Advertisement
০৫ অক্টোবর ২০২৪
ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলা

আদালতে হাজিরা দিতে নির্দেশ সনিয়া-রাহুলকে

বিহার ভোটের সাফল্যকে পুঁজি করে সংসদে প্রতিনিয়ত যখন শাসক দলকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা চালাচ্ছে কংগ্রেস, তখন দিল্লি হাইকোর্টের একটি নির্দেশে তারা নিজেরাই বিপাকে পড়ে গেল। ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় সনিয়া গাঁধী ও রাহুল গাঁধীকে নিম্ন আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিল দিল্লি হাইকোর্ট। যার অর্থ, নিম্ন আদালতে কাল, মঙ্গলবার মামলাটি উঠলে বেআইনি ভাবে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার অভিযোগে আদালতে হাজির হতে হবে মা-ছেলেকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৪:১৫
Share: Save:

বিহার ভোটের সাফল্যকে পুঁজি করে সংসদে প্রতিনিয়ত যখন শাসক দলকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা চালাচ্ছে কংগ্রেস, তখন দিল্লি হাইকোর্টের একটি নির্দেশে তারা নিজেরাই বিপাকে পড়ে গেল। ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় সনিয়া গাঁধী ও রাহুল গাঁধীকে নিম্ন আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিল দিল্লি হাইকোর্ট। যার অর্থ, নিম্ন আদালতে কাল, মঙ্গলবার মামলাটি উঠলে বেআইনি ভাবে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার অভিযোগে আদালতে হাজির হতে হবে মা-ছেলেকে।

প্রত্যাশিত ভাবেই দিল্লি হাইকোর্টের এই রায়ে আজ তোলপাড় পড়ে গিয়েছে জাতীয় রাজনীতিতে। আগামিকাল সকালে সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছেন সনিয়া ও রাহুলের আইনজীবীরা। সেখানে স্থগিতাদেশ পেলে অবশ্য কোর্টে হাজিরা দেওয়ার হাত থেকে আপাতত রেহাই পেতে পারেন ওঁরা।

সনিয়া গাঁধী চিকিৎসার জন্য আমেরিকায় গিয়েছিলেন। আজই দুপুরে দিল্লি ফিরেছেন। আদালতে কংগ্রেসের তরফে দুই আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি ও কপিল সিব্বল অবশ্য তার আগেই আজ জানিয়ে দেন, হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে কাল সকালেই তাঁরা শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হবেন। কংগ্রেস সভানেত্রী ও সহ-সভাপতির বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ নিয়ে মৌলিক কিছু প্রশ্ন তুলে স্থগিতাদেশ চাইবেন নিম্ন আদালত ও হাইকোর্টের রায়ের উপরে। সনিয়া-রাহুল ছাড়া আরও তিন জনের হাজিরা দেওয়ার কথা কাল। তাঁরা হলেন গাঁধী পরিবারের বন্ধু সুমন দুবে, কংগ্রেসের কোষাধ্যক্ষ মতিলাল ভোরা এবং স্যাম পিত্রোদা।

স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়ে ‘ন্যাশনাল হেরাল্ড’ খবরের কাগজটি শুরু করেছিলেন জওহরলাল নেহরু। ‘অ্যাসোসিয়েটেড জার্নাল লিমিটেড’ নামে একটি সংস্থার আওতায় ‘ন্যাশনাল হেরাল্ড’ ছাড়াও আরও দু’টি খবরের কাগজ প্রকাশিত হতো। কিছু দিন আগে বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী নিম্ন আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। তাঁর অভিযোগ, সনিয়া-রাহুল ‘ইয়ং ইন্ডিয়া’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে ‘ন্যাশনাল হেরাল্ডে’র বহু কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার চেষ্টা করছেন। কংগ্রেসের তহবিল থেকে ‘ন্যাশনাল হেরাল্ডে’র নব্বই কোটি টাকার ঋণ মেটানো হয়েছে। স্বামীর অভিযোগ, রাজনৈতিক দলের করমুক্ত টাকা এ ভাবে কোনও প্রতিষ্ঠানের দায় মেটাতে ব্যবহার করা যায় না। তা ছাড়া দায় মেটানোর পর মাত্র পঞ্চাশ লক্ষ টাকা দিয়ে ‘অ্যাসোসিয়েটেড জার্নাল লিমিটেড’-এর সম্পত্তি গাঁধী পরিবার নিজেদের কব্জায় এনে ফেলেছে বলে তাঁর দাবি।

উল্টো দিকে অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির দাবি, স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়ে ‘ন্যাশনাল হেরাল্ডে’র গৌরবময় ভূমিকা ছিল। সে কথা স্মরণে রেখে প্রতিষ্ঠানটিকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য কংগ্রেস ৯০ কোটি টাকা দিয়েছিল। সে জন্য কোনও সুদ ধার্য করা হয়নি। পরে ২০১০ সালে কোম্পানি আইনের ২৫ নম্বর ধারায় ‘ইয়ং ইন্ডিয়া’ নামে একটি অমুনাফাভোগী কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করা হয়। সনিয়া-রাহুল ছাড়াও কমিটিতে আরও তিন জন সদস্য ছিলেন। ন্যাশনাল হেরাল্ডের পুনরুজ্জীবনের জন্য কংগ্রেসের দেওয়া ৯০ কোটি টাকা ঋণ ‘ইয়ং ইন্ডিয়া’ নিজেদের ঘাড়ে নেয়। অভিষেকের বক্তব্য, ‘‘ইয়ং ইন্ডিয়া অমুনাফাভোগী সংস্থা হওয়ায় তার পরিচালন পর্ষদের কোনও সদস্য বেতন বা অন্য কোনও সুবিধা পান না। এমন সংস্থা কাউকে লাভের অংশও দিতে পারে না। তা হলে জালিয়াতি হল কোথায়?’’ তাঁর মতে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য এই মামলা করা হয়েছে। বিচারব্যবস্থার উপরে আস্থা রেখে কংগ্রেস এই মামলা লড়ে যাবে।

নিম্ন আদালতে মামলাটি দায়ের হওয়ার পরই সনিয়া ও রাহুল-সহ পাঁচ জনকে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য সমন পাঠানো হয়। তখন নিম্ন আদালতের ওই রায়ের উপরে স্থগিতাদেশ চায় কংগ্রেস। দিল্লি হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দেয়। তার পর থেকে স্থগিতাদেশ সংক্রান্ত মামলাটি চলতে থাকে হাইকোর্টে। অভিষেকের দাবি, হাইকোর্টে এ দিন মামলাটি তালিকায় ছিল না। নোটিসও দেওয়া হয়নি। হঠাৎ সকালে ফোন করে জানানো হয়, দুপুরে মামলাটি উঠবে। শুনানি শেষে হাইকোর্টের বিচারপতি সুনীল গৌড় বলেন, স্থগিতাদেশের আর্জি খারিজ করা হচ্ছে।

আদালতের রায়ের পর উচ্ছ্বসিত সুব্রহ্মণ্যম স্বামী। তিনি বলেন, ‘‘এটা হওয়ারই ছিল। কারণ স্পষ্টই জালিয়াতি হয়েছে।’’ অতীতে অরুণ জেটলিও বলেছিলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে দেখে মনে হচ্ছে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে মামলার সঙ্গত যুক্তি রয়েছে।’’ দলগতও ভাবে বিজেপির দাবি, এতে রাজনীতি নেই। বিষয়টি আদালতের এক্তিয়ারে। তবে সনিয়া-রাহুলকে আদালতে হাজিরা দিতে হলে যে বিজেপির রাজনৈতিক আক্রমণের পুঁজি বাড়বে, তাতে সন্দেহ নেই কোনও পক্ষেরই। কংগ্রেসের অভিযোগ, গোটা ঘটনাটাই একটি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। আজ হাইকোর্টের রায় ঘোষণার পর প্রবীণ আইনজীবী কে টি এস তুলসী বলেন, ‘‘ফৌজদারি আইনের অপব্যবহার করে সনিয়া-রাহুলকে মামলায় জড়ানো হচ্ছে। বড় জোর রেজিস্ট্রার অব কোম্পানিজ প্রক্রিয়াগত কারণে মামলা করতে পারত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE