুঝতে পেরেছে, প্রচারের ঢক্কানিনাদ চললেও, দলের গলার কাঁটা হয়ে রয়ে গিয়েছে কৃষি আইন ঘিরে কৃষক সমাজের আন্দোলন। উত্তরপ্রদেশে প্রচারের তীব্র সুরও যাকে ঢাকতে ব্যর্থ। দলের নিচু তলার কর্মী-নেতারা নেতৃত্বকে বার্তা দেন, কৃষি আন্দোলন এ ভাবে চলতে থাকলে উত্তরপ্রদেশে ক্ষমতা ধরে রাখা কঠিন বিজেপির।
হার-জিতের অঙ্কে পরাজয়ের পাল্লা ভারী বুঝেই আজ তিন দিনের উত্তরপ্রদেশ যাত্রার ঠিক আগে ওই আইন প্রত্যাহারের নাটকীয় সিদ্ধান্ত নিলেন মোদী। তাঁর দাবি, মানুষকে ওই আইন সম্পর্কে বোঝাতে না পারার ব্যর্থতা থেকেই ওই আইন ফিরিয়ে নেওয়া হল। বিরোধীরা পাল্টা বলছেন, ভোটে হেরে যাওয়ার ভয়েই ওই প্রত্যাহার। সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদবের আশঙ্কা, ভোটের পরেই ফের ওই তিন আইন বলবৎ করতে পারে নরেন্দ্র মোদী সরকার। তিনি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর মন সাফ নয়। আগামী দিনে ফের কৃষি আইন মোদী সরকার আনবে না এমন নিশ্চয়তা কোথায়?’’
এ দিন নদিয়ার কালীগঞ্জে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ। উত্তরপ্রদেশ ও পঞ্জাবে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়েই মোদী সরকার পিছু হটল কি না জানতে চাওয়া হলে তিনি দাবি করেন, “ভোটের সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই।” তাঁর ব্যাখ্যা, “ভোট দেখে আইন হয়নি, তাই ভোটের জন্য আইন প্রত্যাহারও হয়নি। সরকার চেষ্টা করেছিল আইন পরিবর্তন করার। যে হেতু বিরোধিতা চলছিল, তাই সরকার স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
উত্তরপ্রদেশে দলের পক্ষে হাওয়া যে প্রতিকূলে তা বুঝেই সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন মোদী ও দল। খোদ মোদী আজ থেকে আগামী রবিবার সে রাজ্যে ঘাঁটি গেড়ে থাকবেন। অমিত শাহ, রাজনাথ সিংহ, জেপি নড্ডার মতো শীর্ষ নেতাদের কাছে নির্দেশ গিয়েছে, মাসে অন্তত দু’বার বা প্রয়োজনে তিন বার উত্তরপ্রদেশ যাওয়ার। বুথে-বুথে কর্মী সংগ্রহ করার মতো তৃণমূল স্তরের অভিযানেও থাকতে বলা হয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের। উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা জয়ের মধ্যে দিয়ে ২০২৪ সালের লোকসভা জয় নিশ্চিত করতে কোনও চেষ্টারই কসুর করতে ছাড়েনি মোদী সরকার। কিন্তু ভোটের তিন মাস আগে দলীয় সমীক্ষা জানিয়েছে, কেন্দ্র জনহিতকারী একাধিক পরিকল্পনা সত্ত্বেও বিজেপির প্রতি আমজনতার প্রবল ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হয়ে রয়েছে। যার একটি বড় কারণ হল কৃষি আন্দোলন ঘিরে দলের অসংবেদনশীল মনোভাব। সমীক্ষা অনুযায়ী, এ ভাবে কৃষি আন্দোলন চলতে থাকলেও উত্তরপ্রদেশে দলের ক্ষমতা ধরে রাখা কঠিন। ৪০৩ আসনের উত্তরপ্রদেশে বিজেপি এবার ১৭৫ আসন পাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় জানিয়েছে সমীক্ষা। যোগী রাজ্যে পরিস্থিতি উত্তরোত্তর খারাপ হওয়া ঠেকাতে শেষ পর্যন্ত কৃষি আইন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয় সরকার। সূত্রের খবর, মোদীর ওই সিদ্ধান্ত ঘোষণায় লাভ কতটা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। দলের একাংশের মতে, ভোটের অন্তত ছয় মাস আগে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল। সকলেই বুঝছেন, ভোটে হারের ভয়েই আইন প্রত্যাহারে বাধ্য হল দল। এতে আরও নেতিবাচক বার্তা গেল। দলের অন্য অংশের মতে, সরকার যে কৃষকদের প্রতি সংবেদনশীল,
সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের মাধ্যমে সেই বার্তাই দিলেন প্রধানমন্ত্রী। এখানেই গণতন্ত্রের সাফল্য।
কৃষক আন্দোলনে পঞ্জাব-হরিয়ানার কৃষকদের সঙ্গেই অংশ নেন পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের জাঠ সম্প্রদায়ের কৃষক নেতারাও। আন্দোলনের পুরোভাগে ছিলেন ভারতীয় কিসান ইউনিয়নের নেতা রাকেশ টিকায়েত, যিনি পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের সব চেয়ে ক্ষমতাশালী খাপ বালিয়ান-এর প্রতিনিধি। যে খাপ বিগত দুই লোকসভা নির্বাচন ও ২০১৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে ঢেলে ভোট দিয়েছিল। কিন্তু গত এক বছরে ছবিটি পাল্টে গিয়েছে। কৃষকদের ওই ক্ষোভের সুযোগ নেন বিরোধীরা। কৃষি আইনের মাধ্যমে মোদী সরকার জাঠদের ধনে-প্রাণে মারার চেষ্টা করছেন— এই প্রচারে চালিয়ে ক্ষুব্ধ জাঠ ভোটকে অনেকটাই একত্রিত করতে সক্ষম হয়েছেন পূর্ব উত্তরপ্রদেশের আরএলডি নেতা জয়ন্ত চৌধরি, যিনি আগামী দিনে এসপি-র সঙ্গে জোট বাঁধতে চলেছেন বলে মনে করছে বিজেপি। ক্ষুব্ধ ওবিসি ভোটও। বিজেপির এক নেতার কথায়, “তাও ওবিসি ভোট যদি অটুট থাকত, জাঠ ভোট চলে গেলে অসুবিধা হতো না। কিন্তু যোগীর নীতির কারণে ভাঙন সেখানেও।” গত বিধানসভায় জোট করলেও, যোগী শাসনে গুরুত্ব না পাওয়া ওবিসি নেতা ওমপ্রকাশ রাজভড় জানিয়ে দিয়েছেন, বিজেপি নয় এসপি-র সঙ্গে জোট বাঁধতে আগ্রহী তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy