মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
গোয়া থেকে নয়াদিল্লি। মঙ্গলবার দেশের দু’প্রান্তেই কংগ্রেসের প্রতি তৃণমূলের ‘অ্যালার্জি’ আরও প্রকট হয়ে উঠল। গোয়ায় তৃণমূল কংগ্রেসের জনসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ বারবার নিশানা করেছেন কংগ্রেসকে। তাঁর বক্তব্য, “কংগ্রেস মুখে বড় বড় কথা বলে, কিন্তু আসলে বিজেপির সঙ্গে আঁতাত করে নেয়।” অন্য দিকে, এ দিন সংসদ চত্বরের গাঁধীমূর্তি থেকে বিজয় চক পর্যন্ত প্রতিবাদ মিছিলের কর্মসূচি ছিল রাজ্যসভায় ১২ জন সাসপেন্ড হওয়া সাংসদের। তৃণমূলের বক্তব্য, তাদের পরিকল্পনা ‘হাইজ্যাক’ করে তাতে নিজেদের সিলমোহর বসাতেই ব্যস্ত সনিয়া গাঁধীর দল। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, বিভিন্ন দলের ১২ জন শাস্তিপ্রাপ্ত সাংসদকে নিয়ে বিরোধী দলের যে আপাত ঐক্যের ছবিটি শীতের সংসদে তৈরি হয়েছিল, তাতে কিছুটা একলা দেখাচ্ছে তৃণমূলকে। কংগ্রেসের সঙ্গে বাকি বিরোধী দলগুলি থাকলেও, তৃণমূল সংঘাত চালিয়েই যাচ্ছে রাহুল গাঁধীর সঙ্গে।
এ দিনও গোয়ায় নানা কর্মসূচি ছিল মমতার। বুধবার কলকাতা ফিরে যাওয়ার আগে আজ ভোটমুখী এই রাজ্যে দু’টি জনসভাও করলেন তিনি। দু’টি ক্ষেত্রেই বিজেপির পাশাপাশি কংগ্রেসেরও সমালোচনা করেছেন মমতা। তাঁর কথায়, “কংগ্রেস অনেক বড় বড় কথা বলে। আমাদের বলে, আপনারা একলাই লড়ছেন? আরে বাপু, তোমরা তো সারা দেশেই একা লড়ছ! প্রত্যেক দিন, আজও আমাদের বিরুদ্ধে লড়ছ!” মমতা বলেন, “আমি তো কংগ্রেসে ছিলাম। কেন ছাড়লাম? ছাড়লাম বিজেপির সঙ্গে কংগ্রেসের বন্ধুত্ব দেখে। কংগ্রেস নিজেরা বাঁচার জন্য বিজেপির হাত ধরেছে।” আর একটি সভায় তৃণমূল নেত্রী বলেন, “আমার তো কংগ্রেসের সঙ্গে ঝগড়া নেই। গত বারের গোয়ার ভোটেও তো ওরা জিতেছিল। কিন্তু ওরা জনাদেশ (জনতার রায়) বেচে দিয়েছে। বিজেপি পয়সা দিয়ে তা কিনে নিয়েছে।”
গোয়ায় যখন মমতা আক্রমণ করছেন কংগ্রেসকে, তখন পূর্ব পরিকল্পনামাফিক এ দিন দুপুর পৌনে একটায় রাজ্যসভার ১২ জন সাসপেন্ড হওয়া সাংসদ (যাঁদের মধ্যে তৃণমূলের সাংসদেরাও রয়েছেন) এবং তাঁদের দলের অন্য সাংসদেরা গাঁধীমূর্তি থেকে মিছিল করে বিজয়চক যান। তৃণমূলের পক্ষ থেকে ওই প্রতিনিধি দলে আবীর বিশ্বাস, মৌসম নূর থাকলেও কংগ্রেসের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেন খোদ রাহুল গাঁধী। স্বাভাবিক ভাবেই সংবাদমাধ্যমের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠেন কংগ্রেস নেতা।
বিষয়টি দেখে তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন টুইট করে বলেন, “আমরা হতবাক। কোনও রাজনৈতিক দল সংসদের বাইরে এবং ভিতরে প্রতিবাদ জানানোর সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে আসে। আর কিছু রাজনৈতিক দল সেই পরিকল্পনাকে নিজেদের বলে চালানোর চেষ্টা করে!” ঘটনা হল, সকালে কংগ্রেস নেতা কে সি বেণুগোপাল টুইট করে বলেন, ‘রাহুল গাঁধীর নেতৃত্বে ১২ জন শাস্তিপ্রাপ্ত সাংসদ বিজয় চকে গিয়েছেন।’ পরে অবশ্য সেই টুইট তিনি মুছে দেন।
রাজনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, রাহুল নিজে এই মিছিলের কৃতিত্ব নেওয়ার বিশেষ চেষ্টা করেননি। বিজয় চকে বিরোধী দলের নেতাদের পাশে নিয়েই রাহুল বলেছেন, “বিরোধী দলের সাংসদেরা ১৪ দিন ধরে সাসপেন্ড হয়ে রয়েছেন। কী ভাবে গণতন্ত্রের স্বর দমন করা হচ্ছে, এটা তার ছবি। যে-সব বিষয়ে বিরোধীরা আলোচনা চান, সরকার তা হতে দেয় না। যখনই বিরোধীরা সরব হতে চান, সেখানে সরকার ভয় দেখিয়ে, ধমকে সাসপেন্ড করে দেয়।” যে বিষয়গুলি নিয়ে আজ সংসদে আলোচনার দাবি জানিয়েছেন বিরোধীরা, তার মধ্যে রয়েছে কৃষকদের আয়, ক্ষতিপূরণ, মূল্যবৃদ্ধি, আলোচনা না করে জোর করে আইন নিয়ে আসার মতো বিষয়গুলি। পাশাপাশি রাজ্যসভার সদস্যদের সাসপেন্ড হওয়ার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা চাইছেন বিরোধী নেতারা।
রাহুলের কথায়, “এটা গণতন্ত্রের হত্যা। বিরোধীরা কিছু বিষয়ে আলোচনা করতে চাইছে, সরকারকে প্রশ্ন করতে চাইছে। কিন্তু প্রশ্ন করতে দেওয়া হচ্ছে না। তিন-চারটি এমন বিষয় রয়েছে, সরকার যার নাম উচ্চারণ করতে দেয় না। দু’তিন জন শিল্পপতি রয়েছেন কৃষকদের বিরুদ্ধে, প্রধানমন্ত্রী সামনে রয়েছেন। এই বিরোধী সাংসদদের রাজ্যসভার চেয়ারম্যান সাসপেন্ড করেননি। প্রধানমন্ত্রীও করেননি। সেই শক্তিই সাসপেন্ড করেছে, যে শক্তি কৃষকদের আয় চুরি করতে চায়। প্রধানমন্ত্রী, চেয়ারম্যান শুধু রূপায়ণ করছেন।” পরে রাহুল টুইট করে বলেন, ‘গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আলোচনা, বিতর্কে অসম্মতির অর্থ হল, এই বিষয়ে মোদী সরকারের টিউশন নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy