রাহুল গাঁধী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অরবিন্দ কেজরীবাল। ছবি টুইটার সৌজন্যে।
বিজেপি-কে হটাতে ভোটের আগেই জাতীয় স্তরে জোট গড়ছে বিরোধীরা। আজ নিজেদের মধ্যে বৈঠকের পরে এ কথা ঘোষণা করেছেন বিরোধী দলগুলির শীর্ষনেতারা। জানিয়েছেন, শীঘ্রই অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচিও তৈরি হবে।
এত দিন বিরোধী দলগুলি বিজেপির বিরুদ্ধে রাজ্যে রাজ্যে জোট তৈরির পরিকল্পনা নিচ্ছিল। আজ তা থেকে বেশ কয়েক ধাপ এগোলেন রাহুল গাঁধী-মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-শরদ পওয়ারেরা।
আজ রাতে দিল্লিতে পওয়ারের বাড়িতে বৈঠক করে রাহুল, মমতা, অরবিন্দ কেজরীবাল, চন্দ্রবাবু নায়ডু, ফারুক আবদুল্লারা একযোগে ঘোষণা করেন, জাতীয় স্তরে জোট তৈরি করেই তাঁরা ভোটে যাবেন।
যার অর্থ, ভোটের আগেই জাতীয় স্তরে মহাজোট তৈরি হবে। সেই মহাজোট ক্ষমতায় এলে কী করবে, তার জন্য আগাম একটি অভিন্ন কর্মসূচিও তৈরি হবে। পওয়ারের ঘোষণা, এই কাজটির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কংগ্রেস সভাপতি রাহুলকে। দিন পনেরোর মধ্যেই এ নিয়ে ফের বৈঠকে বসবেন বিরোধী নেতারা। ২৬ ফেব্রুয়ারি অন্ধ্রপ্রদেশের রাজধানী অমরাবতীতে ফের বৈঠক হতে পারে।
জাতীয় স্তরে জোট তৈরি করেই ভোটে যাবেন শপথ বিরোধীদের। ছবি: পিটিআই
আজকের বৈঠকের পর ‘মোদী হটাও, দেশ বাঁচাও’ স্লোগান তুলে মমতা বলেন, ‘‘আমরা জাতীয় স্তরে একসঙ্গে কাজ করব। আমাদের ন্যূনতম অভিন্ন কর্মসূচি তৈরি হবে। প্রাক্-নির্বাচনী জোট হবে।’’
আরও পড়ুন: তুমুল হর্ষধ্বনি, বলিউডি গানের প্যারোডি, মমতা সমাবেশে পৌঁছতেই উৎসবের মেজাজ কেজরীবালের মঞ্চে
ঠিক কী ভাবে এই মহাজোটের সমীকরণ তৈরি হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবু রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এটি রাহুলের মাস্টারস্ট্রোক। এর ফলে রাজ্য স্তরে বিভিন্ন বিরোধী দলের কলহ যাতে জাতীয় স্তরে ছায়া ফেলতে না পারে, তা নিশ্চিত করা যাবে। রাহুল বলেন, ‘‘আমাদের প্রধান লক্ষ্য হল, দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোকে মোদী সরকার, বিজেপি এবং আরএসএসের হামলা থেকে রক্ষা করা।’’ তবে এসপি-র কোনও নেতা এই বৈঠকে ছিলেন না। বিএসপি নেতা সতীশ মিশ্র ছিলেন। তবে দলে তিনি সিদ্ধান্ত নেওয়ার মালিক নন।
আরও পড়ুন: বেজায় অসন্তুষ্ট মমতা, যন্তরমন্তরের মঞ্চ থেকে কঠিন বার্তা কংগ্রেসকে
এ ছাড়াও প্রশ্ন, জাতীয় স্তরে জোট হলেই যে রাজ্যে আসন সমঝোতা হবে, তার নিশ্চয়তা কী। যেমন, বৈঠকে এই প্রথম রাহুল ও কেজরীবাল একসঙ্গে এলেও দিল্লিতে কংগ্রেস-আপ রফা হবে কি না, তা স্থির হয়নি। একই ভাবে পশ্চিমবঙ্গেও কংগ্রেস-তৃণমূলের জোটে প্রদেশ কংগ্রেস নেতারাই বাধা। রাহুল নিজেই বলেছেন, ‘‘আমরা নিজেদের মধ্যে রাজ্যে প্রতিযোগিতা করতেই পারি। দিল্লি ও বাংলায় কী হবে, সেই সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি।’’ মমতা অবশ্য আগেই বলে রেখেছেন, যেখানে যার শক্তি বেশি, সেখানে সেই দলই বিজেপির বিরুদ্ধে লড়বে।
দিনের শেষে বিরোধী ঐক্যের ছবিটা আরও মজবুত হলেও দিনের শুরুতে কিন্তু সুরটা কিঞ্চিৎ আলাদা ছিল। সকালে সংসদে গিয়ে প্রথমেই গাঁধী-মূর্তিকে প্রণাম করেন তৃণমূল নেত্রী। সেখানে তাঁর দলের সাংসদেরা ধর্না দিচ্ছিলেন। উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘‘বাপুজির কাছে প্রার্থনা করলাম, বিজেপি-কে হটান। মোদীবাবুকে হটান।’’ এর পর সেন্ট্রাল হলে পৌঁছতেই তিনি জানতে পারেন, অর্থ লগ্নি কেলেঙ্কারি নিয়ে লোকসভায় কংগ্রেসের সঙ্গে বাদানুবাদ হয়েছে! অধীর চৌধুরীর তৃণমূল-বিরোধী আক্রমণে টেবিল চাপড়েছেন সনিয়া গাঁধীও। শুনে তীব্র উষ্মা প্রকাশ করেন মমতা। সনিয়ার সঙ্গে দেখা হতে সনিয়া বলেন, ‘‘আমরা পরস্পরের প্রতি অভিযোগ আনতেই পারি। কিন্তু আমরা বন্ধু।’’ উত্তরে মমতা বলেন, ‘‘এই দিনটা আমি ভুলব না।’’
বিকেলে বিরোধীদের মঞ্চে সেই উত্তাপ কিছুটা প্রশমিত হয়। ১৯ জানুয়ারি ব্রিগেডে যে সমাবেশ হয়েছিল, আজ দুপুরে রাজধানীতে তার দ্বিতীয় পর্বের আয়োজন করেছিলেন কেজরীবাল। মঞ্চ থেকে কংগ্রেসের আনন্দ শর্মা মমতার ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে
আমি ৪০ বছর ধরে চিনি। তিনি আমার বোনের মতো। তাঁর নেতৃত্বে ব্রিগেড সম্মেলন এক বিরাট জোটের ইঙ্গিত দিয়েছে।’’ মমতাও জানিয়ে দেন, রাজ্যে লড়াই জারি থাকলেও কেন্দ্রে বিজেপি-কে হটানোর স্বার্থে কংগ্রেস এবং সিপিএমের সঙ্গে এককাট্টা হয়ে যুদ্ধ করতে তিনি প্রস্তুত। কলকাতার সাম্প্রতিক সিবিআই কাণ্ডের কথা উল্লেখ করে তাঁর বক্তব্য, ‘‘আজ এই লোকসভার শেষ দিন। আর কুড়ি দিনের মধ্যে ভোট ঘোষণা হয়ে যাবে। কুড়ি দিন পর ভয় দেখানো বন্ধ।’’ আর তার আগে? মমতার ঘোষণা, “আমাকে যদি খুন করে বা জেলে ভরে ভরুক। আমার বাড়ি সিবিআই পাঠাতে চাইলে পাঠাক। আমি রান্না করে রাখব!’’
বক্তৃতায় উপস্থিত প্রায় সব নেতার নাম উল্লেখ করলেও মমতা সুকৌশলে উচ্চারণ করেননি কংগ্রেস প্রতিনিধির নাম। কংগ্রেস এবং সিপিএমের বিরুদ্ধে ক্ষোভ গোপন না-রেখেই বলেন, ‘‘আমার রাজ্যে সিপিএম এবং কংগ্রেসের সঙ্গে লড়াই করার অভ্যাস আমার রয়েছে। ওদের সঙ্গে রাজ্যে জোট করে লাভ হয় না। কারণ, ওদের ভোট ওরা আমাদের হাতে তুলে দেয় না। ওরা (কংগ্রেস-সিপিএম) যদি বেশি লড়াই করে, আমরা ৪২টি আসনই পাব!’’ কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এর পরেই তিনি বলেন, ‘‘বড় কাজের জন্য ছোট ছোট বলিদান দিতেই হয়। মোদীকে হটিয়ে দেশ বাঁচাতে রাজ্যে (কংগ্রেস ও বামেদের সঙ্গে) লড়াই থাকলেও জাতীয় স্তরে এককাট্টা হয়ে লড়ব।’’
এর পরেই রাতে পওয়ারের বাড়িতে বিরোধী নেতাদের ফের বৈঠক হয়। পওয়ার-ফারুকরাই সকলকে বোঝান যে, মোদীকে হারাতে হলে সকলকে একসঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে। মতান্তর সরিয়ে রাখতে হবে। বাকি সবাই যখন কেজরীবালের ধর্নামঞ্চে পৌঁছচ্ছেন, সেই সময়ই রাহুল একা জনপথে পওয়ারের বাড়িতে এক প্রস্ত বৈঠক সেরে আসেন। তার পর রাতে বৈঠক শুরু হওয়ার বেশ কিছু ক্ষণ পরে হাজির হন নাটকীয় ভাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy