মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।—ছবি পিটিআই।
করোনা-পরিস্থিতিতে নিজামুদ্দিন-কাণ্ড নিয়ে আগে থেকে সতর্ক করা হলে রাজ্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে পারত বলে তৃণমূল সরকারের দাবি। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রের ভূমিকা নিয়ে বুধবার প্রশ্ন তুলেছে তারা। এই অবস্থায় দিল্লির নিজামুদ্দিনে তবলিগ সমাবেশ-ফেরত লোকজনকে চিহ্নিত করে তাঁদের কোয়রান্টিন বা নিভৃতবাসের আওতায় আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছে রাজ্য।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন নবান্নে বলেন, ‘‘কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন, নিজামুদ্দিনে কারা গিয়েছিলেন? এটা নিয়ে অত উদ্বিগ্ন হওয়ার দরকার নেই। ১৩ মার্চের একটা চিঠি আমাদের কাছে আছে। ওই দিন নিজামুদ্দিনের সমস্যাটা হয়েছিল। গ্যাপটা হয়েছে সেই কারণে।’’ পাশে বসা মুখ্যসচিব রাজীব সিংহকে কেন্দ্রের চিঠিটি পড়ার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যসচিব জানান, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের সচিব প্রীতি সুদান চিঠি দিয়ে করোনা নিয়ে সব রাজ্যের উদ্যোগের প্রশংসা করেছিলেন। পারস্পরিক দূরত্বের কথা লিখেছিলেন তিনি। সার্বিক ভাবে মানুষের স্বার্থে রাজ্যগুলি যে নির্দেশ দিতে পারে, তা-ও জানানো হয়েছিল। মুখ্যসচিব বলেন, ‘‘মূল কথা, কেন্দ্র ১৩ মার্চ আমাদের লিখেছে, করোনা এ দেশে এপিডেমিক বা মহামারি নয়।’’
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘এই জন্যই বলছি, আগে জানতে পারলে অনেক সাবধানতা অবলম্বন করা যেত। তবলিগ-জমায়েতের কথা আমরা অনেক দেরিতে জানতে পেরেছি। যাঁরা গিয়েছিলেন, তাঁরা সহযোগিতা করছেন। বাকিদেরও বলব, যদি কেউ গিয়ে থাকেন এবং যদি কেউ মিশেও থাকেন, সরকারকে জানান। তা হলে আমরা বাড়িতে, কোয়রান্টিন কেন্দ্রে আইসোলেশনে রাখতে পারি। যাতে আপনি এবং আপনার পরিবার ভাল থাকে। ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। এটা বাড়ির মতোই।’’ মুখ্যমন্ত্রী জানান, মঙ্গলবার ৫৪ জনকে নিভৃতবাসে পাঠায় রাজ্য। তাঁর কথায়, ‘‘কেন্দ্র জানিয়েছিল, বাংলা থেকে ৭১ জনের মতো গিয়েছিলেন। ৪০ জন বিদেশিকে খুঁজে বার করতে পেরেছি। তাঁদের মধ্যে মায়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, তাইল্যান্ডের মানুষ আছেন। ওই ৪০ জন-সহ ৫৪ জনকে কোয়রান্টিন করা হয়েছে। বিদেশ বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক রাজ্যের হাতে নেই। কেন্দ্র এই সব তথ্য না-দিলে আমরা পাই না। তথ্য পাওয়ার পরে যাচাই করে সহযোগিতা পেয়েছি।’’
মমতা জানান, বাঁকুড়া, উত্তর দিনাজপুর, মগরাহাটের কিছু জায়গার নাম মিলেছে। খোঁজ নিচ্ছে প্রশাসন। তাঁর কথায়, ‘‘এতে ভয় পাওয়ার বা জাতের নামে বজ্জাতি করার কারণ নেই। আশা করছি, আরও ৩০ জনকে কোয়রান্টিনে আনতে পারব, যাতে তাঁরা ভাল থাকেন।’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘ঘটনার পরে কেন্দ্রের দিকে আঙুল তোলা হচ্ছে। কিন্তু কেন্দ্র যদি ওই অনুষ্ঠান বন্ধ করত, তখন বলা হত, বিশেষ একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উপরে আঘাত হানা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী আর্জি জানিয়েছেন, গুলি তো আর চালাতে পারেন না! এই ধরনের জমায়েত বন্ধ হওয়া উচিত।’’
এক স্বাস্থ্যকর্তা জানান, এ দিন অসমের চার জন তবলিগ প্রতিনিধির করোনা সংক্রমণের খবর মিলেছে। ফলে বাংলা নিয়েও চিন্তা যাচ্ছে না। কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেট সচিব রাজীব গৌবা রাজ্যের মুখ্যসচিবদের সঙ্গে ভিডিয়ো-সম্মেলনে এই নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, এ-পর্যন্ত ৩০০ জন তবলিগ প্রতিনিধি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। দু’জন বিদেশি প্রতিনিধি মারা গিয়েছেন। আরও ২১ জনের দেহে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। দেশীয় প্রতিনিধিদের মধ্যে মারা গিয়েছেন ন’জন। ১০৬ জনের লালারসের নমুনার রিপোর্ট পজ়িটিভ। তাঁদের খুঁজে বার করতে হবে। ওঁদের মাধ্যমে কাদের করোনা হয়েছে, তা জানতে ‘ইন্টেনসিভ কনট্যাক্ট ট্রেসিং’ হবে।
ওই সমাবেশে গিয়ে কাটোয়ার পাঁচ বাসিন্দা দিল্লিতেই নিভৃতবাসে আছেন। নিজামুদ্দিনে যোগ দেওয়া ৩০ বিদেশি-সহ ৩৭ জনের হদিস মিলেছে আসানসোলে। সংক্রামক বিশেষজ্ঞ, আসানসোল পুরসভার চিকিৎসক শামিম আলম জানান, ৩৭ জনের মধ্যে ১১ জন ইন্দোনেশিয়া এবং ১৯ জন বাংলাদেশের নাগরিক। তিন জন হায়দরাবাদ, দু’জন অসম এবং দু’জন পানাগড়ের বাসিন্দা। তাঁরা কলকাতার বেলগাছিয়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম বর্ধমানের ডিসেরগড় হয়ে ২৯ মার্চ আসানসোলের রেলপাড় এলাকার তিনটি মসজিদে এসে ওঠেন। তাঁদের তিনটি মসজিদে নিভৃতবাসে রাখা হয়েছে। হলদিয়া এলাকার পাঁচ জন হলদিয়া মহকুমা হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।
স্বাস্থ্য দফতরের খবর, তবলিগ সভায় থাকা মুর্শিদাবাদের দু’জনের করোনা-উপসর্গ নেই। তাঁদের গৃহবন্দি থাকতে বলা হয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনা থেকে ওই সভায় যাওয়া তিন যুবককে কোয়রান্টিনে রেখেছে দিল্লি পুলিশ। দক্ষিণ ২৪ পরগনার উস্তি, মহেশতলা, মগরাহাট, মন্দিরবাজারের অনেকে ওই জমায়েতে গিয়েছিলেন। ৪৭ জনকে শনাক্ত করে কলকাতার হজ হাউসে পাঠানো হয়েছে। ওই সভায় থাকা সাত বিদেশি মৌলবি-সহ ন’জনকে রাজারহাটের কোয়রান্টিনে পাঠিয়েছে প্রশাসন। মঙ্গলবার রাতে খড়্গপুর গ্রামীণের সতকুঁই মসজিদ থেকে ওই ন’জনকে বার করে আনা হয়। কাদের সংস্পর্শে এসেছিলেন তাঁরা, জানার চেষ্টা চলছে। ১১ মার্চ সাত মৌলবি ইন্দোনেশিয়া থেকে এসে নিজামুদ্দিনের সমাবেশে যোগ দেন। দিল্লি থেকে পূর্বা এক্সপ্রেসে ১৭ মার্চ তাঁরা পৌঁছন খড়্গপুরে। তার পর থেকে চলছিল ধর্মপ্রচার। ছ’জনের হদিস মিলেছে মাথাভাঙা-দিনহাটায়। তাঁদের গৃহবন্দি করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy