অবোলা প্রাণীগুলির পেটেও টান পড়তে চলেছে বলে অভিযোগ! ছবি: সংগৃহীত।
উদ্যোগ পর্ব থেকেই চিতা কাণ্ড রাজনীতির রঙে মাখামাখি। সেই রাজনৈতিক রেষারেষির জেরে এ বার অবোলা প্রাণীগুলির পেটেও টান পড়তে চলেছে বলে অভিযোগ!
দেশের বাঘ-বিশেষজ্ঞদের এই আশঙ্কায় সুর মিলিয়েছেন সেই যজুবেন্দ্র সিংহ ঝালা, যাঁর তত্ত্বাবধানে আফ্রিকার আদি নিবাস থেকে ২০টি চিতাকে উড়িয়ে আনা হয়েছিল মধ্যপ্রদেশের কুনো জাতীয় উদ্যানে। ‘ন্যাশনাল চিতা অ্যাকশন প্ল্যান’ বা জাতীয় চিতা পুনঃস্থাপন প্রকল্পের বিশিষ্ট বন্যপ্রাণ বিজ্ঞানী যজুবেন্দ্রকে তাঁর মেয়াদ শেষের আগেই সম্প্রতি প্রকল্প থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার পরেই চিতাদের খাদ্যসঙ্কটের বিস্ফোরক প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
যজুবেন্দ্র শুক্রবার বলেন, ‘‘কুনো জাতীয় উদ্যানের যা পরিসর, সেখানে ২০টি চিতার স্বচ্ছন্দ বসবাসের সুযোগ নেই। তা ছাড়া ওখানে চিতাদের শিকার করে খাওয়ার মতো হরিণ বা বনশুয়োরের অভাব রয়েছে।’’ যজুবেন্দ্রের পরামর্শ, কুনো জাতীয় উদ্যানের লাগোয়া মুকুন্দারা অভয়ারণ্যের কিছুটা অংশও চিতা পুনঃস্থাপন কেন্দ্রের অন্তর্গত করা প্রয়োজন। তবে সেই অনুমোদন যে ‘রাজনীতি-সাপেক্ষ’, সেটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি। যজুবেন্দ্র বলেন, ‘‘রাজস্থানের মুকুন্দরার জঙ্গলে খাবারের কোনও অভাব হবে না চিতাদের। তবে চিতার আবাসস্থলের ঠিকানা হিসেবে মুকুন্দরার জঙ্গল অধিগ্রহণে কেন্দ্র খুব একটা উৎসাহী নয়। আমার মনে হয়, এই অনীহা একেবারেই রাজনৈতিক কারণে।’’
অরণ্যের সবুজও রাজনীতির রঙে বিভাজিত? রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশ— দুই রাজ্যে রাজনীতির রং আলাদা। বিজেপি-শাসিত মধ্যপ্রদেশ সরকার কংগ্রেসের দখলে থাকা রাজস্থান সরকারের অনুগ্রহ চায় না বলেই থমকে গিয়েছে চিতাদের আবাসস্থলের বিস্তারের সুযোগ— অভিযোগ বিশেষজ্ঞদের। দেশের এক পরিচিত বাঘ-বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘বন্যপ্রাণ নিয়েও এমন সঙ্কীর্ণ রাজনীতি ভাবা যায় না! আসলে বিজেপি-শাসিত মধ্যপ্রদেশ সরকার তথা দিল্লি চায় না, চিতা পুনঃস্থাপনের প্রশ্নে তাদের কৃতিত্বে ভাগ বসাক বিরোধী কংগ্রেস।’’ বাঘ সুরক্ষার প্রশ্নে দেশের সর্বোচ্চ সংস্থা এনটিসিএ বা ‘ন্যাশনাল টাইগার কনজ়ারভেশন অথরিটি’র এক কর্তার মন্তব্য, ‘‘মধ্যপ্রদেশ সরকারের গরিমা বাড়াতে বন্যপ্রাণ নিয়ে এখন ছিনিমিনি খেলা চলছে!’’
সেপ্টেম্বরে নামিবিয়া থেকে প্রথম দফায় আটটি চিতাকে আনা হয়েছিল কুনো-য়। দ্বিতীয় দফায় দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আনা হয়েছে আরও ১২টি চিতা। তাদের খাদ্যসম্ভার হিসেবে আপাতত কুনোয় প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৩৮টি চিতল হরিণ রয়েছে। যজুবেন্দ্র জানান, কুনোয় ১৫টির বেশি চিতা রাখা সম্ভব নয়। মধ্যপ্রদেশের অন্য দুই অভয়ারণ্য গঙ্গাসাগর ও নেওরাদেহিতে চিতাদের ঠিকানার প্রসার ঘটানো যেত। তবে সেটা সময় ও ব্যয়সাপেক্ষ। চিতাদের মনের মতো আবাসস্থল গড়তে খরচের বহরও বাড়ত অন্তত ৭৫০ কোটি টাকা। ‘‘তাই আমার প্রস্তাব ছিল, বেশি চিতা ছাড়তে হলে আপাতত মুকুন্দরা জঙ্গলটিকে ব্যবহার করা হোক। কিন্তু সেই প্রস্তাব আমল পায়নি,’’ অভিযোগ যজুবেন্দ্রের।
এনটিসিএ-র সরকারি বয়ান, চিতাদের জন্য কুনোয় বরাদ্দ হয়েছে ৭৪৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকা। এ ছাড়াও প্রায় চার হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে কুনো জাতীয় উদ্যানে রয়েছে চিতাদের দেদার খাদ্যসম্ভার। কিন্তু বাঘ-বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, চিতার বিচরণের জন্য বিস্তীর্ণ ভূমি দরকার। আফ্রিকার জঙ্গলে একটি চিতার জন্য প্রায় ১০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকার প্রয়োজন হয়। কুনো-য় তাই চিতার খাদ্যসঙ্কটের প্রশ্ন ঝুলেই রইল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy