সৌজন্য সাক্ষাৎ। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে অসমের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল। সোমবার রাষ্ট্রপতি ভবনে। ছবি: মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের সৌজন্যে।
মধুচন্দ্রিমা পর্ব শেষ। নতুন সরকারের সামনে এ বার একের পর চ্যালেঞ্জ আসতে শুরু করল। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন কারণে শুরু হয়েছে বিক্ষোভ। শপথ নেওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যেই নতুন সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় উঠছে। পরিস্থিতি সামলাতে আপাতত সব মন্ত্রীদের ১০০ দিনের কর্মসূচি হাতে নিয়ে এগোনোর নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল।
আজ মন্ত্রিসভার দ্বিতীয় বৈঠক ছিল। কিন্তু সোনোয়াল জরুরি কাজে এ দিন দিল্লি যান। তিনি রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় ও বিজেপির রাষ্ট্রীয় সভাপতি অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করবেন। রাজ্য বিজেপির সভাপতির পদ থেকেও ইস্তফা দেন তিনি। সর্বানন্দ আপাতত প্রধান গুরুত্ব দিচ্ছেন রাজ্য থেকে সিন্ডিকেট-রাজ ও দুর্নীতি সরাতে। তিনি জানেন, মানুষ তাঁর কাছে পরিবর্তন চাইছেন। তাই দ্রুত কিছু বদল তাঁকে করে দেখাতেই হবে। সব মন্ত্রীকে আগামী ১০০ দিনের কর্মসূচি ঠিক করতে বলেছেন সর্বা। সেই তালিকা মুখ্যমন্ত্রীকে জমা দিয়ে কাজ শুরু করে দেওয়ার কথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেই এ ক্ষেত্রে অনুসরণ করছেন তিনি।
চেকগেটগুলি বন্ধ করা প্রসঙ্গে সর্বানন্দ জানান, অবৈধ ভাবে চলতে থাকা চেকগেটগুলি থেকে রাজ্য সরকার কোনও রাজস্ব পাচ্ছিল না। অবশ্য পরিবহণ, বিক্রয় কর, কৃষি ও বন বিভাগের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে চলা সরকারি চেকগেটগুলি বজায় থাকবে। সেগুলি থেকে আদায় হয় রাজস্ব। পশ্চিমবঙ্গ, নাগাল্যান্ড, মেঘালয়, অরুণাচল সীমানার সরকারি চেকগেটও চলতে থাকবে। কিন্তু সেখানে কোনও দালাল বা মধ্যসত্বভোগী থাকতে দেওয়া হবে না। ইতিমধ্যে অবৈধ ভাবে টাকা সংগ্রহের অভিযোগে ৯ জন কর্মীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে বলে সরকারি সূত্রে খবর।
সরকারের বিভিন্ন দুর্নীতি নিয়ে লড়াই চালানো সংগঠন অসম পাবলিক ওয়ার্কসের মতে, শুধু নীচের তলার কর্মীদের শাস্তি দিয়ে বা বদলি করে সিন্ডিকেট-রাজ বন্ধ করা যাবে না। তাঁরা তদন্ত চালিয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত আমলা ও উচ্চপদস্থ কর্তাদের পদচ্যূত করার আবেদন জানায় তারা।
এ দিকে, প্রাক-নির্বাচনী সমঝোতার সূত্র মেনে কেন্দ্র কার্বি আংলং ও ডিমা হাসাও জেলায় থাকা বড়োদেরও তফসিলভুক্ত উপজাতি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। তার প্রতিবাদে এ দিন হিল ট্রাইবস প্রোটেকশন ফোরাম ডিফুতে ট্রেন অবরোধ করে। তার জেরে বাতিল হয় জনশতাব্দী এক্সপ্রেস ও গুয়াহাটি-মরিয়ানি প্যাসেঞ্জার ট্রেন। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে ব্রহ্মপুত্র মেল, চেন্নাই এক্সপ্রেস, লামডিং-তিনসুকিয়া ও রঙিয়া-ডিব্রুগড় প্যাসেঞ্জার ট্রেন।
অন্য দিকে গণ অধিকার সংগ্রাম সমিতি টোকলাই চা বাগানের কর্মীদের উন্নয়নে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণে রাজ্য সরকারকে ১০ দিনের চরমসীমা বেঁধে দিয়েছে।
পাশাপাশি, বরাকের নাগরিক অধিকার সুরক্ষা সমিতি ডি ভোটার সমস্যার অবিলম্বে সমাধানের জন্য সর্বানন্দকে চাপ দিয়েছেন। রাজ্যের দু’টি সংখ্যালঘু সংগঠন অল অসম মাইনরিটি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন ও অল বিটিএডি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অবিলম্বে সরকারের কাছে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের সমস্যা দূর করার আবেদন জানিয়েছে। আমসুর বক্তব্য, অসম চুক্তিতে ১৯৭১ সালকে ভিত্তিবর্ষ বলা হয়েছে। সেই মতোই নাগরিকপঞ্জি উন্নীতকরণের কাজও শুরু হয়েছে। এখন নতুন সরকারের মন্ত্রীরা ১৯৫১ সালকে ভিত্তিবর্ষ করার কথা বলছেন। তার ফলে বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। আমসু ধর্মভেদ নির্বিশেষে অসম চুক্তি মেনে বিদেশি শনাক্তকরণের দাবি তুলেছে। একই দাবি তুলেছে অল বিটিএডি সংখ্যালঘু ছাত্র সংগঠন। তারাও শাসনযন্ত্রের হাতে নিছক সন্দেহের ভিত্তিতে সংখ্যালঘুদের হেনস্থার অভিযোগ তোলে।
এ দিকে কংগ্রেস সরকারের সমালোচনায় মুখর কৃষক নেতা অখিল গগৈ এবার বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধেও সরব। তাঁর অভিযোগ গণবন্টন ব্যবস্থায় দুর্নীতি নিয়ে তাঁর দল বিক্ষোভ দেখাতে চাইলেও রাজ্য সরকার অনুমতি দেয়নি। তাঁর দাবি, মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ ফ্যাসিস্ট নেতার মতো আচরণ করছেন। সরকারের ভাবমূর্তি বজায় রাখতে তিনি কোনও প্রতিবাদ বা আন্দোলন করতে দিচ্ছেন না। গণতন্ত্রের কন্ঠরোধ করে অসম সরকারকে দিনবদনের ভুয়ো ছবি দেখাচ্ছেন সর্বা। তাঁর কথায়, ‘‘কংগ্রেস যদি অজগর হয়ে থাকে তো বিজেপি অ্যানাকোন্ডার ভূমিকা নিয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy