এখনও তিন মাস রয়েছে কর্মজীবনের। তা সত্ত্বেও যে ভাবে তাঁকে ছুটিতে পাঠানো হল তাতে ক্ষুব্ধ সিবিআইয়ের ‘প্রাক্তন’ প্রধান অলোক বর্মা। আজ ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আর্জি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি। আর্জিতে অলোক জানিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে নেওয়া সিদ্ধান্ত বেআইনি এবং তিনি কিছু তদন্তের ক্ষেত্রে সরকারের মর্জিমতো চলেননি বলেই এই পদক্ষেপ করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চে আগামী শুক্রবার ওই মামলাটির শুনানি হওয়ার কথা।
সিবিআইয়ের অভ্যন্তরীণ সংঘাত থামাতে গত কাল রাতে নজিরবিহীন ভাবে সিবিআই অধিকর্তা অলোক বর্মা ও বিশেষ অধিকর্তা রাকেশ আস্থানাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটিতে পাঠিয়ে দেয় কেন্দ্র। হাতিয়ার করা হয় সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিশন (সিভিসি)-র সুপারিশকে। যেখানে সিভিসি জানিয়েছে, গত ২৪ অগস্ট সিবিআই প্রধানের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ জমা পড়ে। তার ভিত্তিতে সিভিসি সিবিআইয়ের কাছে একাধিক ফাইল চেয়ে পাঠায়। বারংবার সুযোগ দেওয়া সত্ত্বেও সিবিআই কমিশনের কাছে সেই তথ্য দিতে পারেনি। সিভিসি-র পর্যবেক্ষণ, সিবিআই অধিকর্তা অসহযোগিতা করে কমিশনের কাজে বাধা সৃষ্টি করেছেন। তা ছাড়া সিবিআইয়ের দুই শীর্ষ কর্তার নজিরবিহীন সংঘাতে তদন্তকারী সংস্থার ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই দুই অফিসারকেই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে ছুটিতে পাঠানোর সুপারিশ করে কমিশন। সেই সুপারিশ মেনেই রাতারাতি ছুটিতে পাঠানো হয় অলোক ও রাকেশকে। দায়িত্ব নেন এম নাগেশ্বর রাও।
আজ শীর্ষ আদালতে বর্মার আইনজীবী গোপাল শঙ্করনারায়ণ জানান, সিবিআই যাতে নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করতে পারে সে জন্য ওই সংস্থার অধিকর্তা পদে থাকার মেয়াদ দু’বছর নির্দিষ্ট করে দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্টই। তা ছাড়া সিবিআই প্রধানকে ‘অসাধারণ পরিস্থিতি’ ছাড়া বদলি করা যাবে না বলেও স্পষ্ট করে দিয়েছিল শীর্ষ আদালত। সে ক্ষেত্রেও সিবিআই প্রধান বেছে নেওয়ার জন্য তৈরি কমিটির অনুমোদন প্রয়োজন। তা ছাড়়া প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলনেতা ও প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে গঠিত কলেজিয়ামের সম্মতি ছাড়া সিবিআই অধিকর্তাকে নিয়োগ বা সরানো হবে না বলে অন্য একটি মামলায় পেশ করা হলফনামায় জানিয়েছিল সরকারই। অলোকের আইনজীবী জানান, এ ক্ষেত্রে এ ভাবে সিবিআই প্রধানকে ছুটিতে পাঠানো আসলে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও ওই তদন্তকারী সংস্থার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা। সরকারি সূত্রের অবশ্য দাবি, ওই কলেজিয়ামের সম্মতি নিয়ে কাজ করা এখন কঠিন। কারণ, উপযুক্ত সংখ্যক আসন না থাকায় লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা মল্লিকার্জুন খড়্গেকে বিরোধী দলনেতার মর্যাদা দেওয়া হয়নি। ফলে কলেজিয়ামের বৈঠকে যান না তিনি। আবেদনে অলোক এ-ও জানিয়েছেন, কিছু তদন্তের গতিপ্রকৃতি সরকার যে ভাবে চাইছিল সেই পথে না এগোনোয় তাঁর বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আস্থানা সিবিআইয়ে যোগদানের পরে কী ভাবে বিভিন্ন সময়ে তদন্তে বাধা সৃষ্টি করেছেন তাও বিস্তারিত ভাবে আদালতের সামনে তুলে ধরেন অলোকের আইনজীবী। অলোক ঘনিষ্ঠদের মতে, রাফাল নিয়ে তদন্ত শুরু করতে চাইছিলেন সিবিআইয়ের ‘প্রাক্তন’ প্রধান। তাই আর দেরি না করে তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় নরেন্দ্র মোদী সরকার। পরবর্তী শুনানিতে অলোক আরও কিছু সরকার-বিরোধী বোমা ফাটাতে পারেন বলে আশঙ্কা রয়েছে সরকারের অন্দরে।
অলোক বর্মার সমর্থনে আজ মুখ খুলেছেন আইনজীবী ও সমাজকর্মী প্রশান্ত ভূষণ। তাঁর মতে, কলেজিয়ামের সিদ্ধান্ত ছাড়া এ ভাবে সিবিআই প্রধানকে সরানো যায় না। পাশাপাশি রাফাল প্রশ্নে আজ বিজেপির দুই প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যশবন্ত সিন্হা ও অরুণ শৌরি সুপ্রিম কোর্ট আর্জি পেশ করে জানিয়েছেন, সিবিআইয়ের উপরে ওই তদন্ত না করার জন্য চাপ রয়েছে। তাই অধিকর্তাকে সরে যেতে হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে সিবিআই যাতে ওই মামলার তদন্ত করে সে জন্য আবেদন জানিয়েছেন ওই দুই প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। প্রশান্ত ভূষণের মতে, ‘‘রাফাল প্রশ্নে সরকার অস্বস্তিতে। সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে ওই তদন্ত করার যে দাবি বিজেপির দুই প্রাক্তন মন্ত্রী তুলেছেন তা একেবারে সঠিক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy