Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

কী এমন সুন্দরী প্রিয়ঙ্কা! বিনয়ের কটাক্ষে বিতর্ক

ভারতীয় রাজনীতিতে মহিলাদের সম্পর্কে অসম্মানজনক মন্তব্য করে বসার রীতি নতুন নয়। এ বারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনও তোলপাড় হয়েছে কুকথাকে ঘিরেই। অনেকটা একই ভঙ্গিতে আজ প্রিয়ঙ্কা গাঁধী সম্পর্কে আপত্তিকর কথা বলে দিনভর নির্বিকার থেকে গেলেন বিজেপি নেতা বিনয় কাটিয়ার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:৩০
Share: Save:

ভারতীয় রাজনীতিতে মহিলাদের সম্পর্কে অসম্মানজনক মন্তব্য করে বসার রীতি নতুন নয়। এ বারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনও তোলপাড় হয়েছে কুকথাকে ঘিরেই। অনেকটা একই ভঙ্গিতে আজ প্রিয়ঙ্কা গাঁধী সম্পর্কে আপত্তিকর কথা বলে দিনভর নির্বিকার থেকে গেলেন বিজেপি নেতা বিনয় কাটিয়ার।

কাটিয়ারকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আসন্ন বিধানসভা ভোটে প্রিয়ঙ্কাকে তারকা-প্রচারক করেছে কংগ্রেস। এই নিয়ে তাঁর কী মত? উত্তরে কাটিয়ার অম্লানবদনে বলেন, ‘‘প্রিয়ঙ্কা আর এমন কী সুন্দরী? প্রিয়ঙ্কার চেয়ে অনেক বড় বড় সুন্দরী বিজেপিতে আছেন। তারকাও আছেন। স্মৃতি ইরানি তো ভাল বক্তা, সুন্দরীও।’’

কাটিয়ারের কথা সংবাদমাধ্যমে আসামাত্র ছিছিক্কার শুরু হয়। কংগ্রেস দাবি করতে থাকে, নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহকে এর জন্য ক্ষমা চাইতে হবে। কাটিয়ার নিজে কিন্তু অনড়। ক্ষমা তো চানইনি। বরং তাঁর দাবি, তিনি যা বলেছেন সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন। প্রিয়ঙ্কা তাঁর ভাইঝির মতো। যা বলেছেন ভুল বলেছেন, এমন স্বীকারোক্তি বেরোয়নি তাঁর মুখ দিয়ে।

এ দিন কুকথার শুরুটা অবশ্য করেছিলেন জেডিইউ নেতা শরদ যাদব। পটনায় এক অনুষ্ঠানে ভোটের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে তিনি প্রথমে মন্তব্য করেন, মেয়েদের সম্মানের চেয়ে ভোটের সম্মান রক্ষা করাটা বেশি দরকার। মেয়েদের সম্মান নষ্ট হলে তার পরিবার বা গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু ভোটের সম্মান নষ্ট হলে দেশের ক্ষতি।

বিষয়টা নিয়ে হইচই শুরু হলে দেখা যায়, শরদের কোনও হেলদোল নেই। তিনি দাবি করতে থাকেন, তিনি ভুল কিছু বলেননি। এবং সেটা প্রমাণ করতে গিয়ে আবার বলেন, যে ভাবে মেয়েদের সম্মান রক্ষা করতে হয়, সে ভাবে ভোটের সম্মানও রক্ষা করা উচিত। ফলে ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই নেই। মহিলাদের সম্পর্কে আপত্তিকর কথা শরদ এই প্রথম বলছেন না অবশ্য। এর আগে রাজ্যসভায় দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘‘দক্ষিণী মেয়েদের গায়ের রং কালো। কিন্তু শরীরের বাঁধুনি ভাল। নাচেনও ভাল...।’’ সে বার খুব হইচই হয়েছিল এই নিয়ে। শরদ এ দিন প্রমাণ করলেন, তিনি আদৌ বদলাননি। আর খানিক পরেই কুকথার তোড়ে তাঁকে ডিঙিয়ে গেলেন কাটিয়ার।

সরাসরি এমন ব্যক্তিগত আক্রমণের মুখে পড়ে প্রিয়ঙ্কা বিষয়টা হেসে উড়িয়ে দিয়েছেন। বলেছেন, ‘‘মহিলাদের প্রতি বিজেপির মনোভাবটা যে কী, সেটাই প্রকাশ করে দিয়েছেন কাটিয়ার।’’ তাঁর কটাক্ষ, ‘‘কাটিয়ার যদি আমার সাহসী, শক্তিশালী মহিলা সহকর্মীদের মধ্যে এর বেশি কিছু খুঁজে না পান, তা হলে তিনি আমাকে আরও বেশি হাসির সুযোগ করে দেবেন!’’ তবে রীতিমতো ক্রুদ্ধ শুনিয়েছে প্রিয়ঙ্কার স্বামী রবার্ট বঢরাকে। রবার্ট ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘এমন জঘন্য, নারীবিদ্বেষী কথা শুনে আমি হতভম্ব। নারীকে পণ্যবস্তু হিসেবে না দেখে সমান অধিকার আর সম্মান দেওয়াটা আমাদের সবার কর্তব্য। সামাজিক ভাবে আমাদের একটা বদল আনতেই হবে।’’ বিনয়কে রাজনৈতিক ভাবে ক্ষমা চাইতে হবে বলে দাবি তোলেন তিনি।

এ দিন শরদ বা বিনয় কেউই ক্ষমা চাননি। ক্ষমা চেয়েছে তাঁদের দল। জেডিইউ-র সাধারণ সম্পাদক কে সি ত্যাগী বলেন, শরদের কথায় কেউ দুঃখ পেলে তাঁরা ক্ষমাপ্রার্থী। তবে তাঁরও দাবি, শরদ মহিলাদের অ়সম্মান করতে চাননি। ত্যাগীর মতে, শরদ বলতে চেয়েছিলেন, মেয়ের ভুল বিয়ে দিলে যেমন পরিবারের ক্ষতি হয়, ভুল লোককে ভোট দিলে দেশের ক্ষতি হয়!

বিনয়ের কথার সূত্র ধরে মুখ খোলেন বিজেপির বেঙ্কাইয়া নায়ডু। তাঁর বক্তব্য, কে কী বলেছেন তিনি শোনেননি। তবে টিভিতে বিনয় কাটিয়ার আর শরদ যাদবের নাম আসছে বলে দেখেছেন। বেঙ্কাইয়ার দাবি, ‘‘এমন কথা কারওরই বলা উচিত নয়। প্রিয়ঙ্কাজিকে নিয়ে নয়, কাউকে নিয়েই নয়। আমরা প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারি, শত্রু নই। দল এ রকম কথাবার্তা সমর্থন করে না।’’

প্রশ্ন হল, দল যদি এমন কথা সমর্থন না-ই করে তা হলে বিনয় কাটিয়ারকে ক্ষমা চাওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হল না কেন? কেউ কেউ কিন্তু মনে করছেন, কাটিয়ারের এই কথার পিছনে দলীয় নেতৃত্বের পরোক্ষ মদত থাকতেও পারে। সরাসরি প্রিয়ঙ্কাকে আক্রমণ করে হয়তো প্রিয়ঙ্কার গুরুত্বকে বাড়িয়ে দেখাতে চাইছে বিজেপি। উত্তরপ্রদেশের ভোটের আগে রাহুলের থেকে প্রিয়ঙ্কাকে বড় করে দেখিয়ে গাঁধী পরিবারে চিড় ধরানোর কৌশল হতে পারে। রাহুল আর অখিলেশের হাত মেলানোর পর কি একটু বেশিই শঙ্কিত মোদীর দল? ঘরোয়া মহলে বিজেপির কিছু নেতা কিন্তু সে কথা অস্বীকার করছেন না।

অন্য বিষয়গুলি:

Priyanka Gandhi Vinay Katiyar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE