অরুণাচল প্রদেশের চাগলাগাম এলাকা। ছবি: টুইটার থেকে
ভারতীয় ভূখণ্ডের ৬০-৭০ কিলোমিটার ভিতরে ঢুকে পড়েছে চিনের সেনাবাহিনী। তৈরি করে ফেলেছে একটি ঝুলন্ত ব্রিজও। অরুণাচল প্রদেশের বিজেপি বিধায়কের এই দাবি ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়াল ভারত-চিন সীমান্তের চাগলাগাম এলাকায়। ভারতীয় সেনা অবশ্য সেই দাবি উড়িয়ে দিয়েছে। সেনার তরফে বিবৃতি দিয়ে স্পষ্ট বলা হয়েছে, ওই এলাকায় ভারতীয় ভূখণ্ডে চিনা সেনা বা নাগরিকের উপস্থিতির কোনও প্রমাণ মেলেনি। তবু ওই এলাকায় টহলদারি বাড়ানো হয়েছে।
রাজ্যের বিজেপি সভাপতি তথা অরুণাচল পূর্ব কেন্দ্রের সাংসদ টাপির গাও সম্প্রতি বিভিন্ন সাংবাদ মাধ্যমে দাবি করেছিলেন, চাগলাগামের ডিমারু নালার উপর একটি ‘সাসপেনশন ব্রিজ’ নজরে এসেছে আদিবাসীদের। ঘন জঙ্গলে ঘেরা ওই এলাকার গাছ কেটে কাঠ চেরাই করে ওই ব্রিজটি তৈরি করেছে চিনা সেনা। দিল্লিতে সংশ্লিষ্ট সব দফতরে তিনি বিষয়টি জানিয়েছেন বলেও দাবি করেন টাপির গাও।
যেখানে ব্রিজ তৈরির কথা বলেছেন টাপির গাও, সেই ডিমারু নালা অন্জ জেলার অন্তর্ভুক্ত। জনবসতি খুব কম। রয়েছে প্রচুর পাহাড়ি ঝোরা-ঝর্না ও নালা। অসংখ্য ‘ফিশ টেল’ (পাতার আকৃতি মাছের লেজের মতো বলে এমন নাম) প্রজাতির লম্বা গাছ এবং নীচে ঘন জঙ্গলে ঘেরা বলে কার্যত দুর্গম ওই এলাকা। শিকার এবং ভেষজ উদ্ভিদ সংগ্রহ করতে জনজাতি শ্রেণির কিছু মানুষের আনাগোনা রয়েছে। তবে সেনা জওয়ানরাও রুটিন টহলদারি চালায় এই সব এলাকায়।
চিন-অরুণাচল সীমান্ত ম্যাকমোহন লাইন নামে পরিচিত। লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল বা ম্যাকমোহন লাইন থেকে চাগলাগামের দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার। চাগলাগাম থেকে আবার ডোইমুর নালার দূরত্ব ২৫-৩০ কিলোমিটার। ফলে টাপির গাওয়ের দাবি ঠিক হলে ভারতীয় ভূখণ্ডের ৬০-৭০ কিলোমিটার অভ্যন্তরে ঢুকে পড়েছে চিনা ড্রাগনরা। দিল্লিতে বিষয়টি জানানোর পরই এ নিয়ে কার্যত তোলপাড় পড়ে যায়। ভারতীয় সেনা-সহ কেন্দ্রের বিভিন্ন মন্ত্রকে শুরু হয় নড়াচড়া।
আরও পড়ুন: রক্ষাকবচ মিলল না সুপ্রিম কোর্টে, চিদম্বরমকে গ্রেফতার করতে বাধা নেই ইডির
অবশেষে বুধবার ভারতীয় সেনার পক্ষ থেকে বিবৃতি জারি করে জানিয়ে দেওয়া হয়, টাপির গাওয়ের দাবি ঠিক নয়। সেনার বক্তব্য, ‘‘এই ধরনের কোনও অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেনি। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে যেখানকার কথা বলা হয়েছে, সেটা ‘ফিশ টেল’ এলাকা। অন্যান্য কয়েকটি এলাকার মতো ওই এলাকাতেও সীমান্ত নিয়ে চিনের সঙ্গে মতপার্থক্য রয়েছে। ডিমারু নালার উপরে যে জায়গার কথা বলা হয়েছে, সেখানে এই ধরনের কোনও ব্রিজ সেনার নজরে আসেনি।’’
তাহলে কি স্থানীয় কয়েক জন যুবকের সূত্রে পাওয়া বিজেপি সাংসদের দাবি সম্পূর্ণ ভুয়ো? সেনার বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘ওই এলাকা ঘন জঙ্গলে ঢাকা। নালা-ঝোরা ও পাহাড়ি চড়াই-উৎরাইয়ে ভরা ওই এলাকায় হেঁটে ছাড়া অন্য কোনও যানবাহনে চলাফেরা করা সম্ভব নয়। কিন্তু যেহেতু সীমান্ত নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, তাই ভারত এবং চিন দু’দেশের সেনা জওয়ানরাই বর্ষাকালে টহলদারির জন্য নালাগুলির উপর অস্থায়ী ব্রিজ তৈরি করে। তবে এটা নিশ্চিত যে চিনের সেনা বা কোনও নাগরিকের স্থায়ী উপস্থিতি ওই এলাকায় পাওয়া যায়নি। তবু কড়া নজরদারি রয়েছে সেনার।’’
আরও পড়ুন: যৌন হেনস্থায় অভিযুক্ত সাঁতার কোচের বিরুদ্ধে কড়া শাস্তির ঘোষণা রিজিজুর
বিতর্কিত সীমান্ত এলাকার সমস্যা মেটাতে ভারত-চিন বোঝাপড়া রয়েছে। সেই বিষয়টি উল্লেখ করেও সেনার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সীমান্ত সংক্রান্ত যে কোনও সমস্যা বা বিতর্ক মেটাতে ভারত চিনের মধ্যে নির্দিষ্ট কূটনৈতিক ও সেনাবাহিনীর পদ্ধতি রয়েছে। নয়াদিল্লি-বেজিং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অনুসারেই দু’দেশের সীমান্ত এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে দুই দেশে বদ্ধপরিকর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy