ফাইল চিত্র।
এখনও ঘর জলে ডুবে। বিদ্যুৎ নেই। তবু ঘরদোর ফেলে রেখে কত দিন থাকা যায় আশ্রয়-শিবিরে?
বালেশ্বরের ভোগরাই বা ভদ্রকের বাসুদেবপুরে তাই বৃহস্পতিবার ঝাঁকে ঝাঁকে বিপন্ন নরনারী ঘরে ফিরেছেন। তবে তালসারির কাছে সুবর্ণদ্বীপের বাসিন্দাদের মতো কারও কারও এখনও ফেরা হয়নি। ঘরে এখনও সমুদ্রের জল ঢুকছে। তাই তাঁদের ঠেকিয়ে রাখে প্রশাসন। ভদ্রকের বাসুদেবপুর, বালেশ্বরে তালসারি থেকে উদয়পুর, চাঁদিপুর, ভোগরাই, বালিয়াপাল, বাহানাগার মতো কয়েকটি এলাকাও এখনও জলমগ্ন। এ দিনই মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক আকাশপথে দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেন। প্রশাসনের দাবি, বালেশ্বর, ভদ্রক, ময়ূরভঞ্জ জেলায় ক্ষয়ক্ষতি সবথেকে বেশি। তবে মানুষকে স্বস্তি দিতে নবীনের ঘোষণা, ১২৮টি জলমগ্ন গ্রামে আগামী সাত দিন শুকনো খাবার সরবরাহ করা হবে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৮০ শতাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ফেরানো, ক্ষতিগ্রস্ত বা অবরুদ্ধ গুরুত্বপূর্ণ সড়ক মুক্ত করার কথাও বলা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ঝড়কালীন দুর্ঘটনায় তিন জনের মৃত্যুর কথাই বলেছে প্রশাসন। রাজ্যের বিশেষ ত্রাণ কমিশনার প্রদীপকুমার জেনা বলেন, “ক্ষয়ক্ষতি জরিপ করে শীঘ্রই রাজ্য ক্ষতিপূরণের অঙ্কও ঘোষণা করবে।’’ ঝাড়খণ্ডে ঢোকার আগে ময়ূরভঞ্জ, কেওনঝড় ভাসিয়েছে ইয়াস। সিমলিপালের জঙ্গলে হড়কা বানের ঘটনাও ঘটেছে। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার একটি জোটের মুখপাত্র অক্ষয় বিসওয়াল ভুবনেশ্বর থেকে জানান, দুর্গত এলাকায় লোকজনের মধ্যে জলবাহিত নানা রোগের ভয় প্রবল।
তুলনায় ঝড়ের প্রভাব পড়েনি কেন্দ্রাপড়া, জগৎসিংহপুর, পারাদ্বীপ বন্দরে। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতির আশঙ্কায় পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের গা থেকে তাদের বসানো সিঁড়ি সরিয়ে দেয় ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ। পুরী কার্যত বৃষ্টিবিহীনই ছিল বুধবার। বৃহস্পতিবার থেকে পুরীর মন্দিরে আবার রথ তৈরির কাজও শুরু হয়েছে।
ইয়াসের মাটি ছোঁয়ার গ্রাম বরজদেউলি (বাহানাগা ব্লক) থেকে এ দিন দুপুরে স্থানীয় বাসিন্দা তথা সমাজকর্মী কিরণকুমার বেহেরা বলছিলেন, “২০-২৫টি গ্রামে মানুষের জীবিকার দফা রফা হয়েছে। হয় মাছ ধরার বোট, জাল ধ্বংস হয়েছে নয় তো খেতে নোনা জল ঢুকেছে। ধান চাষ বা চিংড়ি চাষ শেষ। অনেকের মাথাতেই মস্ত ঋণের বোঝা। ঘুরে দাঁড়ানোর রাস্তা জানা নেই।” ওই তল্লাটে চাঁদিপুর থেকে ধামরা প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার টাওয়ারের জন্য গড়ে ওঠা পাকা রাস্তাই এই দুর্দিনে যোগাযোগ ব্যবস্থাটুকু চালু রেখেছে। খারাসাহাপুর, অবানা, বারিপদা, তালপদা, আরুহাবাদ, বিষ্ণুপুর, অঞ্চলের ২০-২৫টি গ্রামের অবস্থা একেবারেই সঙ্গীন। তবু এই দুর্যোগেই শোনা যাচ্ছে নতুন জীবনের পদধ্বনি। সম্ভাব্য বিপন্ন এলাকায় প্রায় ৬৫০০ জন অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়েছিল প্রশাসন। ইয়াস আছড়ে পড়ার দিনেই বিভিন্ন জেলায় ৩০০ জন সুষ্ঠু ভাবে মা হয়েছেন। বালেশ্বরের পরাখির সোনালি মাইতি সংবাদসংস্থাকে জানিয়েওছেন, তাঁর ছেলের নাম ‘ইয়াস’ই রাখবেন তিনি। এত বড় দুর্যোগের রেশ কি সহজে ভোলা যায়?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy