কেন্দ্র আবার চিঠি পাঠানোয় ক্ষুব্ধ নবান্ন।—ফাইল চিত্র।
করোনা মোকাবিলায় ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে আজ ফের রাজ্যকে কড়া চিঠি পাঠাল কেন্দ্র। গত কয়েক দিন ধরে কেন্দ্রীয় দল রাজ্যের সাতটি জেলা ঘুরে যে-রিপোর্ট দিয়েছে, তার ভিত্তিতেই ত্রুটিগুলি অবিলম্বে শোধরাতে বলে আজ বিকেলে মুখ্যসচিব রাজীব সিংহকে চিঠি পাঠান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভল্লা।
রাজ্য সফর শেষে দিন দুয়েক আগে নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে ও পরামর্শ দিয়ে রাজীব সিংহকে চিঠি দেন কেন্দ্রীয় দলের প্রধান অপূর্ব চন্দ্র। তার পরেও কেন্দ্র আবার চিঠি পাঠানোয় ক্ষুব্ধ নবান্ন। শিক্ষামন্ত্রী তথা তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘এই পত্রযুদ্ধ আমাদের কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছে! এখন বৈরিতা ছেড়ে সহযোগিতার মনোভাব নেওয়া উচিত। অথচ কেন্দ্র যেন গোয়েন্দাগিরি করে চলেছে। সঙ্কটকালে এই মনোভাব বিপজ্জনক।’’
গোড়া থেকেই পশ্চিমবঙ্গের বিরুদ্ধে কম পরীক্ষা করার অভিযোগ তুলেছিলেন বিরোধীরা। আজ চিঠিতে প্রথমেই সেই বিষয়টি তুলে ধরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব লিখেছেন, জনসংখ্যার অনুপাতে রাজ্যে খুবই কম পরীক্ষা হয়েছে। অথচ রাজ্যে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা বেশ বেশি। প্রায় ১৩.২ শতাংশ। ভল্লার মতে, ওই পরিসংখ্যান হল রাজ্যে করোনা আক্রান্তদের চিহ্নিতকরণ, পরীক্ষা ও নজরদারির ক্ষেত্রে ত্রুটির প্রতিচ্ছবি।
বুধবার রাজ্যকে পাঠানো কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিবের চিঠি।
কেন্দ্রের পর্যবেক্ষণকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে আইএমএ-র রাজ্য শাখার সাধারণ সম্পাদক তথা তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিবের চিঠিতে একাধিক ভুল তথ্য রয়েছে। বিজেপি যে-সুরে কথা বলছে, সেই সুরেই কথা বলছেন তিনি।’’ তাঁর দাবি, ‘‘গত কাল পর্যন্ত দেশে সংক্রমণের হার ৬%। আর রাজ্যে ছিল ২.৪%। পরীক্ষা বৃদ্ধির হিসেবেও রাজ্য এগিয়ে। গত কাল পর্যন্ত সারা দেশে এই হার ছিল ১২২%। আর আমাদের রাজ্যে ছিল ৬৬৪%।’’
ভল্লার অবশ্য অভিযোগ, যাঁরা সংক্রমিত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে এসেছেন, তাঁদের খুঁজে বার করা ও তাঁদের উপরে নজরদারির ক্ষেত্রে এ রাজ্যে বড়সড় ফাঁক রয়ে গিয়েছে। কত বাড়ি ঘুরে ঘুরে কোভিড উপসর্গ খুঁজে দেখার চেষ্টা হয়েছে, সেই সম্পর্কে কোনও তথ্য জানায়নি রাজ্য। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় আরও বেশি করে পরীক্ষার সুপারিশ করেছেন তিনি।
পাহাড়ি জেলাগুলিতে পরীক্ষা কেন্দ্র তৈরির উপরে জোর দিয়ে কেন্দ্র বলেছে, নমুনা শিলিগুড়িতে এনে পরীক্ষা করা সময়সাপেক্ষ ও সমস্যার। এতে সংক্রমিতের সংস্পর্শে কারা এসেছেন, তা খুঁজতে দেরি হয়, রোগীর জীবনও সঙ্কটাপন্ন হয়।
আরও পড়ুন: হাজার ছাড়াল বঙ্গের সক্রিয় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা, মৃত ৭২
নাম না-করে টিকিয়াপাড়ায় পুলিশের উপরে হামলার সমালোচনা করেছে কেন্দ্র। কলকাতা ও হাওড়ার বিভিন্ন স্থানে লকডাউনের নিয়ম ভাঙা হচ্ছে বলে সরব হয়েছেন ভল্লা। তিনি লিখেছেন, কলকাতা ও হাওড়ার কিছু ‘নির্দিষ্ট এলাকায়’, কিছু ‘নির্দিষ্ট গোষ্ঠী’ লকডাউন ভাঙার সঙ্গেই পুলিশ-সহ করোনা যোদ্ধাদের (চিকিৎসাকর্মী) উপরে হামলাও চালাচ্ছে। রাজ্যে চিকিৎসাকর্মীদের একঘরে করার প্রবণতা ও নিভৃতবাসের অভাব উদ্বেগজনক বলে জানিয়েছেন তিনি। শান্তনুবাবুর পাল্টা দাবি, স্বরাষ্ট্রসচিবের চিঠিতে রাজ্যবাসীর পাশাপাশি চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীদেরও অসম্মান করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বাঙালি বিজ্ঞানীদের তৈরি ৫০০ টাকার কিট, দ্রুত করোনা পরীক্ষায় সক্ষম
এর আগে রাজ্যের বাজারগুলিতে ভিড় নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছিল কেন্দ্র। আজ ফের ভিড়ে ভরা বাজারে মাস্ক না-পরে মানুষের আনাগোনা, জঞ্জাল সাফ না-হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে তারা। কেন্দ্রীয় দল রাজ্য ঘুরে দেখেছে, কন্টেনমেন্ট এলাকায় লোকে নদীতে স্নান করছে, ক্রিকেট-ফুটবল খেলছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক মনে করেছে, ভিড়ের উপর নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে এ হল জেলা প্রশাসনের অসচেতনতার নমুনা। মজদুর শ্রেণির মধ্যে গোষ্ঠী সচেতনতার অভাব চিন্তার কারণ, তাই তাদের বোঝানো ও প্রয়োজনে আইন অমান্যকারীদর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রাজ্যে বহু চিকিৎসাকর্মী কোভিডে আক্রান্ত। মারা গিয়েছেন কেউ কেউ। অভিযোগ গ্লাভস-মাস্ক, পিপিই কিট নিয়েও। চিঠিতে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চের নিয়ম মেনে সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহ করতে বলা হয়েছে। রাজ্যবাসীর অভিযোগ শোনা ও তার সমাধান করার জন্য অভিযোগ গ্রহণ কেন্দ্র খুলতে বলেছে কেন্দ্র।
কেন্দ্রীয় দলের কাছে অভিযোগ জমা পড়েছে যে, দার্জিলিং ও শিলিগুড়িতে প্রথম দফা লকডাউনের সময়ে কম মজুরি দেওয়া হয়েছে। ওই ক্ষতিপূরণ মেটানো ও কেন্দ্রের নিয়ম মেনে গরিব ও পরিযায়ী শ্রমিকদের সব ধরনের সাহায্য করতে নির্দেশ দিয়েছেন ভল্লা।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy