দেশের রাজধানী দিল্লি। রাজধানীর রাস্তায় বেওয়ারিশ গরু দিল্লির বিজেপি সরকারের নতুন মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তের মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে।
দু’সপ্তাহ আগে দিল্লির শালিমার বাগে হায়দরপুর উড়ালপুলে মুখ্যমন্ত্রী কনভয় বেওয়ারিশ গরুর কনভয়ে আটকে গিয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী গাড়ি থেকে নেমে রাস্তা জুড়ে গরুর ভিড় দেখে চটে যান। আধিকারিকদের নির্দেশ দেন, এই সব বেওয়ারিশ গরু উদ্ধার করে গোশালায় নিয়ে যেতে হবে। রাস্তায় যাতে কোনও বেওয়ারিশ গরু ঘুরে না বেড়ায়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
শনিবার সকালে দিল্লির সড়কে ফের মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় যানজটে আটকে গিয়েছে। এ বারও রেখা টের পেয়েছেন, রাস্তার মাঝের আইল্যান্ডে পরপর গরু বসে, দাঁড়িয়ে রয়েছে। রাস্তায় মাঝেই লোকজন গাড়ি দাঁড় করিয়ে গরুকে রুটি খাওয়াচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রী গাড়ি থেকে নেমে এক গাড়ির আরোহীকে বলেন, গরুকে খাওয়াতে হলে গোশালায় গিয়ে খাওয়ান। রাস্তার মাঝখানে নয়। তাতে সড়ক দুর্ঘটনা হবে। এর পরে রীতিমতো বিবৃতি জারি করে মুখ্যমন্ত্রী অনুরোধ করেছেন, কেউ যেন রাস্তায় গরুকে খাবার না দেন।
প্রশ্ন হল, রাজধানীর রাস্তায় মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় আটকাতে এত গরু আসছে কোথা থেকে? বিরোধীরা বলছেন, আসলে গোরক্ষক বাহিনীর দাপটের খেসারত এখন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে দিতে হচ্ছে। এত দিন বিজেপিশাসিত উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানায় গোরক্ষক বাহিনীর দাপটে বেওয়ারিশ গরু বা ‘ছুট্টা জানোয়ার’-এর সংখ্যা বেড়েছে। কারণ দুধ দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া বা হাল টানতে না পারা রুগ্ণ গরুকে চাষি, পশুপালকরা বসিয়ে খাওয়াতে পারছেন না। অথচ গরু নিয়ে পশুর হাটে বেচতে গেলে গোরক্ষক বাহিনী তাড়া করছে। তাই চাষি, পশুপালকরা রাস্তায় গরু ছেড়ে দিচ্ছিলেন। বেওয়ারিশ গরু চাষের ক্ষেতে ঢুকে ফসল নষ্ট করছিল। সেই গরুর পাল এ বার সীমানা পেরিয়ে দিল্লি শহরে ঢুকতে শুরু করেছে।
রাস্তার মাঝখানে বেওয়ারিশ গরু ঘুরে বেড়ানোয় দিল্লিতে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে। গত বছর অগস্টে রোহিণীতে একজন ৭৫ বছরের বৃদ্ধ গরুর ধাক্কায় পড়ে গিয়ে মারা যান। সেপ্টেম্বরে দিল্লির প্রাণকেন্দ্র চাণক্যপুরীতে গরুর ধাক্কায় ১৯ বছরের বাইক আরোহীর মৃত্যু হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী আজ রাস্তায় গরুর জন্য খাবার না ফেলার অনুরোধ করলেও তার পরেও দিল্লির বিভিন্ন রাস্তায় বেওয়ারিশ গরুদের খাওয়ানোর দৃশ্য দেখা গিয়েছে।
কেন দিল্লির পুরসভাগুলি বেওয়ারিশ গরু সরিয়ে গোশালায় নিয়ে যাচ্ছে না? পুরসভাগুলির বক্তব্য, দিল্লির চারটি গোশালায় আর জায়গা নেই। বেওয়ারিশ গরুতে ভর্তি। মুখ্যমন্ত্রী নিজে বাজেটে দিল্লিতে আধুনিক গোশালা তৈরির জন্য ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন। দিল্লির বিধানসভায় বিজেপি বিধায়করাই বেওয়ারিশ গরুর ফলে ক্রমবর্ধমান সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে সরব হয়েছেন। দিল্লি সরকারের নগরোন্নয়ন মন্ত্রী আশিস সুদের বক্তব্য, ‘‘গোমাতাদের সংরক্ষণ ও সুরক্ষার জন্য একটি নতুন আইন তৈরি হবে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)