বিচারপতি বি আর গাভাইয়ের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের একটি প্রতিনিধি দল আজ মণিপুরের কুকি এলাকা চুড়াচাঁদপুর এবং মেইতেই এলাকা বিষ্ণুপুর জেলার ত্রাণ শিবির পরিদর্শন করল। গাভাইয়ের সফরসঙ্গীরা হলেন বিচারপতি বিক্রম নাথ, বিচারপতি এমএম সুন্দরেশ, বিচারপতি কে ভি বিশ্বনাথন এবং বিচারপতি এন কোটিশ্বর সিংহ। তাঁরা চুড়াচাঁদপুরের বহুমুখী হল, মিনি সচিবালয় থেকে আইনি পরিষেবা শিবির, চিকিৎসা শিবির এবং আইনি সহায়তা ক্লিনিকের ভার্চুয়াল উদ্বোধন করেন। অবশ্য কুকি আইনজীবীদের তরফে আপত্তি ওঠায় মেইতেই বিচারপতি এন কোটিশ্বর সিংহ সেখানে যেতে পারেননি। পরে, বিষ্ণুপুরের মৈরাং কলেজ ত্রাণ শিবির পরিদর্শন করে শিবিরবাসীদের অভিযোগ শোনার পাশাপাশি বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের ত্রাণসামগ্রীও প্রদান করেন তাঁরা। বিচারপতিদের সফরকে সামনে রেখে কংগ্রেস ফের প্রধানমন্ত্রীর মণিপুর না আসার প্রসঙ্গেসরব হয়েছে।
চুড়াচাঁদপুরের সদ্ভাবনা মণ্ডপ ত্রাণ কেন্দ্রে পরিদর্শনের পরে বিচারপতি গাভাই বলেন, “আমরা জানি যে আপনারা সকলেই কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু সংবিধানই আমাদের ঐক্যবদ্ধ এবং শক্তিশালী রেখেছে। সংবিধানের লক্ষ্য হল সকলের জন্য সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। আইনসভা এবং সংবিধানে আস্থা রাখুন। সকলের মিলিত প্রয়াসে এই দুঃসময় শীঘ্রই কেটে যাবে।” জাতীয় আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষ বা নালসার কার্যনির্বাহী চেয়ারম্যান বিচারপতি গাভাই জানান, সমাজের সবচেয়ে অসহায় ও দুর্দশাগ্রস্ত হলেন অভ্যন্তরীণ ভাবে বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিরা। ত্রাণ শিবিরে স্থাপিত আইনি সহায়তা ক্লিনিকগুলি বিনা মূল্যে আইনি সহায়তা প্রদান করে সকলকে ন্যায়বিচার পেতে এবং অধিকার রক্ষা করতে সাহায্য করবে। তিনি আশ্বস্ত করেন নালসা শরণার্থীদের জীবন পুনর্নির্মাণের পথে তাঁদের পাশে থাকবে।
বিষ্ণুপুর ত্রাণ শিবির পরিদর্শন করেন এবং আবাসিকদের সঙ্গে কথা বলার পরে প্রতিনিধি দলের তরফে বিচারপতি কোটিশ্বর সিংহ বলেন, ‘‘শীর্ষ আদালতের বিচারকদের এই সফর মানুষের মনে ভরসা জোগাবে, আশার জন্ম দেবে বলে আমাদের বিশ্বাস। আমাদের অবশ্যই এমন এক ভবিষ্যৎ সমাজের দিকে তাকাতে হবে যেখানে সকলে ফের একসঙ্গে থাকতে পারব। এতে সময় লাগতে পারে। কিন্তু ইতিবাচক চিন্তা ছাড়লে চলবে না।”
অবশ্য মণিপুরের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে তাঁরা জানান, এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের সাথে কথা বলার অধিকার তাঁদের নেই। বিচারপতিরা লোকটাক সরোবরেও নৌকায় ঘোরেন। বিচারপতিদের চুড়াচাঁদপুর সফরের আগেই সেখানকার একটি ত্রাণ শিবিরের কাছে ন’বছর বয়সি একটি মেয়ের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। তার ঘাড়ে আঘাতের চিহ্ন এবং আশপাশে রক্তের দাগ ছিল। পুলিশ জানায়, তারা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১৫ জনকে আটক করেছে। তাঁদের মধ্যে আছেন জ়োমি কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ভুমসুয়ান নৌলক। পুলিশ হত্যার পাশাপাশি পকসো আইনেও মামলা দায়ের করেছে। রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনও এ নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করেছে।
কংগ্রেস সাংসদ জয়রাম রমেশ মণিপুরে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের সফরকে স্বাগত জানিয়ে প্রশ্ন তোলেন, কেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক বারও মণিপুর সফরে যাওয়ার সময় করতে পারছেন না?
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)