ভোপাল এমস।
আহ্বান জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাতে সাড়া দিয়ে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামনের সারিতে থাকার জন্য চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের সম্মান জানাতে থালা-তালি বাজিয়েছিল গোটা দেশ। আর এখন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে হেনস্থার শিকার হচ্ছেন সেই চিকিৎসক- স্বাস্থ্যকর্মীরাই। এ বার তাঁদের উপরে হামলার অভিযোগ উঠেছে মধ্যপ্রদেশের ভোপাল, দিল্লি এবং হরিয়ানার পঞ্চকুলায়। ভোপালের ঘটনায় অভিযোগের তির পুলিশের দিকেই। এর আগে মধ্যপ্রদেশেরই ইনদওর, হায়দরাবাদ, বেঙ্গালুরু-সহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলেছে। এই সব হামলার বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দিয়ে বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন এক বক্তৃতায় বলেছেন, ‘‘যাঁরা স্বাস্থ্যকর্মীদের হেনস্থা করছেন, তাঁদের নাম প্রকাশ্যে আনা উচিত এবং তাঁদের তীব্র ভর্তসনা করা উচিত।’’
বুধবার রাতে কাজ সেরে বাড়ি ফিরছিলেন ভোপাল এমসের দুই জুনিয়র ডাক্তার ঋতুপর্ণা জানা এবং যুবরাজ সিংহ। সেই সময় করোনা ছড়ানোর অভিযোগ তুলে পুলিশ তাঁদের মারধর করে বলে অভিযোগ। দুই চিকিৎসক জানান, ডিউটি শেষ করে তাঁরা হাসপাতালের ১ নম্বর গেট দিয়ে বেরিয়ে আসেন। সেখানে তখন পুলিশ টহল দিচ্ছিল। তারা ওই দুই চিকিৎসককে আটকে তাঁদের পরিচয়পত্র দেখতে চান। ঋতুপর্ণার দাবি, তাঁরা নিজেদের পরিচয়পত্র দেখিয়ে জানান, ডিউটি শেষ করে তাঁরা বাড়িতে ফিরছেন। ঋতুপর্ণার অভিযোগ, তা সত্ত্বেও পুলিশ তাঁদের গালিগালাজ করে। ওই মহিলা চিকিৎসকের অভিযোগ, ‘‘পুলিশ বারবার বলতে থাকে, আমরা ডাক্তার হলে বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছি কেন? পুলিশ আমাদের জিনিসপত্র ছুড়ে ফেলে দেয়। বলে, আমাদের মতো ডাক্তারদের জন্যই করোনা ছড়াচ্ছে।’’ ঋতুপর্ণার দাবি, পুলিশ লাঠি দিয়ে মারে। ঋতুপর্ণার পায়ে আঘাত লেগেছে, মাথায় এবং হাতে আঘাত পেয়েছেন যুবরাজ। পুরো ঘটনাটি প্রথমে তাঁরা তাঁদের অধ্যাপককে জানান। তার পরে ফোন করে অভিযোগ দায়ের করেন পুলিশে। টুইট করে ডাক্তারদের উপরে পুলিশি হামলার ঘটনাকে লজ্জাজনক আখ্যা দিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথ। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ ভোপাল এমসের রেসিডেন্ট ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন। বৃহস্পতিবার ঘটনার নিন্দা করে তাদের তরফে চিঠি দেওয়া হয়েছে এমসের ডিরেক্টরকে। সেই চিঠিতে নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন ঋতুপর্ণা এবং যুবরাজ।
তবে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে ভোপাল পুলিশ জানিয়েছে, লকডাউন সত্ত্বেও এমসের পাশে বেশ কিছু দোকান খোলা রয়েছে এবং লোকজন কেনাকাটা করছে, বুধবার রাতে এমন খবর পেয়ে দুই কনস্টেবেল গাড়ি নিয়ে ঘটনাস্থলে যায়। তারা সেখান থেকে লোকজনকে সরিয়ে দেয়। সেই সময় ওই দুই ডাক্তারকে আলাদা করে চিহ্নিত করা কঠিন ছিল। পুলিশের পাল্টা অভিযোগ, নিজেদের পরিচয়পত্র নিয়ে মাস্ক না পরেই ওই দুই চিকিৎসকও জিনিসপত্র কিনতে গিয়েছিলেন। যদিও ঋতুপর্ণা এবং যুবরাজের দাবি, তাঁরা মাস্ক পরেছিলেন। তবে বৃহস্পতি ভোপাল সিটি (দক্ষিণ)-এর এসপি সাই কৃষ্ণ থোটা জানিয়েছেন, অভিযুক্ত এক কনস্টেবলকে ক্লোজ করা হয়েছে। তদন্তেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্তের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে। এর আগে মধ্যপ্রদেশেরই ইনদওরের টাটপাট্টি বাখাল এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দাদের ছোড়া পাথরে জখম হয়েছিলেন দুই মহিলা চিকিৎসক।
করোনা ছড়ানোর অভিযোগে বুধবার হেনস্থার শিকার হয়েছেন দিল্লির সফদরজং হাসপাতালের দুই মহিলা চিকিৎসকও। ফল এবং আনাজ কিনতে তাঁরা গিয়েছিলেন গৌতম নগর এলাকায়। দুই চিকিৎসকের দাবি, "সেই সময় এক ব্যক্তি আমাদের দেখে চিৎকার করে বলতে থাকেন করোনা-সংক্রমণ ছড়ানোর জন্যই আমরা বাইরে বেরিয়েছি।’’ আক্রান্ত দুই চিকিৎসকের অভিযোগ, তাঁরা এই সব কথার প্রতিবাদ করতেই ওই ব্যক্তি তাঁদের দুজনের উপরে চড়াও হয়ে মারধর করেন। দুই ডাক্তার পুলিশে খবর দেন। কিন্তু পুলিশ ঘটনাস্থলে আসার আগেই পালিয়ে যায় অভিযুক্ত। পরে বুধবার রাতে ৪২ বছরের ওই হামলাকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জখম দুই মহিলা চিকিৎসককে সফদরজং হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার দিল্লি পুলিশের কাছে রিপোর্ট তলব করেছে জাতীয় মহিলা কমিশন। বৃহস্পতিবার পঞ্চকুলায় করোনার তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে হেনস্থার মুখে পড়েন মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীরা।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy