অবিক্রীত: বিনা পয়সায় পাওয়া পেঁয়াজ এখন গরুর খাদ্য। মহারাষ্ট্রের নাশিকে। নিজস্ব চিত্র
কলকাতায় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কিলো প্রতি ২০ টাকায়। মহারাষ্ট্রের নাশিকের কিসান মান্ডিতে সেই পেঁয়াজের দর এখন দাঁড়িয়েছে কিলো প্রতি মাত্র পাঁচ পয়সা! তাই চাষির ফলানো পেঁয়াজ এখন খাচ্ছে গরু।
নাশিকের নিপাড এলাকার পেঁয়াজ চাষি সঞ্জয় শাঠে গত নভেম্বরে ৭৫০ কুইন্টাল পেঁয়াজ বেচে পেয়েছিলেন ১০৬৪ টাকা। অর্থাৎ, কিলোপ্রতি ১ টাকা ৪১ পয়সা করে। ৪০ কিলোমিটার দূরের কিসান মান্ডিতে এই পেঁয়াজ বিক্রি করতে গিয়ে গাড়িভাড়া ও মজুরি বাবদ তাঁর খরচ হয়েছিল ১১০০ টাকা। এই লোকসানে ক্ষিপ্ত সঞ্জয় বিক্রির পুরো টাকাটাই ‘মানি-অর্ডার’ করে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে। এই নিয়ে দেশ জুড়ে শোরগোল হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে বিষয়টি তদন্ত শুরু করা হয়। নাশিকের পেঁয়াজ চাষিদের কাছে গিয়ে তাঁদের সমস্যা সমাধানের কথাও শোনান রাজ্য প্রশাসনের কর্তারা।
এর পরে আশায় বুক বেঁধেছিলেন নাশিকের পেঁয়াজ চাষিরা। রবিবার নিপাড থেকে ফোনে সঞ্জয় বলেন, ‘‘আমরা বলেছিলাম, যেন কোনও পেঁয়াজ-চাষিকে দেনার দায়ে আত্মহত্যা না করতে হয়। পেঁয়াজের বিক্রি করে যাতে আমরা উৎপাদনের খরচটুকু তুলতে পারি, তা দেখুন প্রধানমন্ত্রী। অফিসারেরা আমাদের সব কথা লিখে নিয়ে গেলেন। বললেন, প্রধানমন্ত্রীর দফতরে সব রিপোর্ট পাঠিয়ে দেওয়া হবে।’’
সেই আশাতেই তখন আর কম দামে পেঁয়াজ বেচেননি অনেকেই। রোজই ভেবেছেন, এ বার কিছু হবে। এ ভাবে গড়িয়ে গিয়েছে দু’মাস। সঞ্জয় বলেন, ‘‘আর পেঁয়াজ রাখা যাবে না। নতুন পেঁয়াজ উঠছে। পুরনো পেঁয়াজেও চারা বেরিয়ে যাচ্ছে।’’ এর মধ্যে সবাই কিসান মান্ডিতে গিয়ে জানতে পারেন, এখন কুইন্টাল পিছু ৫০ টাকা করে পুরনো পেঁয়াজ বিক্রি করতে হবে। অর্থাৎ, কিলো প্রতি ৫ পয়সা দরে। নিপাডের আর এক পেঁয়াজ চাষি খান্ডু বোরগড়ে বলেন, ‘‘সরকারের উপর ভরসা করেই ভুল করেছিলাম। এখন এত পেঁয়াজ ফেলে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই।’’
কিন্তু ফেলতে গেলেও তো গাড়িভাড়া আর মজুর লাগবে? সমস্যার সমাধানে এগিয়ে এসেছেন গো-পালকেরা। সঞ্জয় বলেন, ‘‘আমাদের এলাকায় রাজস্থান থেকে আসা অনেক গো-পালকের দল রয়েছে। তাঁরা গরুর গাড়ি নিয়ে এসে পেঁয়াজ তুলে নিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা সেই পেঁয়াজ নিয়ে গিয়ে গরুকে খাওয়াচ্ছেন।’’ কিন্তু এর পর?
সঞ্জয় বলেন, ‘‘গত বছর ব্যাঙ্ক থেকে আড়াই লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে পেঁয়াজ লাগিয়েছিলাম। ধার শুধতে পারিনি। এ বার বাধ্য হয়ে মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা ধার নিয়েছি। স্ত্রীর গয়না ও বাড়ির চারটে ছাগলও বিক্রি করেছি। আবার পেঁয়াজ ফলিয়ে এ বারের মতো অবস্থা হলে কী হবে জানি না!’’ ফোনের ও ধারে গলা ধরে এল সঞ্জয় শাঠের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy