দেশে মোট করোনা আক্রান্ত হলেন ২৮ লক্ষ ৩৬ হাজার ৯২৫ জন। গ্রাফিক-শৌভিক দেবনাথ।
দেশে নতুন করে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৭০ হাজার ছুঁয়ে ফেলল গত ২৪ ঘণ্টায়। একই সঙ্গে সেরো-সার্ভে জানিয়ে দিল, দিল্লির মোট জনসংখ্যার ২৯.১% এবং পঞ্জাবের কন্টেনমেন্ট এলাকাগুলির ২৭.৭% বাসিন্দার শরীরে করোনাভাইরাসের অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। অর্থাৎ তাঁরা অজান্তে কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। অনেকে সেরেও উঠেছেন।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের হিসেবে, ভারতে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২৮.৩৬ লক্ষ। দিল্লিতে তা ১.৫৬ লক্ষ। কিন্তু সেরো-সার্ভের হিসেব ধরলে দিল্লির মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ, অর্থাৎ অন্তত ৫৮ লক্ষ মানুষ সংক্রমিত হয়েছেন। সারা দেশের নিরিখে এই সংখ্যাটা কোথায় যেতে পারে, সেটাই ভাবাচ্ছে বিশেষজ্ঞদের। গত ১৫ অগস্ট থেকে পরপর চার দিন নিম্নমুখী হয়েছিল দৈনিক সংক্রমিতের সংখ্যা। গত কাল তা আবার ৬০ হাজারের ঘর পেরোয়। আর আজ সংখ্যাটা ৬৯,৬৫২, যা রেকর্ড।
রক্তের নমুনা নিয়ে এমন সমীক্ষা বা সেরো-সার্ভে দিল্লিতে এই নিয়ে দ্বিতীয় বার হল। গত মাসের সেরো-সার্ভেতে ২৩.৪৮% দিল্লিবাসীর শরীরে অ্যান্টিবডি পাওয়া গিয়েছিল। দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈন আজ বলেন, ‘‘মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হলে গোষ্ঠীতে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়। অ্যান্টিবডি যাঁদের রয়েছে, তাঁরা আরও ৬-৮ মাস সুরক্ষিত থাকবেন।’’ অনেকের মতে, বছরের শেষে ভারতে অক্সফোর্ডের টিকা আসার সম্ভাবনা থাকলে এই ছয়-আট মাসও সংক্রমণে রাশ টানার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুন: ট্রায়াল শেষের আগেই ছাড় কি দেশেও!
জৈন জানান, এ বার সেরো-সার্ভে হয়েছিল দিল্লির ১১টি প্রশাসনিক জেলায়। রিপোর্ট পজ়িটিভ হওয়ার হার দক্ষিণ-পূর্ব দিল্লিতে সব চেয়ে বেশি। জুলাইয়ের সেরো-সার্ভেতে সেখানে এই হার ছিল ২২.১২%, যা বেড়ে ৩৩.২% হয়েছে। নয়াদিল্লি এলাকায় হার সর্বনিম্ন, ২৪.৬%।
আরও পড়ুন: এ বার করোনা আক্রান্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গজেন্দ্র
পঞ্জাবের পাঁচটি কন্টেনমেন্ট এলাকায় ১ থেকে ১৭ অগস্ট সেরো-সার্ভে হয়েছিল। তাতে দেখা গিয়েছে, অমৃতসরের কন্টেনমেন্ট এলাকায় ৪০%, লুধিয়ানায় ৩৫.৬ শতাংশের শরীরে অ্যান্টিবডি রয়েছে। আজ মুখ্যমন্ত্রী অমরেন্দ্র সিংহের কাছে রিপোর্টটি জমা পড়ে। তার পরেই ৩১ অগস্ট পর্যন্ত রোজ সন্ধে ৭টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত কার্ফু, অত্যাবশ্যক নয় এমন পণ্যের ৫০% দোকান বন্ধ রাখা, বিয়ে ও শেষকৃত্য বাদে সব জমায়েত নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অমরেন্দ্র বলেছেন, ‘‘যথেষ্ট হয়েছে। অর্থনীতি বাঁচিয়েই কড়া হতে হবে।’’
আরও পড়ুন: ১৩ দিন পরেই ফের করোনা আক্রান্ত
হায়দরাবাদে নর্দমার জল পরীক্ষা করে সেন্টার ফর সেলুলার অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজি (সিসিএমবি) জানিয়েছে, শহরের অন্তত ৬ লক্ষ মানুষ করোনায় আক্রান্ত। অথচ স্বাস্থ্য মন্ত্রকের হিসেবে, তেলঙ্গানায় মোট সংক্রমিতের সংখ্যা এখনও ১ লক্ষও পেরোয়নি। কাজেই দিল্লি-পঞ্জাবের মতো সেই অজান্তে সংক্রমিত হওয়ার লক্ষণই স্পষ্ট।
আরও পড়ুন: আদৌ কি দ্বিতীয় বার করোনা সংক্রমণ হতে পারে? কী বলছেন চিকিৎসকরা?
এমসের চিকিৎসক নীরজ নিশ্চল বলেন, ‘‘রোগ ঠিক কতটা ছড়িয়েছে, তা সেরো-সার্ভেতে বেশি ভাল বোঝা যায়— বিশেষত যেখানে উপসর্গহীন ও মৃদু-উপসর্গের রোগীদের সংখ্যা অত্যন্ত বেশি হওয়ার আশঙ্কা।’’ তবে ঠিক ভাবে করা না-হলে এই সমীক্ষাও বিভ্রান্তি ছড়াতে পারে বলে তাঁর মত।
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy