Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
Violence

রক্তাক্ত কাশ্মীর ছাপ ফেলছে শিশুমনে

জম্মু-কাশ্মীরে প্রায় তিন দশক ধরে চলা জঙ্গি কার্যকলাপ ও রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের শিকার বহু মানসিক রোগীর চিকিৎসা করেছেন মুস্তাক মারগব।

ছবি পিটিআই।

ছবি পিটিআই।

সাবির ইবন ইউসুফ
শ্রীনগর শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০২০ ০৫:১০
Share: Save:

দাদুর সঙ্গে গাড়ি করে যেতে যেতে নিরাপত্তা বাহিনী আর জঙ্গিদের গুলি-যুদ্ধের মধ্যে পড়ে গিয়েছিল তিন বছরের আয়াদ। তার পরে চোখের সামনে দাদুর মৃত্যু দেখেছে। প্রথমে দাদুর মৃতদেহের বুকের উপরেই বসে ছিল। বহু চেষ্টাতেও তার কান্না থামাতে পারছিলেন না সিআরপি জওয়ানেরা। কয়েক ঘণ্টা পরে বাড়িতে এক আত্মীয়ার কোলে আয়াদ হাসছিল। মনোবিদেরা বলছেন, প্রাণে বাঁচলেও আজ কাশ্মীরের সোপোরের এই ভয়ানক অভিজ্ঞতার কথা দুঃস্বপ্নের মতো আয়াদকে বারবার আহত করতে পারে সারা জীবনে। কারণ, এই ধরনের ঘটনা গভীর ছাপ ফেলে শিশুমনে।

জম্মু-কাশ্মীরে প্রায় তিন দশক ধরে চলা জঙ্গি কার্যকলাপ ও রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের শিকার বহু মানসিক রোগীর চিকিৎসা করেছেন মুস্তাক মারগব। সোপোরের ঘটনার পরে শ্রীনগর সরকারি মেডিক্যাল কলেজের মনস্তত্ত্ব বিভাগের প্রাক্তন প্রধান মুস্তাক এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘‘শুধু এই ঘটনাই নয়, এমন শত শত ঘটনার নজির রয়েছে, যেখানে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের স্মৃতি মানুষের মনে গভীর ভাবে ছাপ রেখে গিয়েছে।’’ তাঁর দাবি, ‘পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার’ বা পিটিএসডি-র বহু রোগীর দেখা মিলবে কাশ্মীরে। রোগীদের মধ্যে রয়েছেন শিশু-বৃদ্ধ সকলেই। তবে শিশুদের উপরে এর প্রভাব অনেক বেশি বলেই মনে করেন এই চিকিৎসক।

সন্ত্রাসের ছাপ থেকে শিশুমনকে বাঁচাতে ২০১৬ সালে কাশ্মীরের মহারাজা হরি সিংহ হাসপাতালে খোলা হয়েছিল শিশুদের জন্য বিশেষ মনস্তত্ত্ব বিভাগ। কাশ্মীরের হাসপাতালে এই ধরনের বিভাগ প্রথম। সেখানকার চিকিৎসক হিনা আফজল বলেন, ‘‘মনের ভিতরের তীব্র যন্ত্রণা এক থেকে অন্য প্রজন্মে ছড়িয়ে যাচ্ছে। যদি ঠিক ভাবে নজর না-দেওয়া যায়, তা হলে এটা চলতেই থাকবে।’’ হিনা জানান, তিনি যত রোগীর চিকিৎসা করেছেন, তাঁদের মধ্যে সব চেয়ে কমবয়সি মাত্র তিন বছরের এক শিশু।

আরও পড়ুন: কাশ্মীরে গুলি-যুদ্ধের মধ্যে নাতিকে বাঁচিয়ে নিহত দাদু

উপত্যকার মানুষের মনে সন্ত্রাসের ছাপ যে কত গভীরে, হিনা আফজলের একটি তথ্যেই তা স্পষ্ট হয়ে যাবে। তিনি জানান, কাশ্মীরের প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার প্রায় ৪৫ শতাংশই কোনও না কোনও ভাবে মানসিক ভারসাম্যহীনতার শিকার। এঁদের মধ্যে ৯৩ শতাংশই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সাক্ষী হয়ে মানসিক যন্ত্রণা পেয়েছেন। তাঁর মতে, কাশ্মীরের এক জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তাঁর গোটা জীবনে অন্তত আট বার সন্ত্রাসের ঘটনার মুখোমুখি হন। আর প্রাপ্তবয়স্কদের অন্তত ৭০ শতাংশকে তাঁদের পরিচিত কাউকে হিংসার বলি হতে দেখতে হয়েছে।

আরও পড়ুন: এক সফরে দুই বার্তা দিতে রাজনাথ কাল লাদাখে

শ্রীনগর সরকারি মেডিক্যাল কলেজের মনস্তত্ত্ব বিভাগের প্রধান আরশাদ হুসেন কাশ্মীরের মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য ফেরাতে একটি সামগ্রিক পরিকল্পনা করার উপরে জোর দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘সোপোরের আজকের ঘটনাটিকে সহজ ভাবে নেওয়া উচিত নয়। কিছু দিন পরেই শিশুটি তীব্র মানসিক যন্ত্রণার শিকার হতে পারে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Violence Kashmir Children
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE