Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
W Ian Lipkin

Coronavirus in India: অতিমারির দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়তে চলেছে, করোনা-যুদ্ধে ‘বর্মহীন’ ভারতকে সতর্কবার্তা

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৮ অক্টোবর পর্যন্ত ভারতে ২৬ কোটি বাসিন্দার টিকাকরণ সম্পূর্ণ হয়েছে।

গায়ে গায়ে: পঞ্চমীতে ঠাকুর দেখার ভিড়ে হারিয়েছে কোভিড-বিধি। দমদম পার্ক ভারতচক্র। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

গায়ে গায়ে: পঞ্চমীতে ঠাকুর দেখার ভিড়ে হারিয়েছে কোভিড-বিধি। দমদম পার্ক ভারতচক্র। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২১ ০৬:২৬
Share: Save:

এ দেশে বছরের শেষ তিনটে মাস উৎসবের। দুর্গাপুজো থেকে শুরু করে বড়দিন পেরিয়ে নববর্ষে শেষ। সেই ‘শেষ’ নিয়েই দুশ্চিন্তায় বিশেষজ্ঞেরা। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের চোরাস্রোত এখনও বইছে স্বজনহারা বহু পরিবারে। তারই মধ্যে সেজেছে শহর। জনস্রোত নামছে উৎসবের রাস্তায়। ইতিমধ্যে ১৩৯ কোটির দেশকে ভাইরোলজিস্ট ডব্লিউ ইয়ান লিপকিনের সতর্কবার্তা— করোনা-যুদ্ধে ভারত এখনও ‘বর্মহীন’।

মোট টিকাকরণের হিসেবে বিশ্বের বহু দেশের থেকে এগিয়ে রয়েছে ভারত। ২৬ কোটি ৬৪ লক্ষ বাসিন্দার টিকাকরণ সম্পূর্ণ (দু’টি টিকা) হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। কিন্তু ১৩৯ কোটির দেশে তা যে কিছুই নয়, সে কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন ভাইরোলজিস্ট লিপকিন। তাঁর সাবধানবাণী, যে ভাবে ভারতে লকডাউন তুলে দেওয়া হয়েছে, করোনা-বিধি লঘু করে দেওয়া হয়েছে, তা কোনও ভাবেই নিরাপদ নয়।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৮ অক্টোবর পর্যন্ত ভারতে ২৬ কোটি বাসিন্দার টিকাকরণ সম্পূর্ণ হয়েছে। যা দেশের মোট বাসিন্দার নিরিখে ১৮.৮ শতাংশ। অন্তত একটি টিকা পেয়েছেন ৬৮.০৫ কোটি ভারতীয়। অর্থাৎ প্রায় ৫০ শতাংশ নাগরিক। গত ২৪ ঘণ্টায় কোভিড টিকা দেওয়া হয়েছে ৩২ লক্ষ ভারতীয়কে। দৈনিক টিকাকরণের রেকর্ড আড়াই কোটি। কিন্তু এই বিশাল অঙ্কের আড়ালেও করোনার অতিসংক্রামক স্ট্রেনের ছায়া রয়েছেই।

একটি ভারতীয় সংবাদ সংস্থার অনুষ্ঠানে লিপকিন জানান, পুণের সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া বিশ্বের সর্ববৃহৎ টিকাপ্রস্তুতকারী সংস্থা। ভারতের জন্য তা গর্বের। টিকাকরণে বিশ্বে নেতৃত্ব দিচ্ছে এই প্রতিষ্ঠান। কিন্তু ভারতের বিপুল জনসংখ্যার ভারে টিকাকরণের শতকরা হিসেব খুবই কম। লিপকিন বলেন, ‘‘আপনাদের দেশের জনসংখ্যার ২০ শতাংশেরও কম টিকাকরণ হয়েছে। তা ছাড়া, জনসংখ্যার ৩০% এখনও প্রাপ্তবয়স্ক নয়। ১৮ বছরের নীচে এই অংশের টিকাকরণে ছাড়পত্র দেয়নি ভারত সরকার। যার অর্থ, দেশে লকডাউন তুলে দেওয়ার জন্য যে ‘বর্ম’ প্রয়োজন, তা আপনাদের কাছে নেই।’’

প্রবীণ ভাইরোলজিস্ট আরও বলেন, ‘‘অতিমারির দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে তো কেউ কথাই বলছে না। আমার বিশ্বাস, এর কিন্তু ব্যাপক প্রভাব পড়তে চলেছে।’’ কী রকম? বিজ্ঞানীর বক্তব্য, করোনা থেকে সেরে ওঠার পরে অনেকেই নানা ধরনের জটিল কোভিড-পরবর্তী সমস্যায় ভুগছেন। সেই সমস্যাগুলি কখনও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব বিস্তার করছে। কখনও আবার চিরস্থায়ী ক্ষতি করে দিচ্ছে। লিপকিন বলেন, ‘‘অন্য কোনও জটিল অসুখে রুগ্‌ণ কিংবা শারীরিক ভাবে দুর্বল ব্যক্তিই যে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তা কিন্তু নয়। যাঁরা হয়তো কোভিডে সামান্যই ভুগেছেন, দেখা যাচ্ছে তাঁদেরও নানা ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে। শ্বাসকষ্ট, ক্লান্তি শরীর জুড়ে জাঁকিয়ে বসছে। অনেকের মস্তিষ্কে ক্ষতি হচ্ছে, কোনও কিছু দেখে চেনা ও বোঝার সমস্যায় ভুগছেন তাঁরা। আতঙ্কের হচ্ছে, এই সংখ্যাটা মোট সংক্রমিতের প্রায় ৩০ শতাংশ।’’

ভয়ের কারণ আরও বিশদ ব্যাখ্যা করে লিপকিন বলেন, ‘‘হঠাৎ কোনও জাদুবলে যদি করোনাভাইরাস বিলুপ্তও হয়, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত এই মানুষগুলো কিন্তু শারীরিক জটিলতা নিয়েই থেকে যাবেন এবং ভবিষ্যতে এর ব্যাপক প্রভাব পড়বে। আগামী কয়েক দশক হয়তো এর জন্য ভুগতে হবে আমাদের সকলকে।’’

অতএব উপায় হল, অতীত ও অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেওয়া। শুধু রোগ-প্রতিরোধ নয়, সংক্রমণ-রোধেরও উপায় বার করা। ১৯১৮ সালে স্প্যানিশ ফ্লু ছড়িয়েছিল বিশ্বে। লিপকিন বলেন, ‘‘তার ঘা এখনও বয়ে চলেছে পৃথিবী। কোভিড-১৯-ই যে অতিমারির সর্বশেষ ভয়ানক রূপ, এমন মনে করার কারণ নেই।’’ এত দিনে মানুষ যা যা শিখেছে, আগামী কয়েক বছর তা মনে রাখা উচিত বলে মনে করেন ভাইরাস-বিশেষজ্ঞ।

অন্য বিষয়গুলি:

W Ian Lipkin Virologist Coronavirus in India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy