গোড়া থেকেই পশ্চিমবঙ্গে করোনা পরীক্ষা কম হচ্ছে বলে সতর্ক করছিল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। আজ খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানালেন, করোনা পরীক্ষার প্রশ্নে পিছিয়ে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। তবে পরীক্ষার নিরিখে তালিকার শেষের দিকে রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর নিজের রাজ্য গুজরাত-সহ উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও তেলঙ্গানাও। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দাবি, প্রধানমন্ত্রী যে পাঁচটি রাজ্যের নাম নিয়েছেন, তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি সব থেকে খারাপ। সব থেকে কম পরীক্ষা হচ্ছে বঙ্গেই।
দেশে করোনা সংক্রমণের হার সর্বাধিক, এমন ১০টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে আজ বৈঠকে বসেছিলেন মোদী। পরিসংখ্যান বলছে, গোটা দেশে সক্রিয় করোনা রোগীদের আশি শতাংশের বসতি হচ্ছে ওই ১০টি রাজ্যে। দেশের ৮২ শতাংশ মৃত্যুর খবর আসছে ওই রাজ্যগুলি থেকেই। বৈঠকে নিজের বক্তব্যে মূলত পরীক্ষা বাড়ানোর উপরে জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘কেন্দ্রের লক্ষ্যই হল মৃত্যুহার এক শতাংশের নীচে নামিয়ে আনা। পরীক্ষা যত বাড়বে তত লক্ষ্য অর্জনে আমরা এগিয়ে যাব। এই ১০ রাজ্যে করোনা সংক্রমণকে রুখে দিতে পারলেই দেশ জিতে যাবে।’’
স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই মুহূর্তে দেশে ফি দিন প্রতি দশ লক্ষ জনসংখ্যায় গড়ে ৫০৬টি পরীক্ষা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে ওই সংখ্যাটি হল ২৫৬। সেখানে তেলঙ্গানায় ৩৩৭, গুজরাতে ৩৮৯, উত্তরপ্রদেশে ও বিহারে যথাক্রমে দিনে ৩৯৮ ও ৫১৯। জাতীয় গড়ের নীচে থাকা রাজ্যগুলিকে তাই পরীক্ষা বাড়ানোর উপরে জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘যে রাজ্যে পরীক্ষা কম হচ্ছে অথচ সংক্রমণের হার বেশি, সেখানে পরীক্ষা বাড়ানোর দরকার রয়েছে।’’ বিশেষজ্ঞদের মতে, সংক্রমণের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে রোগীকে চিহ্নিত করা প্রয়োজন। সেই ব্যক্তির সংস্পর্শে কারা এসেছেন, তাঁদের নজরদারি ও পরীক্ষার আওতায় নিয়ে আসতে পারলেই সংক্রমণের হার কমতে বাধ্য। স্বাস্থ্যকর্তাদের মতে, পরীক্ষা বাড়লে রোগী দ্রুত চিহ্নিত হবেন। রোগ কম ছড়াবে।
পরে স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সাপ্তাহিক সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘‘সংক্রমণের হার পাঁচ শতাংশের নিচে না আসা পর্যন্ত রাজ্যগুলিকে পরীক্ষা বাড়িয়ে যেতে বলা হয়েছে।’’ স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রের মতে, এই মুহূর্তে সংক্রমণের হারের প্রশ্নে জাতীয় গড় হল ৯ শতাংশের উপরে। আজ প্রধানমন্ত্রী যে ১০টি রাজ্যের সঙ্গে বৈঠক করেন, তাদের সংক্রমণের হারের গড় ১০-১৫ শতাংশের কাছাকাছি। ফলে প্রথম ধাপে জাতীয় গড় ও পরবর্তী পর্যায়ে সংক্রমণের হার পাঁচ শতাংশের কাছাকাছি নামিয়ে আনতে রাজ্যগুলিকে পরীক্ষা সংখ্যা এক ধাক্কায় অনেকটাই বাড়াতে হবে বলেই মত কেন্দ্রের। বৈঠকে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার জানান, খুব দ্রুত তারা ফি দিন ৭৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে এক লক্ষ পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গ, পঞ্জাব ও তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীরা করোনা মোকাবিলায় বাড়তি অর্থ সাহায্যের দাবি করেছেন। অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী জগন্মোহন রেড্ডি জানান, রাজ্য বিভাজনের পরে স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর প্রশ্নে তাঁর রাজ্য দুর্বল হয়ে পড়েছে। রাজ্যে একাধিক বড় মাপের হাসপাতাল গড়তে কেন্দ্রীয় সাহায্য চান তিনি। পড়শি তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও করোনা থেকে শিক্ষা নিয়ে গোটা দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর পক্ষে সওয়াল করেন। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের দাবি, করোনার বিভিন্ন ভাইরাসের চরিত্রগত পার্থক্য নিয়ে আরও গবেষণা করা হোক।
মুখ্যমন্ত্রীদের দাবিদাওয়া নিয়ে নিজের বক্তব্যে নীরব ছিলেন মোদী। বরং তিনি সমস্ত মুখ্যমন্ত্রীদের কেন্দ্রের সঙ্গে তালমিল রেখে এগানোর প্রশ্নে সওয়াল করেন। দিল্লি ও জাতীয় রাজধানী অঞ্চলের সংক্রমণ এক সময়ে কেন্দ্র যে ভাবে সামলেছিল, তার উদাহরণ দিয়ে মোদী বলেন, ‘‘কনটেনমেন্ট জোনকে সম্পূর্ণ আলাদা করতে হবে। দরকারে মাইক্রো কনটেনমেন্ট জোন গঠন করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরীক্ষা করতে হবে। রিকশা-অটোচালক ও পরিচারিকাদের পরীক্ষা, সংক্রমিত ও সেই সংক্রমিতদের সংস্পর্শে আসাদের নজরদারিতে রাখতে পারলেই ১০ দিনে পরিস্থিতি ইতিবাচক দিকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।’’